দুর্গাপুজোয় বাড়তি নিরাপত্তা: শহরে ৯৭টি অস্থায়ী দমকল কেন্দ্র, রাজ্যে প্রায় ১০০ ফায়ার স্টেশন

দুর্গাপুজোয় বাড়তি নিরাপত্তা: শহরে ৯৭টি অস্থায়ী দমকল কেন্দ্র, রাজ্যে প্রায় ১০০ ফায়ার স্টেশন

দুর্গাপুজোয় জোরদার প্রস্তুতি : দুর্গাপুজো মানেই আলোকসজ্জায় মোড়া শহর, মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় আর উৎসবের আবহ। তবে এই ভিড়ই অনেক সময় হয়ে ওঠে বিপদের কারণ। অগ্নিকাণ্ড, ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনা কিংবা প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে যেতে পারে। তাই এই বছরও কলকাতা ও রাজ্যজুড়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে চলেছে দমকল দফতর। শুধু শহরেই বসানো হবে ৯৭টি অস্থায়ী ফায়ার স্টেশন, আর রাজ্যজুড়ে আরও প্রায় ১০০টি। মূল লক্ষ্য— আগুন লাগলে যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, আর দর্শনার্থীরাও থাকেন নিশ্চিন্ত।

দমকল মন্ত্রীর ঘোষণা

নিউ টাউনের একটি বৈঠক শেষে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু সাংবাদিকদের জানান, দুর্গাপুজো শুধু উৎসব নয়, এ সময়কে ঘিরে মানুষের আবেগ, ধর্মীয় অনুভূতি এবং সাংস্কৃতিক গর্বও জড়িয়ে আছে। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনওরকম শিথিলতা চলবে না। প্রতিটি অস্থায়ী ফায়ার স্টেশনে থাকবে প্রশিক্ষিত দমকল কর্মী, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পর্যাপ্ত জলের ট্যাঙ্কার ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম। মন্ত্রীর কথায়, “আমাদের লক্ষ্য একটাই— দুর্ঘটনা হলে প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া।”

কুইক রেসপন্স টিমের ব্যবস্থা

বড় বড় মণ্ডপে এবার বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম (QRT) মোতায়েন করা হবে। তাদের দায়িত্ব হবে আগুন লাগলে বা অন্য কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া। এই টিমের সদস্যরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং তাদের কাছে থাকবে হালকা ওজনের আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। পাশাপাশি দমকল কর্তৃপক্ষ পুজো কমিটিগুলিকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে— প্রতিটি বড় মণ্ডপে পর্যাপ্ত জল, বালতি, স্যান্ড বাক্স এবং অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার রাখতে হবে।

নিয়ম মানছে কি না পুজো কমিটি?

রাজ্যের বহু বড় পুজো কমিটি ইতিমধ্যেই দমকলের শর্ত মেনে কাজ শুরু করেছে। তবে দফতর আশঙ্কা করছে, ছোট মণ্ডপগুলিতে শিথিলতা থাকতে পারে। তাই শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে দমকল দফতরের একাধিক টিম রাজ্যের বিভিন্ন মণ্ডপে পরিদর্শনে নামবে। নিয়ম মেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে পুজো কমিটিগুলিকে কড়া সতর্কবার্তা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে অনুমোদন বাতিলও করা হতে পারে।

সচেতনতার উপর জোর

দমকল দফতর মনে করছে, শুধু সরকারি প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তাই বড় পুজো মণ্ডপের কাছাকাছি তৈরি করা হবে বিশেষ সচেতনতা কিয়স্ক। সেখানে সাধারণ মানুষকে শেখানো হবে আগুন লাগলে কীভাবে প্রথমে নিজেদের সুরক্ষিত করতে হবে, কীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হবে এবং দমকল আসা পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিলে ক্ষতি কমানো সম্ভব। এ ছাড়াও প্যান্ডেলের ভেতরে মাইক দিয়ে প্রচার চালানো হবে— ধাক্কাধাক্কি না করে কীভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা

শহরের ভিড়ের চাপ সামলাতে পুলিশ ও দমকলের যৌথ পরিকল্পনা থাকবে। বহু জায়গায় তৈরি করা হবে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। কলকাতার প্রধান প্রধান মোড় ও মণ্ডপের কাছে মোতায়েন থাকবে মোবাইল ফায়ার টেন্ডার। যেসব এলাকায় ভিড় বেশি হয়, সেখানে টহলদারি বাড়ানো হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়ও একইভাবে অস্থায়ী স্টেশন বসানো হবে, যাতে দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়।

বিদ্যুৎ সংযোগে বাড়তি নজর

অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম প্রধান কারণ হল বিদ্যুৎ সংযোগের ত্রুটি। তাই এবার বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে যৌথভাবে দমকল পরিদর্শন চালাবে। প্রতিটি বড় মণ্ডপে বৈদ্যুতিক তার, জেনারেটর, আলো বসানোর পদ্ধতি খুঁটিয়ে দেখা হবে। কোনও অনিয়ম ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যুৎ দফতরও আলাদা হেল্পলাইন চালু করবে, যাতে সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ মেরামতির ব্যবস্থা করা যায়।

দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তার নতুন দিশা

শুধু অগ্নিকাণ্ড রোধ নয়, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও থাকবে অস্থায়ী ফায়ার স্টেশনগুলিতে। হালকা অসুস্থতা বা ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা যাবে। প্রতিটি বড় প্যান্ডেলের আশেপাশে থাকবে অ্যাম্বুল্যান্স। পাশাপাশি দমকল, পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে থাকবে সমন্বয়।

দুর্গাপুজোর আনন্দ যাতে কোনও দুর্ঘটনায় মাটি না হয়, সেই লক্ষ্যেই এ বছরের দমকল দফতরের বাড়তি উদ্যোগ। রাজ্যে প্রায় ১০০ অস্থায়ী ফায়ার স্টেশন ও শহরে ৯৭টি কেন্দ্র বসানোয় অনেকটা নিশ্চিন্ত দর্শনার্থীরা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ তখনই সফল হবে যখন পুজো কমিটি ও সাধারণ মানুষও সমান দায়িত্ব নেবেন। দুর্ঘটনা রুখতে সচেতনতা, সতর্কতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ— এ তিনেই ভরসা দিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।

Leave a comment