বিহার নির্বাচন ২০২৫: ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে তেজস্বীর আশঙ্কা

বিহার নির্বাচন ২০২৫: ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে তেজস্বীর আশঙ্কা

তেজস্বী যাদব ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে, যদি ১% ভোটও কাটা যায়, তাহলে বিহারের ৪০টির বেশি বিধানসভা আসনে নির্বাচনের ফল প্রভাবিত হতে পারে।

বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ गहन পুনরীক্ষণ (SIR) নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব দাবি করেছেন, যদি মাত্র ১% ভোটারও তালিকা থেকে বাদ পড়েন, তাহলে রাজ্যের তিন ডজনের বেশি আসনে ফলাফলের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন কমিশনের দাবি এবং বিরোধীদের উদ্বেগের মধ্যে, এই ১ শতাংশের অঙ্কটি কী, এবং কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা জানা জরুরি।

SIR প্রক্রিয়া নিয়ে তেজস্বীর আপত্তি

বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ गहन পুনরীক্ষণ (Special Intensive Revision - SIR) অভিযান নিয়ে বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই প্রক্রিয়াটি নিছকই লোকদেখানো এবং এর পিছনে সংগঠিতভাবে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত থাকতে পারে।

তেজস্বী নির্বাচন কমিশনের ৮০ শতাংশের বেশি ফর্ম পূরণ করার দাবিতেও আস্থা রাখতে পারছেন না। তাঁর মতে, অনেক ভোটার জানেন না যে তাঁদের নামে ফর্ম পূরণ করা হয়েছে। তেজস্বীর আশঙ্কা, যদি ১% ভোটারও তালিকা থেকে বাদ যান, তাহলে তার সরাসরি প্রভাব বিধানসভার প্রায় ৪০টি আসনে পড়তে পারে।

১% ভোটের অঙ্কটা কী?

তেজস্বী যাদব যে পরিসংখ্যানের উল্লেখ করেছেন, তা উল্লেখযোগ্য। বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৯০ লক্ষ। এর মধ্যে ১% ভোটার যদি তালিকা থেকে বাদ যান, তাহলে সেই সংখ্যাটি ৭ লক্ষ ৯০ হাজারে দাঁড়াবে।

বিহার বিধানসভার ২৪৩টি আসনের হিসেবে ধরলে, প্রতিটি আসনে গড়ে ৩২৫১ জন ভোটারের ক্ষতি হতে পারে। তেজস্বীর মতে, এত বিপুল সংখ্যক ভোট কাটলে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর বড় প্রভাব পড়বে।

২০২০ সালের নির্বাচনের ফল এবং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের উদাহরণ

  • তেজস্বীর উদ্বেগ অমূলক নয়। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪০টি আসনে জয়ের ব্যবধান ছিল ৩,৫০০ ভোটের কম।
  • নালন্দার হিলসা আসনে জেডিইউ-এর কৃষ্ণমুরারি শরণ মাত্র ১২ ভোটে জিতেছিলেন।
  • আরজেডি-র সুধাখর সিং মাত্র ১৮৯ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।
  • দেহরি আসনে ৪৬৪, কুঢ়নি আসনে ৭১২ এবং বখরি আসনে ৭৭৭ ভোটে জয় এসেছিল।

এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, অনেক আসনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। এমতাবস্থায় যদি ১% ভোটও তালিকা থেকে বাদ যায়, তাহলে অনেক আসনের ফলাফল পাল্টে যেতে পারে।

কেবল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আসনগুলোই কি উদ্বেগের কারণ?

বিশিষ্ট সাংবাদিক ওমপ্রকাশ অश्ক-এর মতে, তেজস্বী যাদবের উদ্বেগ কেবল অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় হওয়া আসনগুলিতে সীমাবদ্ধ নয়। সীমাঞ্চল এবং মিথিলাঞ্চলের মতো সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিও আরজেডি-র জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলগুলিতে যাদব এবং মুসলিম ভোটাররা আরজেডি-র শক্তি হিসেবে পরিচিত।

এসআইআর-এর সময় কিছু প্রতিবেদনে এমনটাও জানা গেছে যে, নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলিতে এমন কিছু মানুষ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, যাঁদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এর ফলে আরজেডি-র আশঙ্কা, তাঁদের মূল ভোটব্যাঙ্কের ভোটারদের নাম বাদ যেতে পারে।

তেজস্বীর অভিযোগ: ভোটার ভেরিফিকেশনে বিভ্রান্তি

তেজস্বী যাদব বলেছেন, ভোটাররা এ বিষয়ে অবগত নন যে তাঁদের নামে কোনও ফর্ম পূরণ করা হয়েছে কিনা। তিনি দাবি করেছেন, অনেক জায়গায় বিএলও (Booth Level Officer)-রাও বিভ্রান্ত। তেজস্বীর অভিযোগ, কোথাও বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের তরফে প্রতি বুথে ১০ থেকে ৫০টি ভোট কাটার লক্ষ্য দেওয়া হয়নি তো?

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, বিহারে ৮০%-এর বেশি ভোটার ফর্ম পূরণ করেছেন এবং যাচাইকরণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কমিশনের দাবি, ভোটার তালিকাকে স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

Leave a comment