স্থূলতা কমাতে ব্যায়াম নাকি ওষুধ?‌ কোনটা বেশি জরুরি?

স্থূলতা কমাতে ব্যায়াম নাকি ওষুধ?‌ কোনটা বেশি জরুরি?

উত্তর প্রদেশ সহ একাধিক শহরে API-এর সমীক্ষায় প্রকাশ, স্থূলতায় আক্রান্ত ৫৫% মানুষ ব্যায়াম এবং যোগকে কার্যকরী মনে করেন না এবং ওজন কমানোর জন্য ওষুধের উপর ভরসা রাখেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ দ্রুত কাজ করে, কিন্তু স্থায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সুষম খাদ্য এবং লাইফস্টাইল জরুরি।

Lucknow: উত্তর প্রদেশের কানপুর সহ একাধিক শহরে অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ান অফ ইন্ডিয়া (API)-এর নতুন সমীক্ষায় জানা গেছে যে, স্থূলতায় আক্রান্ত ৫৫% মানুষ ব্যায়াম, যোগ এবং হাঁটাকে সময়ের অপচয় মনে করেন এবং ওষুধকে প্রাথমিক বিকল্প হিসেবে দেখেন। যদিও, ডাঃ অজিত কুমার এবং ডাঃ সুভাষ গিরি বলেছেন যে, ওষুধ শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী ওজন কমানোর জন্য সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল জরুরি, যা স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী এবং নিরাপদভাবে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে ডায়েট বনাম ওষুধ

উত্তর প্রদেশ সহ একাধিক শহরে অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ান অফ ইন্ডিয়া (API)-এর নতুন সমীক্ষায় প্রকাশ, স্থূলতায় আক্রান্ত প্রায় ৫৫% মানুষ ব্যায়াম, যোগ অথবা হাঁটাকে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী মনে করেন না। তাঁদের মতে, ওজন কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল ওষুধ সেবন করা। সমীক্ষা অনুসারে, আধুনিক জীবনযাত্রায় মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রম করার পরিবর্তে দ্রুত ফল পাওয়ার জন্য ওষুধের দিকে ঝুঁকছেন।

রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে গত পাঁচ বছরে ওজন কমানোর ওষুধের ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে। Mounjaro (tirzepatide)-এর মতো অ্যান্টি-ওবেসিটি ওষুধের বিক্রি মে ২০২৫-এ ১৩ কোটি থেকে বেড়ে জুলাই মাসে ৩০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই প্রবণতা এটাই দেখায় যে, মানুষ এখন ওজন কমানোর জন্য ওষুধের উপর বেশি ভরসা করছেন।

ওষুধের সুবিধা এবং অসুবিধা

রাজীব গান্ধী হাসপাতালের (দিল্লি) ডাঃ অজিত কুমার জানান, ওজন কমানোর ওষুধ ক্ষুধা কমায় এবং অল্প সময়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই ওষুধগুলি স্থূলতাজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

তবে, এই ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এর মধ্যে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা এবং চোখের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল রিবাউন্ড ওয়েট গেইন, অর্থাৎ ওষুধ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই ওজন দ্রুত ফিরে আসতে পারে। তাই শুধুমাত্র ওষুধের উপর ভরসা করা দীর্ঘ সময়ের জন্য নিরাপদ নয়।

স্থায়ী ওজন কমানোর জন্য ডায়েট এবং লাইফস্টাইল জরুরি

ডাঃ কুমার এবং ডাঃ সুভাষ গিরি-র মতে, ওজন কমানোর সবচেয়ে নিরাপদ এবং স্থায়ী উপায় হল সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের রিপোর্টও বলছে যে, সঠিক ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন ধীরে ধীরে কমে, কিন্তু তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।

NEJM-এর সমীক্ষায় এটিও দেখা গেছে যে, Semaglutide (2.4 mg, once-weekly) গ্রহণ এবং লাইফস্টাইলকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে ৬৮ সপ্তাহে গড়ে ১৪.৯% ওজন কমানো যেতে পারে। এর মানে হল, ওষুধের সাথে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম মিলিয়ে মিশিয়ে চললে আরও বেশি কার্যকরী এবং নিরাপদ ফল পাওয়া যেতে পারে।

স্থূলতা বিষয়ক জাতীয় পরিসংখ্যান

NFHS-5 অনুসারে, ১৫ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ২৪% মহিলা এবং ২১% পুরুষ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন। দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৫০ সাল নাগাদ ভারতে ২৫ বছরের বেশি বয়সের প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মানুষ স্থূলতার শিকার হতে পারেন। এটি একটি ইঙ্গিত যে দেশে স্থূলতা একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Leave a comment