গৌতম আদানি আইআইএম লখনউ-এর ছাত্রদের বলেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত ২৫,০০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। তিনি তরুণদের গতানুগতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে ঝুঁকি নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার কথা বলেন।
Gautam Adani: দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, লখনউ (IIM Lucknow)-এর ছাত্রদের ভাষণ দেওয়ার সময় একটি সাহসী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত ২৫,০০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং বিশ্বের নতুন শক্তির কেন্দ্রে পরিণত হবে।
এই আলাপচারিতার সময় আদানি শুধু অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নিয়ে কথা বলেননি, বরং তরুণদের এমন একটি মানসিকতা গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন যা গতানুগতিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসে, উদ্ভাবনী হয় এবং ঝুঁকি নেওয়ার সাহসে পরিপূর্ণ থাকে।
ছাত্রদের প্রতি আহ্বান: চিন্তাভাবনাকে সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করুন
গৌতম আদানি ছাত্রদের বলেন যে তারা যেন শুধু বইয়ের তথ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। তিনি বুঝিয়ে বলেন যে আজ ভারতের এমন তরুণদের প্রয়োজন যারা নতুন কিছু ভাবতে পারে এবং ভিন্ন কিছু করার সাহস রাখে।
তিনি বলেন, 'যারা কেবল নিরাপদ পথ বেছে নেয়, তারা এগিয়ে যেতে পারে না। সত্যিকারের উন্নতি তারাই করে যারা ঝুঁকি নেয় এবং নতুন পথ তৈরি করে।' আদানির বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ তাদেরই যারা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সুযোগ খুঁজে নিতে জানে।
ঐতিহ্যগত কাঠামো বনাম উদ্ভাবনী চিন্তা
আদানি ব্যবসায়িক শিক্ষার সময় পড়ানো তত্ত্ব যেমন ডিসি মডেল, পোর্টারের পাঁচটি শক্তি এবং সোয়াট বিশ্লেষণ সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন যে এই কাঠামো সহায়ক হলেও এগুলি অতীতের উপর ভিত্তি করে তৈরি। তিনি বলেন, 'এই মডেলগুলি ঝুঁকি কমানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলি আপনাকে ভবিষ্যৎকে সর্বাধিক করার শিক্ষা দেয় না।'
তিনি ছাত্রদের বলেন যে ভারতের এমন চিত্রশিল্পীর প্রয়োজন নেই যারা শুধু রঙ ভরবে, বরং এমন চিন্তাশীল যুবকের প্রয়োজন যারা নতুন রঙের কল্পনা করতে পারে এবং পুরনো ক্যানভাসে প্রশ্ন তুলতে পারে।
ব্যবসা থেকে বেরিয়ে কল্পনা করার প্রয়োজনীয়তা
গৌতম আদানি তাঁর গ্রুপের বড় প্রকল্পগুলির উল্লেখ করে জানান যে মুন্দ্রা বন্দর, ধারাভি পুনর্নির্মাণ এবং অস্ট্রেলিয়ার খনি প্রকল্প শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং ভবিষ্যৎকে নতুন আকার দেওয়ার দূরদৃষ্টি ছিল। তিনি বলেন, 'যখন আপনি বাজার প্রস্তুত হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে তার আগেই তাতে প্রবেশ করেন, তখনই আপনি ইতিহাস তৈরি করেন।'
ভারতের পরিবর্তনশীল শক্তি: চারটি স্তম্ভ
আদানি তাঁর ভাষণে ভারতের অসাধারণ অগ্রগতির পিছনে চারটি প্রধান শক্তির কথা উল্লেখ করেন:
১. জনসংখ্যাগত সুবিধা
ভারত আজ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তরুণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্মক্ষম জনসংখ্যার দেশ। এক বিলিয়নের বেশি তরুণের শক্তি ভারতের ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় শক্তি।
২. ক্রমবর্ধমান ভোক্তা চাহিদা
ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতা কেবল অভ্যন্তরীণ বাজারকে শক্তিশালী করছে না, বরং ভারতকে বিশ্ব বাজারের কেন্দ্রে পরিণত করছে।
৩. ডিজিটাল পরিকাঠামো
আধার, ইউপিআই, ওএনডিসি-র মতো প্ল্যাটফর্ম ভারতকে একটি ডিজিটাল শক্তিতে রূপান্তরিত করছে। আদানি বলেন, 'এই প্ল্যাটফর্মগুলি উদ্ভাবন, অন্তর্ভুক্তি এবং মাত্রাকে একত্রিত করে একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছে।'
৪. দেশীয় পুঁজির সমর্থন
প্রথমবারের মতো ভারতে ভারতীয় ধারণায় বিনিয়োগ করতে পুঁজি প্রস্তুত। এটি आत्मनिर्भर भारत-এর দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।
ভারত হবে বিশ্ব মাধ্যাকর্ষণের কেন্দ্র
গৌতম আদানি বলেন যে ভারতের উন্নয়ন শুধু বড় বড় সংখ্যার বিষয় নয়, এটি পুরো বিশ্বের দিক পরিবর্তন করে দেবে। তিনি দাবি করেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত ২৫,০০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং সেই সময় বিশ্বের নজর ভারতের দিকে থাকবে।
তাঁর মতে, ভারত শুধু অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে না, উদ্ভাবন (innovation), শিক্ষা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। ভারত বিশ্ব মঞ্চে একটি নতুন পরিচয় তৈরি করবে এবং এর প্রভাব সর্বত্র অনুভূত হবে।