কলকাতায় ১৫-১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ কমান্ডার্স সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনে সামরিক সংস্কার, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির উপর আলোচনা হবে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
কমান্ডার্স সম্মেলন: প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কমান্ডার্স সম্মেলন (Commanders Conference) ২০২৫-এর উদ্বোধন করবেন। এই সম্মেলনটি ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং এর প্রধান থিম হল 'সংস্কারের বছর - ভবিষ্যতের জন্য পরিবর্তন'। এই সম্মেলনে সংস্কার, প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ (technological modernization) এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির (operational readiness) উপর আলোচনা হবে। এই অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA), প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) এবং প্রতিরক্ষা সচিব সহ সকল ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
কমান্ডার্স সম্মেলন ২০২৫: তাৎপর্য কী
কমান্ডার্স সম্মেলন ভারতের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মঞ্চ। এখানে কৌশলগত ও ধারণাগত স্তরে আলোচনা করা হয়। এ বছরের ফোকাস তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে - সংস্কার, পরিবর্তন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতি। এর উদ্দেশ্য হল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে চৌকস, সিদ্ধান্তমূলক এবং আধুনিক করে তোলা যাতে জটিল ভূ-রাজনৈতিক (geopolitical) পরিস্থিতিতে ভারতের নিরাপত্তা অটুট থাকে।
তিনটি প্রধান বিষয়: সংস্কার, পরিবর্তন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতি
সংস্কার: সেনাবাহিনীতে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন যেমন একত্রীকরণ (integration) এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (defense systems) উন্নত করা।
পরিবর্তন: নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ যেমন ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং সাইবার যুদ্ধের ক্ষমতা।
অপারেশনাল প্রস্তুতি: স্থল (land), আকাশ (air) এবং সমুদ্র (naval) ক্ষেত্রে সর্বদা প্রস্তুত থাকা।
সম্মেলনে সকল স্তরের সৈন্য এবং কর্মকর্তাদের সাথে ইন্টারেক্টিভ সেশন অনুষ্ঠিত হবে, যাতে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করা যায়। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে।
কলকাতার নির্বাচন
কলকাতাকে এই সম্মেলনের জন্য নির্বাচন করা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই শহরটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি কৌশলগত দিক থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব ভারতে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত-চীন সীমান্তে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কলকাতা একটি উপযুক্ত স্থান।
প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এটি স্পষ্ট করে যে সরকার সামরিক সংস্কারকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে। এই আয়োজন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করবে এবং আত্মনির্ভর ভারত (Atmanirbhar Bharat)-এর অধীনে দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উপর জোর দেবে।
ভারতের সামরিক কৌশলকে নতুন দিক
কমান্ডার্স সম্মেলন ২০২৫ ভারতের সামরিক কৌশলকে নতুন দিক দেবে। আজকের বিশ্বে বিপদগুলি পরিবর্তিত হচ্ছে যেমন সাইবার আক্রমণ, ড্রোন যুদ্ধ এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা। এই সম্মেলনে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কৌশল তৈরি করা হবে।
সম্প্রতি বিকশিত জোরওয়ার লাইট ট্যাঙ্ক এবং ড্রোন-এর মতো দেশীয় অস্ত্র আত্মনির্ভর ভারতের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে সমন্বয়ের উপরও জোর দেওয়া হবে। যেমন থিয়েটার কমান্ড স্থাপনের মাধ্যমে তিনটি বাহিনী একসাথে কাজ করতে পারবে।
সম্মেলনের লক্ষ্য
কমান্ডার্স সম্মেলন ২০২৫ ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা। সংস্কার, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির উপর ফোকাস করার মাধ্যমে সেনাবাহিনী আরও চৌকস এবং সিদ্ধান্তমূলক হবে। এই আয়োজন কেবল সামরিক কৌশলকে শক্তিশালী করবে না, বরং দেশবাসীর মনে এই বিশ্বাসও জাগাবে যে আমাদের সেনাবাহিনী সকল চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
সম্মেলনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সংস্কারের (modernization and reforms) উপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি, সাইবার যুদ্ধ এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থার উপর আলোচনা হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সক্ষম এবং আধুনিক থাকবে।
অপারেশনাল প্রস্তুতি
অপারেশনাল প্রস্তুতির (operational readiness) মধ্যে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত। স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রের শক্তিগুলিকে সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত রাখার জন্য কৌশলের বিস্তারিত আলোচনা হবে। এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা (national security) এবং কৌশলগত ভারসাম্য শক্তিশালী করবে।
সকল স্তরের কর্মকর্তা ও সৈন্যদের অংশগ্রহণ
সম্মেলনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সকল স্তরের সৈন্য ও কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। এর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাও কৌশলগত সিদ্ধান্তে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি যা সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে।