ডিপফেক রুখতে কঠোর আইন আনছে ডেনমার্ক

ডিপফেক রুখতে কঠোর আইন আনছে ডেনমার্ক

ডেনমার্ক সরকার ডিপফেক প্রযুক্তির উপর কঠোর আইন আনতে চলেছে, যার অধীনে কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার কণ্ঠস্বর বা ছবি ব্যবহার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে, যাতে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা যায়।

ডিপফেক ভিডিও: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর জগতে, যেখানে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হচ্ছে, সেখানে ডিপফেকের মতো প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে তৈরি হওয়া বিপদগুলি সরকারকে নতুন সমস্যা দিয়েছে। ডেনমার্ক সরকার এই চ্যালেঞ্জকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা এখন ডিপফেক প্রযুক্তির অনৈতিক ব্যবহার রোধ করার জন্য কঠোর আইন তৈরি করবে। এই পদক্ষেপটি এই প্রযুক্তির কারণে তৈরি হওয়া সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাইবার হুমকি নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

ডিপফেক প্রযুক্তি কী?

ডিপফেক হল একটি অত্যাধুনিক AI প্রযুক্তি যা কোনো ব্যক্তির ছবি এবং কণ্ঠস্বরের প্রায় হুবহু নকল তৈরি করার জন্য মেশিন লার্নিং এবং ডিপ লার্নিং ব্যবহার করে। এটি ব্যবহার করে, জাল ভিডিও এবং অডিও তৈরি করা হয়, যা এতটাই বাস্তব মনে হয় যে সাধারণ মানুষের পক্ষে সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। 'ডিপফেক' নামটি দুটি শব্দ থেকে তৈরি - 'ডিপ লার্নিং' এবং 'ফেক'। এই প্রযুক্তির মূল দুটি প্রধান AI অ্যালগরিদমের মধ্যে লুকানো আছে যাকে এনকোডার এবং ডিকোডার বলা হয়। এনকোডার একজন বাস্তব ব্যক্তির ছবি, হাবভাব এবং কণ্ঠস্বর সনাক্ত করে এবং তার নমুনা শেখে, যেখানে ডিকোডার এই তথ্য অন্য ভিডিওতে এমনভাবে যুক্ত করে যে ভিডিওটি বাস্তব মনে হয়।

ডেনমার্কের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

ডেনমার্ক ডিপফেকের অননুমোদিত ব্যবহারকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা বিশ্বের প্রথম দেশ হতে চলেছে। সরকার একটি প্রস্তাবিত আইনের খসড়া তৈরি করেছে, যার অধীনে নিম্নলিখিত বিধানগুলি করা হয়েছে:

  1. কারও অনুমতি ছাড়া তার ছবি বা কণ্ঠস্বর ব্যবহার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
  2. ডিপফেক ভিডিও বা অডিওর প্রচারে কঠোর জরিমানা করা হবে।
  3. সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ডিপফেক সামগ্রী সরানোর আইনি দায়িত্ব দেওয়া হবে।

এই আইনটি বিশেষভাবে সেই ক্ষেত্রে কার্যকর হবে যেখানে ডিপফেক ব্যবহার করে মানুষের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়ানো বা সাইবার জালিয়াতি করা হয়েছে।

ডিপফেক সম্পর্কিত বিপদের ক্রমবর্ধমান সচেতনতা

ডেনমার্ক সরকার কর্তৃক এই পদক্ষেপ সময়ের প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার অনেক গুরুতর ক্ষেত্রে দেখা গেছে:

  • রাজনৈতিক প্রচার: নির্বাচনের সময় নেতাদের মিথ্যা বক্তব্য তৈরি করে ভোটারদের প্রতারিত করা হয়েছে।
  • সামাজিক ব্ল্যাকমেইলিং: মহিলা ও যুবকদের অশ্লীল ডিপফেক ভিডিও তৈরি করে তাদের অপদস্থ করা হয়েছে।
  • মিথ্যা খবর: সামাজিক উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় জাল ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে।
  • সাইবার ক্রাইম: পরিচয় চুরি করে ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির মতো অপরাধ করা হয়েছে।

বৈশ্বিক উদ্বেগ এবং সমাধানের দিশা

ডিপফেক শুধুমাত্র ডেনমার্কের জন্য সমস্যা নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিশ্বের অনেক দেশ এই প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমেরিকাতে, নির্বাচনের সময় ডিপফেক দ্বারা অনেকবার মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। ভারতেও অশ্লীল ডিপফেক ভিডিওর অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এই বিষয়ে বিশ্বব্যাপী একটি অভিন্ন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে, যাতে সারা বিশ্বে ডিপফেকের জন্য একই আইন তৈরি করা যায়। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই প্রযুক্তিকে এখন নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে এটি আগামী দিনে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সাধারণ নাগরিকদের কী করা উচিত?

ডিপফেকের ক্রমবর্ধমান বিপদের মধ্যে, প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হল সতর্ক থাকা। নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে, একজন ব্যক্তি ডিপফেকের পরিণতি থেকে বাঁচতে পারে:

  • যেকোনো চাঞ্চল্যকর ভিডিও বা অডিও যাচাই না করে শেয়ার করবেন না।
  • সর্বদা কন্টেন্টের উৎস যাচাই করুন।
  • কন্টেন্টের সত্যতা যাচাই করার জন্য Google রিভার্স ইমেজ সার্চ বা অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।
  • যেকোনো সন্দেহজনক ভিডিও বা পোস্টের বিষয়ে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ করুন।

Leave a comment