আজকাল সবাই ঘন, মজবুত এবং ঝলমলে চুল চায়। এর জন্য মানুষ হাজার হাজার টাকা শ্যাম্পু, হেয়ার সিরাম, DIY হেয়ার মাস্ক, সেলুন ট্রিটমেন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল ট্রেন্ডগুলিতে খরচ করে। কিন্তু আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে এত চেষ্টা এবং খরচের পরেও যদি আপনার চুল একইরকম ঝরতে থাকে, ভাঙতে থাকে এবং প্রাণহীন থাকে, তাহলে ভুলটা কোথায় হচ্ছে?
আসলে, চুলের আসল স্বাস্থ্য বাইরে থেকে নয়, অভ্যন্তরীণ পুষ্টি থেকে গঠিত হয়। চুলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান – কেরাটিন এবং বায়োটিন – যদি শরীরে সঠিক পরিমাণে না থাকে, তাহলে কোনও দামি শ্যাম্পু বা ট্রেন্ডি হেয়ার মাস্ক উপকার করবে না।
কেরাটিন: চুলের রক্ষাকবচ এবং শক্তি
কেরাটিন একটি তন্তুযুক্ত প্রোটিন যা আপনার চুল, ত্বক এবং নখের বাইরের স্তর তৈরি করে। এই প্রোটিন শরীরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় এবং চুলের গঠন ও মজবুত করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
কেরাটিনের উপকারিতা
- চুলকে ভাঙা থেকে রক্ষা করে
- চুলকে নরম, সিল্কি এবং ঝলমলে করে
- পরিবেশগত ক্ষতি (রোদ, ধুলো, দূষণ) থেকে সুরক্ষা দেয়
- চুলকে ফ্রিজ-ফ্রি করে
ভুল ধারণা
বাজারে পাওয়া 'কেরাটিন ট্রিটমেন্ট' শুধুমাত্র একটি আবরণ যা অস্থায়ীভাবে চুলকে মসৃণ করে। এটি শরীরে কেরাটিনের অভাব পূরণ করে না।
বায়োটিন: কেরাটিনের সহযোগী এবং চুলের বৃদ্ধির সূত্র
বায়োটিন, যা ভিটামিন B7 বা ভিটামিন H নামেও পরিচিত, এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা শরীরে কেরাটিন তৈরির প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। বায়োটিনের অভাবে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং চুলের বৃদ্ধি কমে যায়।
বায়োটিনের উপকারিতা
- স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি
- চুলের ফলিকলগুলিকে পুষ্টি যোগায়
- চুল পড়া কমায়
- নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
কেন দামি পণ্য থেকে ফল পাওয়া যায় না?
- শরীরের অভ্যন্তরে পুষ্টির অভাব: বাইরের শ্যাম্পু বা সিরাম শুধুমাত্র চুলের উপরিভাগকে উজ্জ্বল করে, গোড়া থেকে মজবুত করতে পারে না।
- ভুল খাদ্যাভ্যাস: জাঙ্ক ফুড এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে শরীর বায়োটিন এবং কেরাটিন তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পায় না।
- মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব: এই দুটিই চুল পড়ার সবচেয়ে বড় কারণগুলির মধ্যে অন্যতম।
- ক্র্যাশ ডায়েট বা উপবাস: এগুলি শরীরের ভিটামিন এবং খনিজগুলির অভাব ঘটায়, যা চুলের গুণমান কমিয়ে দেয়।
এই খাবারগুলি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন
আপনি যদি চান আপনার চুল লম্বা, ঘন এবং মজবুত হোক, তাহলে সবার আগে আপনার খাদ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। আমাদের খাদ্যই চুলকে সেই পুষ্টি সরবরাহ করে যা তাদের ভালোভাবে বাড়তে সাহায্য করে। বিশেষ করে বায়োটিন এবং কেরাটিনের মতো পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে এবং ভাঙা থেকে রক্ষা করে। তাই ডিম, বাদাম, আখরোট, পালং শাক, মিষ্টি আলু, ডাল, দুধ এবং দই-এর মতো খাবারগুলি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
এই খাবারগুলিতে বিদ্যমান প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন A, E এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি চুলকে ভিতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং তাদের বৃদ্ধি বাড়ায়। যেমন ডিম বায়োটিন এবং প্রোটিনের ভালো উৎস, যেখানে পালং শাক আয়রন এবং ফোলেট সমৃদ্ধ যা স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। দুধ এবং দইতে থাকা বায়োটিন এবং প্রোটিন চুলের মজবুতের জন্য প্রয়োজনীয়। এই ধরনের একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করে আপনি প্রাকৃতিকভাবে চুলকে স্বাস্থ্যকর করতে পারেন।
আরও কিছু প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য টিপস
- পর্যাপ্ত জল পান করুন: শরীর হাইড্রেটেড থাকলে পুষ্টি উপাদানগুলি স্ক্যাল্পে ভালোভাবে পৌঁছাবে।
- পর্যাপ্ত ঘুমোন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
- মানসিক চাপ কমান: মেডিটেশন, যোগা এবং হাঁটার মতো উপায়ে মনকে শান্ত রাখুন।
- হিট স্টাইলিং কম করুন: স্ট্রেইটনার এবং হেয়ার ড্রায়ার চুলের প্রোটিন নষ্ট করে।
- রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট থেকে দূরে থাকুন: বারংবার কালার বা স্মুদিং করালে চুল দুর্বল হয়ে যায়।
কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন?
- যদি প্রতিদিন ১০০টির বেশি চুল পড়ে যায়
- চুলের গোড়া ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে
- টাক পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে
- স্ক্যাল্পে চুলকানি, জ্বালা বা লাল ফুসকুড়ি হলে
এই ক্ষেত্রে একজন ট্রাইকোলজিস্ট বা ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে ব্লাড টেস্ট করানো প্রয়োজন।
ঘন, মজবুত এবং স্বাস্থ্যকর চুল কেবল দামি পণ্য থেকে নয়, বরং শরীরের অভ্যন্তর থেকে আসা পুষ্টির উপর নির্ভর করে। যদি আপনি কেরাটিন এবং বায়োটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করেন, মানসিক চাপ ও ঘুমের দিকে মনোযোগ দেন, তাহলে চুলের স্বাস্থ্য স্বাভাবিকভাবেই উন্নত হবে। মনে রাখবেন, চুলের আসল যত্ন ভিতর থেকে শুরু হয়।