সাফল্য রাজ্যে: অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে নতুন পথ দেখালো রাজ্য গবেষকরা

সাফল্য রাজ্যে: অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে নতুন পথ দেখালো রাজ্য গবেষকরা

অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: নয়া দিশার সন্ধান মিলেছে রাজ্যে। রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রোবায়োটিক এবং জিঙ্ক-কোবাল্ট ন্যানোপার্টিকল ব্যবহার করে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। মুরগি ও পশুপালন ক্ষেত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি থেমে যাচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে। এই গবেষণা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রোবায়োটিকের ব্যবহার: অ্যান্টিবায়োটিকের নিরাপদ বিকল্প

মুরগির খাবারে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করে গবেষকরা দেখিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটারের বিকল্প হিসেবে এটি কার্যকর। ল্যাক্টোব্যাসিলাস স্পোরোজেন্স, স্ট্রেপটোকক্কাস ফিকালিস, ব্যাসিলাস মেসেন্টেরিকাস ও ক্লস্ট্রিডিয়াম বিউট্রিকাম মিশ্রিত প্রোবায়োটিক খাওয়ালে মুরগির ওজন বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও উন্নত হয়।সিদ্ধার্থ জোয়ারদার, প্রধান গবেষক, জানান, “হাসপাতাল থেকে শুরু করে পশুপালন—প্রায় সকল ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার বিপজ্জনক। তাই আমাদের লক্ষ্য ছিল কার্যকর এবং নিরাপদ বিকল্প খুঁজে বের করা। প্রোবায়োটিক সেই দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন।

জিঙ্ক-কোবাল্ট ন্যানোপার্টিকল: মারণক্ষম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের নতুন কৌশল

অন্যদিকে, জিঙ্ক-কোবাল্ট ফেরাইট ন্যানোপার্টিকল ব্যবহার করে মাল্টি-ড্রাগ প্রতিরোধী ই–কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংসে সাফল্য পেয়েছেন গবেষকরা। মাত্র ১২ ন্যানোমিটারের কণাই মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি থামাতে সক্ষম।

রিয়া পাঁজা, গবেষণার নেতৃত্বে, জানান, “এটি অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে নিরাপদ এবং কার্যকর। ভবিষ্যতে চিকিৎসাক্ষেত্রে এটি নতুন দিগন্ত খুলবে।”

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযোগিতা

এই গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন মাইক্রোবায়োলজি’ ও ‘ন্যানোমেটেরিয়ালস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক দলের সাথে সহযোগিতা করেছেন আন্দামানের সেন্ট্রাল আইল্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বেলেঘাটা গভর্নমেন্ট কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ও জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।গবেষকরা আশাবাদী, এই প্রোবায়োটিক ও ন্যানোমেটেরিয়াল প্রযুক্তি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় কার্যকরী দিশা দেখাবে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

গবেষকরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি শুধু পশুপালন ও মাছ চাষেই নয়, মানুষের চিকিৎসায়ও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে এটি রোগ প্রতিরোধ ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে

রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া মোকাবিলায় নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। প্রোবায়োটিক ও জিঙ্ক-কোবাল্ট ন্যানোপার্টিকলের মাধ্যমে মুরগি ও অন্যান্য পশুপালন ক্ষেত্রে নিরাপদ বিকল্প নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

Leave a comment