হঠাৎ অদৃশ্য, স্বাস্থ্য নিয়ে ছড়াল মৃত্যু গুজব
নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক আঙিনায় হঠাৎই চাঞ্চল্য। বেশ কয়েকদিন ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছিল না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এই অনুপস্থিতি ঘিরেই শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গুজব—৭৯ বছরের ট্রাম্প নাকি আর বেঁচে নেই! সাধারণ নাগরিক থেকে রাজনৈতিক মহল, সবাই একে অপরকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন, আদৌ কি সত্যি এই খবর?
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে গুজব উড়িয়ে দিলেন ট্রাম্প
এক সপ্তাহের অন্তরাল ভেঙে অবশেষে মঙ্গলবার প্রকাশ্যে এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্পেস কমান্ড সদর দফতরের নতুন ঘোষণা ঘিরে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে সমস্ত গুজব খণ্ডন করলেন তিনি। যদিও দেরি করেছিলেন প্রায় ৪৫ মিনিট, তবুও সরাসরি ক্যামেরার সামনে এসে ট্রাম্প স্পষ্ট জানালেন—তিনি পুরোপুরি সুস্থ। পাশাপাশি, নেটিজেনদের ভুয়ো দাবিকেও উড়িয়ে দিয়ে বললেন, এই সমস্ত কথাই ভিত্তিহীন।
চুল এলোমেলো, পোশাক অগোছালো—নতুন বিতর্ক
তবে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে দেখে নতুন করে প্রশ্ন তুললেন অনেকে। এদিন তাঁর চুল ছিল অগোছালো, জামাকাপড় এলোমেলো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বললেও, চেহারার এই অস্বাভাবিক অবস্থা ঘিরে আবারও গুজব ছড়াতে শুরু করে। ফক্স নিউজের সাংবাদিক সরাসরি প্রশ্ন করেন, "আপনি কীভাবে জানলেন যে লোকেরা বলছে আপনি মারা গেছেন?" ট্রাম্প হেসে উত্তর দেন, "না, আমি তো কিছুই জানতাম না।" চারপাশে উপস্থিত সেনেটররা হাসি চাপার চেষ্টা করেন।
হাত-পায়ে ক্ষতচিহ্ন, মেকআপ দিয়ে লুকোনোর অভিযোগ
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের হাতে নানা ক্ষতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। আবার তাঁর গোড়ালিতে ফোলাভাবও ধরা পড়েছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, তিনি মেকআপ ব্যবহার করে এই দাগ ঢাকার চেষ্টা করেন। এই দৃশ্য সামনে আসতেই নতুন করে প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি ট্রাম্প কোনও গুরুতর অসুখে ভুগছেন?
হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যা: সাধারণ বয়সজনিত সমস্যা
হোয়াইট হাউস অবশ্য জল্পনা একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি (CVI) সমস্যা রয়েছে। এই অসুখে পায়ের শিরাগুলি ঠিকভাবে রক্ত হৃদপিণ্ডে ফেরত পাঠাতে পারে না, ফলে নিচের অংশে রক্ত জমে যায়। চিকিৎসকদের মতে, বয়স বাড়লে অনেকের মধ্যেই এ সমস্যা দেখা দেয়।
হাতের ক্ষত নিয়ে প্রেস সেক্রেটারির দাবি
প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, ট্রাম্প নিয়মিত অ্যাসপিরিন গ্রহণ করেন। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেই তিনি এই ওষুধ খান। কিন্তু বারবার করমর্দন এবং অ্যাসপিরিনের প্রভাবে তাঁর হাতে ক্ষত তৈরি হয়েছে। ফলে সাধারণ চোখে যেটা ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে, আসলে তা তেমন গুরুতর নয়।
জনসমক্ষে না এলেও সক্রিয় ছিলেন ট্রাম্প
নিজের স্বাস্থ্যের গুজব প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, জনসমক্ষে দেখা না গেলেও তিনি সক্রিয়ই ছিলেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ নিয়মিত পোস্ট করেছেন তিনি। রবিবারের এক পোস্টে লেখেন—"আমি আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে ভাল বোধ করছি।" এ বক্তব্য দিয়েই সমর্থকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অতীতেও উঠেছিল ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন
এই প্রথম নয়, অতীতে বহুবার ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সময় তাঁর ডাক্তার দাবি করেছিলেন—"ট্রাম্প রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সর্বকালের সবচেয়ে সুস্থ প্রার্থী।" কিন্তু ২০২০ সালে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জানা যায়, তাঁর অবস্থা প্রকৃতপক্ষে অনেক গুরুতর ছিল।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও শুরু জল্পনা
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অসুস্থতা ঘিরে তাই রাজনৈতিক মহলেও নতুন করে প্রশ্ন জেগেছে। বয়স, অসুস্থতা এবং মানসিক চাপ—সব মিলিয়ে তিনি আদৌ আসন্ন নির্বাচনের লড়াই লড়তে পারবেন তো? বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই এই প্রসঙ্গ টেনে প্রচারে নেমেছে। তবে ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা বারবার বলছেন, এ সবই ভিত্তিহীন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাস্থ্য বিতর্ক
ট্রাম্পের এলোমেলো ছবি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আবারও তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে। কেউ বলছেন, প্রেসিডেন্ট গুরুতর অসুস্থ, আবার কেউ লিখছেন, তিনি সচেতনভাবে জনমত ঘোরাতে চান। যদিও ট্রাম্প নিজে স্পষ্ট করে দিয়েছেন—তিনি সুস্থ, দায়িত্ব পালনে একেবারেই প্রস্তুত।