রান্নার ধোঁয়ায় বাড়ছে মহিলাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি!

রান্নার ধোঁয়ায় বাড়ছে মহিলাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি!
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রশ্নে চিকিৎসকেরাও

বেলগাছিয়ার রসগোল্লা বস্তির প্রীতি তিওয়ারি কয়েক সপ্তাহ ধরে কাশির সমস্যায় ভুগছিলেন। শেষমেশ চিকিৎসকের কাছে যেতেই ধরা পড়ল ফুসফুসের ক্যান্সার। অথচ, প্রীতি কখনও ধূমপান করেননি। তাহলে কেন এমন রোগ? এই প্রশ্নই উঠে আসছে হাজারো প্রীতির কণ্ঠে।

‘ল্যান্সেট’-এর গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য, রান্নাঘরের ধোঁয়াই বিপদের শিকড়

সম্প্রতি প্রকাশিত বিজ্ঞানপত্রিকা ‘ল্যান্সেট’-এর এক গবেষণাপত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— শুধুমাত্র ধূমপানই নয়, রান্নার ধোঁয়াও বড় বিপদ। বিশেষ করে ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এই কারণেই। রান্নার সময় উৎপন্ন দূষিত গ্যাস মহিলাদের শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

১০ শহরের মহিলাদের নিয়ে সমীক্ষা, উদ্বেগজনক ফলাফল

চেন্নাইয়ের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই গবেষক দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই, হায়দরাবাদ-সহ ১০টি শহরে প্রায় দেড় হাজার মহিলার উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন— তাঁদের ৫৮ শতাংশই ধূমপান না করেও ফুসফুস সংক্রান্ত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ক্যান্সার, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, এমনকি চোখ দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যাও রয়েছে।

রান্নাঘরের সময়টাই জীবনের জন্য বড় বিপদ, বলছেন গবেষকেরা

সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ভারতীয় গৃহিণীরা প্রতিদিন বহু ঘণ্টা কাটান রান্নাঘরে। সেখানেই কাঠ-কয়লার উনুন, পুরনো গ্যাসের চুলা থেকে ছড়ায় মারাত্মক ক্ষতিকারক ধোঁয়া। দিনের পর দিন সেই ধোঁয়ার সংস্পর্শে এসে তাঁদের ফুসফুসে জমছে বিষ। যে বিপদ অনেকেই টের পান না, আবার কেউ জানলেও সচেতন নন।

ধূপ, মশার ধূপেও গুঁড়োগুঁড়ো বিষ, ঢুকছে শ্বাসের সঙ্গে

শুধু রান্না নয়, ধূপকাঠি ও মশার ধূপ থেকেও যে ক্ষতিকর ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করছে, তা জানিয়েছে গবেষণাপত্রটি। অনেকেই ঘরের বাতাসকে ‘পবিত্র’ করার জন্য যে ধূপ জ্বালান, তা আসলে বিষাক্ত বায়ুর ঘনঘটা তৈরি করছে চার দেওয়ালের মধ্যেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা, প্রশাসনকে নড়েচড়ে বসার ডাক

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) সম্প্রতি জানিয়েছে, পরিবেশগত ধোঁয়া ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। প্রশাসনকে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কতটা কাজ হচ্ছে, উঠছে সেই প্রশ্নও।

চিকিৎসক-গবেষকের কণ্ঠে উদ্বেগ, কাঠ-কয়লার উনুনে ফুসফুসে সরাসরি আঘাত

ফুসফুস রোগের বিশেষজ্ঞ রাজা ধর স্পষ্ট করে বলছেন, “গ্যাসের পরিবর্তে এখনো বহু মানুষ কাঠ বা কয়লার উনুন ব্যবহার করেন। এর ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড-সহ নানা দূষিত পদার্থ সরাসরি ফুসফুসে ঢুকে সেল নষ্ট করে দিচ্ছে।” যার থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর রোগ।

পরিবেশবিদের কড়া বার্তা, প্রশাসনকে নীতিগত পদক্ষেপের আহ্বান

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, “রান্নার গ্যাস ও কাঠ-কয়লা— দুই-ই তীব্র দূষণের উৎস। প্রশাসনের উচিত, শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন বা ক্যাম্পেইনে থেমে না থেকে গৃহস্থ পর্যায়ে সচেতনতা ছড়ানো ও নিরাপদ বিকল্প পৌঁছে দেওয়া।

পুরসভা আশ্বাস দিচ্ছে প্রচারের, কিন্তু মাঠে কার্যকরতা কোথায়?

কলকাতা পুরসভার পরিবেশ দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, “বাড়ির মধ্যে যে দূষণে কী রোগ হয় তা নিয়ে খুব শীঘ্রই বড়সড় প্রচার শুরু হবে।” যদিও বাস্তবে কবে হবে, কীভাবে হবে— তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা মেলেনি সাধারণ মানুষের কাছে।

রান্নাঘরের ধোঁয়া এখন ঘরের ভিতরের ‘শত্রু’, কবে আসবে জোরালো পদক্ষেপ?

যেখানে গৃহিণীদের সুরক্ষা জরুরি, সেখানেই অবহেলা। রান্নার ধোঁয়া, ধূপের গন্ধ— এসব যেন নিঃশব্দে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মহিলাদের জীবনে। বিজ্ঞানীরা জোর দিচ্ছেন সচেতনতায়, চিকিৎসকেরা বলছেন বিকল্প ব্যবস্থার কথা— কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে এখনও সেই জোরালো পদক্ষেপের অভাব স্পষ্ট।

Leave a comment