সতর্কতা এআই যুগে ‘ক্লিকেই’ সর্বনাশ হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রামে ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর সাইবার প্রতারণার ফাঁদ

সতর্কতা এআই যুগে ‘ক্লিকেই’ সর্বনাশ হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রামে ছড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর সাইবার প্রতারণার ফাঁদ

প্রযুক্তির সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে বিপদ! সাইবার জাল বুনছে প্রতারকেরা

ডিজিটাল দুনিয়ায় এআই-এর প্রবল বিস্তার যেমন আমাদের দৈনন্দিন কাজ সহজ করেছে, তেমনই এর সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু চক্র। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া গায়ে মেখেই নিজেদের ঠকানোর কৌশল ঝালিয়ে নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। আগে যেখানে হ্যাকিং বা OTP চুরিই ছিল মূল অস্ত্র, এখন তারা আরও একধাপ এগিয়ে—শুরুতে আপনাকেই টাকা দেবে, বিশ্বাস গড়ে তুলবে, তারপর সেই বিশ্বাসেই ফাঁদ পেতে নিঃস্ব করে দেবে।

‘লাইক করলেই টাকা’? শুনলেই বুঝুন ফাঁদ পাতা হয়েছে আপনার জন্য

সাম্প্রতিক প্রতারণার এই নতুন চক্রটি মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, মেসেঞ্জার—এমনকি SMS মারফতও আসছে ‘অফার লিঙ্ক’। বলা হচ্ছে—ইউটিউব বা ফেসবুক ভিডিও-তে লাইক ও কমেন্ট করলেই জিতে যাবেন টাকা! শুরুতে আপনি টেস্টের মতো অল্প কিছু টাকা পেয়ে যাবেন—যেমন ৫০ টাকা, ১০০ টাকা। মনে হবে সত্যিই কোনও legit কোম্পানি এই অফার দিচ্ছে।

সুদের লোভে পা ফেললেই শুরু হবে আসল খেলা

একটু পরেই আসবে মূল প্রস্তাব—"১০০০ টাকা ইনভেস্ট করুন, সঙ্গে সঙ্গে পাবেন ৭০% সুদ!" আপনি হয়তো একবার চেষ্টা করে দেখবেন, এবং অবাক হয়ে দেখবেন টাকা সত্যিই আসছে। এখানেই আপনি পা দিলেন ফাঁদে। এরপর বলা হবে বড় অঙ্কের ইনভেস্ট করুন—১০,০০০, ৫০,০০০ বা তার বেশি, এবং মাসিক রিটার্ন পাবেন। কিন্তু এবার থেকে আর কোনও টাকা আসবে না।

‘লাভের ছুতোয় লোভ’, এবার ধাপে ধাপে নিঃস্ব করার পালা

এক সময় বলা হবে—"আপনি ১ লক্ষ টাকা দিলে বছরে ২ লক্ষ পাবেন।" অথবা, “মাসে ২০ হাজার ইনকাম পেতে বছরে মাত্র ১.৫ লক্ষ দিন।” আপনার আগের লাভ দেখিয়ে আপনাকে আরও টাকা জমা করতে বলা হবে। আবারও হয়তো ২-১ মাস সামান্য কিছু ফেরত দেবে। কিন্তু সময় যত যাবে, টাকাও মিলবে না, প্রতারকেরাও অদৃশ্য হয়ে যাবে।

শেষ ধাপে ‘ট্যাক্স ফাঁদ’—যেখানে সব শেষ হয়ে যায়

যখন আপনি বুঝবেন, আপনার ইনভেস্ট করা টাকা আটকে গেছে, তখন প্রতারকেরা নতুন যুক্তি দেবে—“আপনার ফান্ড ৮-১০ লক্ষ টাকা হয়েছে, তবে রিলিজ করতে হলে দিতে হবে ২০% ইনকাম ট্যাক্স।” এখানে অনেকে শেষ সঞ্চয়টুকুও ঢেলে দেন, কারণ তারা ভাবেন এবার তো বড় অঙ্ক আসছে! কিন্তু বাস্তব হল, এরপর প্রতারকেরা একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই ফাঁদে পা দিলে শুধুই ‘ক্লিক’ নয়, কপর্দকশূন্য হওয়ার চূড়ান্ত রাস্তায় ঢুকে পড়েন আপনি সাইবার সেল জানাচ্ছে—এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পুলিশের কাছে ছুটছেন। কিন্তু ততক্ষণে ফোন নম্বর, ওয়েবসাইট, ই-মেইল—সবই বাতিল বা ফেক। তাই যত দ্রুত সম্ভব সচেতন হোন। কোনোভাবেই এমন লিঙ্কে ক্লিক করবেন না, বিশেষত যেখানে বলা হচ্ছে ‘লাইক করে টাকা জিতুন’।

কী করলে আপনি বাঁচতে পারেন এই ফাঁদ থেকে?

অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।

হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম-এ ‘অফার’-এর নাম করে কেউ টাকা দিলে সেটা বিশ্বাস করবেন না।

বেশি সুদের টোপ মানেই তা প্রতারণা হতে পারে—চিন্তা করে পদক্ষেপ নিন।

সরকারি বা বিশ্বাসযোগ্য কোনো সংস্থা যদি অফার দেয়, তার যথাযথ ওয়েবসাইট বা সোর্স যাচাই করুন।

সন্দেহজনক লিঙ্ক এলে সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট ও ব্লক করুন।

Leave a comment