দিল্লিতে দুইবার যৌন হেনস্থাকারী যুবক সিসিটিভি ফুটেজ ও ডেটা বিশ্লেষণ করে গ্রেপ্তার

দিল্লিতে দুইবার যৌন হেনস্থাকারী যুবক সিসিটিভি ফুটেজ ও ডেটা বিশ্লেষণ করে গ্রেপ্তার

দিল্লির মডেল টাউনে স্কুটি আরোহী এক তরুণীকে দু'বার যৌন হেনস্থা করেছেন; পুলিশ ৫০০+ সিসিটিভি ফুটেজ এবং ১.৫ লক্ষ স্কুটির ডেটা থেকে অভিযুক্ত কঙ্কন নাথকে গ্রেপ্তার করেছে।

নতুন দিল্লি: দিল্লির মডেল টাউন এলাকায় এক তরুণী স্কুটি আরোহী এক ব্যক্তির দ্বারা দু'বার যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন। প্রথমে ভয়ে চুপ থাকলেও, যখন ঘটনাটি পুনরায় ঘটে, তখন তিনি সাহস দেখিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পুলিশ ১.৫ লক্ষ স্কুটির ডেটা থেকে সন্দেহজনক যান চিহ্নিত করে এবং ৫০০-এর বেশি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।

প্রথম ঘটনায় তরুণীর মনে ভয়

তরুণী জানিয়েছেন, প্রথমবার যখন অভিযুক্ত তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তখন তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর বাড়ি থেকে বের হতে তার ভয় লাগতো। তিনি বারবার ভাবতেন, আবার সেই ঘটনা না ঘটে। প্রথম আক্রমণ তার মনে নিরাপত্তাহীনতা এবং ভয় সৃষ্টি করেছিল। পরিবার ও বন্ধুদের ঘটনাটি জানাতেও তিনি ইতস্তত বোধ করছিলেন।

দুই দিনের মধ্যে যখন অভিযুক্ত দ্বিতীয়বার হামলা চালায়, তখন তরুণী সিদ্ধান্ত নেন যে আর চুপ থাকবেন না। এবার ঘটনাটি আরও ভয়াবহ ছিল। অভিযুক্ত শুধু যৌন হয়রানিই করেনি, শরীরের গোপন অঙ্গ ধরে টানার চেষ্টা পর্যন্ত করেছে। এই ঘটনা তরুণীর সাহসকে নাড়িয়ে দেয় এবং তিনি সরাসরি পুলিশের দ্বারস্থ হন।

পুলিশ মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে

মডেল টাউন থানার পুলিশ দ্রুত মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। পরিবহন দপ্তর থেকে ১.৫ লক্ষ স্কুটির তালিকা সংগ্রহ করে সন্দেহজনক যানটি চিহ্নিত করা হয়। এরপর ৫০০-এর বেশি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয় এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পুলিশ দল দিনরাত পরিশ্রম করে অভিযুক্তের কাছে পৌঁছায়।

এসিপি সুরেশ খুঙ্গার নির্দেশনায় এসএইচও অশোক গিরি, এসআই দিব্যা এবং অন্যান্য দলের সদস্যরা মিলে অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্ত করেন। প্রযুক্তিগত এবং স্থানীয় তদন্তের সমন্বয়ে দলটি অভিযুক্তকে ধরতে সক্ষম হয়। পুলিশ সূত্রমতে, প্রাথমিকভাবে এই মামলাটি 'ব্লাইন্ড' ছিল এবং অভিযুক্তের সন্ধান করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।

অভিযুক্ত কঙ্কন নাথের পরিচয় এবং মানসিকতা

পুলিশ অভিযুক্তের পরিচয় কঙ্কন নাথ হিসেবে নিশ্চিত করে। তিনি ৩১ বছর বয়সী, নলবাড়ি (আসাম) নিবাসী এবং একজন সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, চলার পথে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে এবং তাদের শরীরের স্পর্শ করতে তার আনন্দ হত। অভিযুক্ত বিবাহিত এবং তার পাঁচ বছরের একটি মেয়ে আছে।

তদন্তে আরও জানা গেছে যে, অভিযুক্ত দিল্লির অনেক এলাকায় মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন করেছে, যেমন ভারত নগর, আদর্শ নগর, মুখার্জি নগর, সিভিল লাইন্স এবং মডেল টাউন। মহিলারা সম্মানহানি এবং আইনি জটিলতার ভয়ে অভিযোগ না করার কথা জানিয়েছেন। এই কারণেই অভিযুক্তের সাহস ক্রমশ বাড়ছিল।

অভিযুক্তের গ্রেপ্তার

মডেল টাউন পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। ডিসিপি ভীষ্ম সিং জানিয়েছেন যে, তরুণীর সাহস এবং পুলিশের তৎপরতার কারণে এই মামলাটি সফলভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনাটি মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা এবং নিরাপত্তার গুরুত্বও তুলে ধরেছে।

পুলিশ এখন অভিযুক্তের অন্যান্য সম্ভাব্য শিকারদের শনাক্তকরণ এবং তাদের সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে। তরুণীর সাহসিকতা এবং পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ভয়কে সাহসে পরিণত করা এবং অপরাধীদের মোকাবেলা করাই সুরক্ষার প্রথম ধাপ।

Leave a comment