শেয়ার বাজারে গত কয়েক দিন ধরে প্রতিরক্ষা খাতের শেয়ারগুলিতে একটানা দুর্বলতা দেখা যাচ্ছিল। প্রায় আটটি ট্রেডিং সেশনের মধ্যে সাত দিনই এই স্টকগুলিতে পতন দেখা গেছে। কিন্তু এই সপ্তাহের শুরুটা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করেছে। বাজার খোলার সাথে সাথেই প্রতিরক্ষা খাতের প্রধান শেয়ারগুলিতে উত্থান দেখা যায়। বিনিয়োগকারীরা আবারও এই খাতের দিকে ঝুঁকছেন এবং কেনাকাটায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এই উত্থানের সবচেয়ে বড় সুবিধা পেয়েছে ডেটা প্যাটার্নসের শেয়ার, যা দুপুরে প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে ২৬৬৭ টাকার কাছাকাছি লেনদেন করতে দেখা যায়।
কোন স্টকগুলিতে সবচেয়ে বেশি অ্যাকশন দেখা গেছে
প্রতিরক্ষা খাতের যে শেয়ারগুলিতে সবচেয়ে বেশি গতি দেখা গেছে, তাদের মধ্যে প্রধান নামগুলি হল:
- Data Patterns: প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি
- Bharat Electronics: ২.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি
- Garden Reach Shipbuilders: প্রায় ৩ শতাংশ উপরে
- HAL (Hindustan Aeronautics): ১.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি
- BEML: ২.২২ শতাংশ বৃদ্ধি
এই সংস্থাগুলিতে প্রচুর কেনাকাটা দেখা গেছে, যা প্রমাণ করে যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনও এই সংস্থাগুলির উপর অটুট রয়েছে।
কেন প্রতিরক্ষা শেয়ারে ফিরে এল উজ্জ্বলতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিরক্ষা স্টকগুলির সাম্প্রতিক দুর্বলতার কারণ ছিল এই সংস্থাগুলির উচ্চ মূল্যায়ন এবং প্রত্যাশার চেয়ে কম ত্রৈমাসিক ফলাফল। বিশেষ করে ভারত ইলেকট্রনিক্স এবং মাজগাঁও ডকের মতো সংস্থাগুলির পারফরম্যান্স বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল।
তবে বাজারে এমন ধারণা রয়েছে যে সাম্প্রতিক পতনের পরে এখন এই স্টকগুলির মূল্যায়ন একটি আকর্ষণীয় স্তরে পৌঁছেছে। এই কারণেই বিনিয়োগকারীরা আবার এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
নিফটি ডিফেন্স ইনডেক্সে এসেছে तेजी
গত এক সপ্তাহে প্রায় ৮ শতাংশ কমে যাওয়া নিফটি ইন্ডিয়া ডিফেন্স ইনডেক্সও সোমবার ২ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে বন্ধ হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে শুধু কিছু নির্বাচিত কোম্পানি নয়, পুরো সেক্টরেই ইতিবাচক মুভমেন্ট দেখা গেছে।
এই উত্থান আরও বিশেষ হয়ে ওঠে যখন আমরা দেখি যে বৃহত্তর বাজার অর্থাৎ অন্যান্য ইনডেক্সে তেমন উৎসাহ ছিল না।
অপারেশন সিন্দুরের প্রভাব আবারও দেখা গেল
গত কয়েক মাসে প্রতিরক্ষা খাতের तेजी-র একটি বড় কারণ ছিল অপারেশন সিন্দুর। এই অপারেশনটি ভারত এপ্রিল মাসে শুরু করেছিল যখন জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এই जवाबी कार्रवाई-তে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এই ঘটনার পর প্রতিরক্ষা স্টকগুলিতে जोरदार तेजी এসেছিল। অনেক শেয়ার ৪০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। বাজারে মনে করা হয়েছিল যে এই অপারেশনের পর ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং বাজেটের উপর জোর বাড়বে, যার ফলে প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির অর্ডার বুক বাড়বে।
কিছু স্টক এখনও চাপে
তবে এই तेजी-র মধ্যেও কিছু প্রতিরক্ষা শেয়ার লাল চিহ্নে বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিমেচ এ্যারোস্পেস, সিয়েন্ট ডিএলএম এবং জেন টেকনোলজিসের মতো নাম রয়েছে। এই সংস্থাগুলিতে এখনও বিক্রি দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংস্থাগুলির ব্যবসার মডেল বা বৃদ্ধির প্রজেকশন নিয়ে বাজারে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা এতে এখনও দ্বিধা বোধ করছেন।
বাজেট এবং নীতি পরিবর্তনেরও ভূমিকা রয়েছে
প্রতিরক্ষা খাতের চালচলনে সরকারের নীতির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। চলতি অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য আলাদাভাবে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া, Make in India এবং Atmanirbhar Bharat-এর মতো উদ্যোগের কারণে দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি लगातार নতুন অর্ডার পাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা উৎপাদনে आत्मनिर्भरতা-র উপর সরকারের জোর বেড়েছে। এতে HAL, BEL, BEML-এর মতো সংস্থাগুলি लगातार উপকৃত হচ্ছে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ
এই খাতের বিশেষত্ব হলো এটি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অর্থাৎ FII-দের জন্যও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। শক্তিশালী অর্ডার বুক, সরকারি সহায়তা এবং প্রতিরক্ষা বাজেটে लगातार বৃদ্ধি এটিকে বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ ক্ষেত্র করে তুলেছে।
সাম্প্রতিক সেবি পরিসংখ্যান অনুসারে, বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রতিরক্ষা স্টকগুলিতে लगातार অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে, বিশেষ করে সরকারি খাতের সংস্থাগুলিতে।