ভারতের উপরাষ্ট্রপতি: পদ, ক্ষমতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়া

ভারতের উপরাষ্ট্রপতি: পদ, ক্ষমতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়া

ভারতের সংবিধান অনুসারে, ভারতের উপরাষ্ট্রপতির পদটি রাষ্ট্রপতি পদের পরেই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। উপরাষ্ট্রপতির প্রধান দায়িত্ব হল রাজ্যসভার (সংসদের উচ্চকক্ষ) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।

নয়াদিল্লি: ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে, উপরাষ্ট্রপতির পদটিকে রাষ্ট্রপতির পরেই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য আজ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে, প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় ২০২১ সালের ২১শে জুলাই হঠাৎ পদত্যাগ করে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে, উপরাষ্ট্রপতির পদ এবং তাঁর অধিকার সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, এই পদ গ্রহণ করার সাথে সাথেই উপরাষ্ট্রপতি কোন কোন ক্ষমতা লাভ করেন এবং কখন তাঁদের দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে হয়।

রাজ্যসভার প্রধান হিসেবে উপরাষ্ট্রপতির ক্ষমতা

উপরাষ্ট্রপতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল রাজ্যসভার কার্যক্রমের সভাপতিত্ব করা। এই ভূমিকায়, তাঁর সেই সমস্ত অধিকার থাকে যা লোকসভার অধ্যক্ষের থাকে। রাজ্যসভার প্রধান হিসেবে উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতাগুলি নিম্নরূপ:

  • কক্ষ পরিচালনার দায়িত্ব: উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার অধিবেশন পরিচালনা করেন, সদস্যদের কথা বলার সুযোগ দেন এবং কক্ষে শৃঙ্খলা বজায় রাখেন।
  • কক্ষের নিয়মকানুন পালন: যদি কোনো সদস্য নিয়ম ভঙ্গ করেন, তাহলে উপরাষ্ট্রপতি তাঁকে সতর্ক করে কক্ষ থেকে বের করে দিতে পারেন।
  • निर्णायक ভোট: সাধারণত, উপরাষ্ট্রপতি ভোট দেন না, কিন্তু যদি কোনো বিলে ভোট সমান হয়, তবে তিনি তাঁর निर्णायक ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
  • কক্ষের নিয়মের ব্যাখ্যা: উপরাষ্ট্রপতি কক্ষের নিয়মের ব্যাখ্যা করেন এবং তাঁর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।

রাজ্যসভার প্রধান হিসেবে উপরাষ্ট্রপতির এই ভূমিকা সংসদের কার্যক্রমের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ

উপরাষ্ট্রপতির দ্বৈত দায়িত্ব তখন সামনে আসে যখন তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর কিছু প্রধান দিক নিম্নরূপ:

  • রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি: যদি রাষ্ট্রপতি অসুস্থতা, বিদেশ ভ্রমণ বা অন্য কোনো কারণে তাঁর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তবে উপরাষ্ট্রপতি তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
  • রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে: যদি রাষ্ট্রপতি মারা যান, পদত্যাগ করেন বা অপসারিত হন, ফলে পদ খালি হয়ে যায়, তবে উপরাষ্ট্রপতি অবিলম্বে কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি হয়ে যান। এই দায়িত্ব তিনি ৬ মাস পর্যন্ত পালন করতে পারেন, কারণ এই সময়ের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া জরুরি।
  • সমস্ত ক্ষমতা ও সুবিধা: রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময়, উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির সমস্ত ক্ষমতা, সুবিধা এবং বেতন লাভ করেন। এই সময় তিনি রাজ্যসভার প্রধান হিসেবে কাজ করেন না।

উপরাষ্ট্রপতির এই দায়িত্ব সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং দেশে প্রশাসনিক কার্যাবলী অব্যাহত রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া

ভারতে উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সরাসরি জনগণের দ্বারা হয় না। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ অনুসারে, উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন একটি বিশেষ প্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই প্যানেলে লোকসভা ও রাজ্যসভার সকল সদস্য (নির্বাচিত এবং মনোনীত) অন্তর্ভুক্ত থাকেন। নির্বাচন প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:

  • এই নির্বাচন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
  • প্রার্থীকে নির্বাচকমণ্ডলীর সম্মিলিত সম্মতিতে নির্বাচিত করা হয়।
  • উপরাষ্ট্রপতির মেয়াদ ৫ বছর, তবে তিনি পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ পর্যন্ত তাঁর পদে বহাল থাকতে পারেন।

ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য উপরাষ্ট্রপতির পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যসভার প্রধান হিসেবে তিনি সংসদীয় প্রক্রিয়ার তদারকি করেন, অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদে তাঁর কর্তব্য পালন করেন।

Leave a comment