পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ, জানা গেল দূরত্ব বাড়ার কারণ

পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ, জানা গেল দূরত্ব বাড়ার কারণ

আমাদের সবচেয়ে কাছের মহাকাশীয় সঙ্গী চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে চাঁদ প্রতি বছর প্রায় ১.৫ ইঞ্চি (৩.৮ সেন্টিমিটার) হারে আমাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর, কিন্তু এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। 

নয়াদিল্লি: পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত মহাকাশীয় সঙ্গী, চাঁদ, যা প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর ধরে আমাদের সাথে রয়েছে, এখন ধীরে ধীরে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ডঃ স্টিফেন ডিকভি-এর মতে, চাঁদ প্রতি বছর প্রায় ১.৫ ইঞ্চি (৩.৮ সেন্টিমিটার) হারে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিও ধীরে ধীরে কমছে, যার ফলে ভবিষ্যতে একটি দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে পারে।

৪.৫ বিলিয়ন বছরের পুরোনো সঙ্গী চাঁদ

চাঁদের জন্ম প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে হয়েছিল। মনে করা হয় যে সেই সময়ে তরুণ পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি প্রোটোপ্ল্যানেট ধাক্কা খেয়েছিল, যার ফলে মহাকাশে বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। সেই ধ্বংসাবশেষ থেকেই চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রথম দিকে চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছাকাছি ছিল এবং আকাশে এখনকার চেয়ে অনেক বড় দেখাত।

ভূতাত্ত্বিক ও জীবাশ্মবিদ্যার ইঙ্গিত থেকে জানা যায় যে কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীর দিন ছোট ছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ৭০ কোটি বছর আগে, অর্থাৎ ডাইনোসর যুগের শেষে, একটি দিনের সময়কাল প্রায় ২৩.৫ ঘণ্টা ছিল।

দূরত্ব কেন বাড়ছে?

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডঃ স্টিফেন ডিকভি-এর মতে, এর প্রধান কারণ হল জোয়ার-ভাটা (Tidal Forces)।

  • চাঁদের মহাকর্ষ বল সমুদ্রের পানিতে দুটি জোয়ারের স্ফীতি তৈরি করে।
  • একটি স্ফীতি চাঁদের দিকে থাকে, অন্যটি বিপরীত দিকে গঠিত হয়।
  • পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে এই স্ফীতিগুলি চাঁদের সাথে ঠিক সারিবদ্ধ থাকে না, বরং কিছুটা এগিয়ে যায়।
  • এই টানে চাঁদের গতি বেড়ে যায় এবং তার কক্ষপথ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।
  • ফলস্বরূপ, চাঁদ বছর পর বছর ধরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা কীভাবে পরিমাপ করেন?

চাঁদের দূরত্ব পরিমাপ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। অ্যাপোলো মিশনের সময় মহাকাশচারীরা চাঁদের পৃষ্ঠে আয়না (Reflectors) স্থাপন করেছিলেন। বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে এই আয়নাগুলিতে লেজার রশ্মি পাঠান। লেজার ফিরে আসতে যে সময় লাগে তা পরিমাপ করে চাঁদের সঠিক দূরত্ব এবং এতে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা ট্র্যাক করা হয়। এই প্রযুক্তি দিয়েই জানা গেছে যে প্রতি বছর চাঁদ আমাদের থেকে প্রায় ১.৫ ইঞ্চি দূরে সরে যাচ্ছে।

দিন কেন দীর্ঘ হচ্ছে?

যখন পৃথিবী জোয়ারের স্ফীতির কারণে চাঁদের গতি বাড়িয়ে দেয়, তখন পৃথিবী নিজেই কিছুটা কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum) হারায়। এর প্রভাব তার ঘূর্ণন গতির উপর পড়ে এবং তা ধীরে ধীরে ধীর হয়ে যায়। এর মানে হল, চাঁদ যত দূরে যাবে:

  • পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়বে।
  • প্রথমে কয়েক সেকেন্ড, তারপর মিনিট এবং অবশেষে ঘণ্টার পার্থক্য দেখা যাবে।

তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর। আজও চাঁদের দূরত্ব প্রায় ৩,৮৪,০০০ কিলোমিটার এবং এতে বার্ষিক বৃদ্ধি মাত্র ০.০০০০০০01 শতাংশ। তাই আগামী লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ২৪ ঘণ্টার দিন, সূর্যগ্রহণ এবং জোয়ার-ভাটা স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকবে।

Leave a comment