দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ২১ বছর আগের একটি নৃশংস হত্যা মামলার কিনারা করে বড় সাফল্য পেয়েছে। ২০০৪ সালে স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করে পলাতক আসামি বীরপাল অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। গত দুই দশক ধরে সে নিজের আসল পরিচয় গোপন করে লখনউয়ের বকशी কা তালাব এলাকায় 'বিজয় ওরফে রামদয়াল' নামে দিনমজুরের কাজ করছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক থাকাকালীন তৃতীয় বিয়েও করে এবং তিন মেয়ের বাবা হয়। পুলিশ ইলেকট্রনিক নজরদারির মাধ্যমে তার পরিচয় উন্মোচন করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযানের মাধ্যমে লখনউ থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
২০০৪ সালে স্ত্রীকে হত্যা করেছিল
২২ সেপ্টেম্বর, ২০০৪ সালে দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকায় একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। এক ভাড়াটিয়া তার স্ত্রী ও নাবালক পুত্রের ওপর মারাত্মক হামলা করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ঘরের মধ্যে মহিলার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে এবং পাশেই তার সন্তানকে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। আহত শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ইট, ভাঙা চুড়ি, একটি ভাঙা দাঁত এবং শাড়ি দিয়ে বাঁধা মহিলার মুখ উদ্ধার করে, যা থেকে স্পষ্ট ছিল যে হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে সংঘটিত হয়েছে।
সন্তানই পিতার রহস্য উন্মোচন করে
পুলিশের তদন্তে জানা যায় যে মৃত মহিলা বীরপালের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। যখন আহত শিশুটির জ্ঞান ফেরে, তখন সে জানায় যে তার এবং তার মায়ের উপর তার বাবা বীরপাল এবং চাচা সুরেশ কুমার একসঙ্গে হামলা করেছিল। এই বিবৃতির ভিত্তিতে পুলিশ দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যার চেষ্টার মামলা দায়ের করে। সুরেশ কুমারকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা হয় এবং ২০০৭ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু বীরপাল তখন থেকেই পলাতক ছিল।
নতুন জীবন, কিন্তু পুলিশের নজর এড়াতে পারেনি
২০০৫ সালে আদালত বীরপালকে পলাতক ঘোষণা করে। এরপর সে ফারুকাবাদে তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে দেয় এবং লখনউতে নতুন পরিচয় নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। সে বিজয় ওরফে রামদয়াল নামে দিনমজুরের কাজ করতে শুরু করে এবং সমাজের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে যায়। নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য সে পুরনো গ্রাম ও আত্মীয়দের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে।
ক্রাইম ব্রাঞ্চের দল অভিযুক্তের সন্ধান কখনও বন্ধ করেনি। ইলেকট্রনিক এবং ম্যানুয়াল নজরদারির মাধ্যমে যখন পুলিশ লখনউয়ের এক শ্রমিকের ওপর সন্দেহ করে, তখন তার গভীরভাবে তদন্ত শুরু হয়। সন্দেহ দৃঢ় হলে পুলিশ দল গোপনে অভিযান চালায় এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে বীরপাল তার অপরাধ স্বীকার করেছে। পুলিশ এখন তার কাছ থেকে মামলার বাকি সূত্রগুলো জানার চেষ্টা করছে।