জিনা মিলার: ব্রেক্সিট থেকে কেমব্রিজের চ্যান্সেলর হওয়ার পথে

জিনা মিলার: ব্রেক্সিট থেকে কেমব্রিজের চ্যান্সেলর হওয়ার পথে

জিনা মিলার ব্রেক্সিট নিয়ে সরকারকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর এবার তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী।

Gina Miller: ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসা জিনা মিলার এখন ক্যান্সারের মতো রোগকে হারিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা চ্যান্সেলর হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। তিনি শুধু ব্রিটিশ রাজনীতিকে সাংবিধানিকভাবে চ্যালেঞ্জ করেননি, ব্যক্তিগত সংগ্রামকেও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। জেনে নিন তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণামূলক গল্প, যা তাঁকে সামাজিক পরিবর্তনের প্রতীকে পরিণত করেছে।

ক্যানসার, সহিংসতা এবং আদালতের লড়াই থেকে বেরিয়ে এক নতুন দিকের পথে

জিনা মিলারের নাম ব্রিটেনে সাহস, সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা এবং পরিবর্তনের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। একজন সফল ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী এবং লেখিকা হিসেবে তাঁর পরিচিতি তৈরি হলেও, তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় struggles-এ পরিপূর্ণ।

কে এই Gina Miller?

জিনা মিলারের জন্ম ব্রিটিশ গায়ানাতে। তাঁর বাবা দুদনাথ সিং একটি পেট্রোল পাম্পে অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং একইসঙ্গে নাইট স্কুলে আইনের পড়াশোনা করতেন। পরে তিনি গায়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল হন। জিনা তাঁর বাবাকে নিজের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা মনে করেন।

প্রাথমিক পড়াশোনা ভারতের পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করার পর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন। শিক্ষার প্রতি তাঁর আগ্রহ শুরু থেকেই ছিল, এবং এটাই তাঁর চিন্তাভাবনা ও কাজের শৈলীর ভিত্তি তৈরি করে।

ব্রেক্সিটের সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ থেকে পরিচিতি

জিনা মিলারের পরিচয় একজন সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে পরিবর্তিত হয় যখন তিনি ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। সরকার সংসদের অনুমোদন ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা জিনা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

তিনি আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন যে কোনও বড় সিদ্ধান্তে সংসদের ভূমিকা এবং অনুমোদন বাধ্যতামূলক। আদালত জিনার আবেদনকে সঠিক বলে মনে করে এবং এই রায় ব্রিটেনের সাংবিধানিক রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনে। এর পরে তাঁকে হত্যার হুমকি এবং রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার হতে হয়, কিন্তু তিনি তাঁর বিশ্বাসে অটল ছিলেন।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

২০২৩ সালে যখন জিনা স্তন ক্যান্সারে ভুগছিলেন, তখন তিনি আরও একটি চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব পান। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অধ্যাপক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদের জন্য নির্বাচন লড়বেন কিনা। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন এই পদটি শুধুমাত্র প্রাক্তন ছাত্রদের জন্য, তাই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।

পরে যখন তিনি জানতে পারেন যে প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তখনও তিনি দ্বিধা বোধ করেন। কিন্তু যখন জানতে পারেন যে একজন চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও নীতি নির্ধারণের কাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেন, তখন তিনি চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেন।

প্রথম মহিলা চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনা

যদি জিনা মিলার এই নির্বাচনে জয়ী হন, তবে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম মহিলা চ্যান্সেলর হবেন। এটি শুধু তাঁর জন্য নয়, পুরো ব্রিটেনের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে।

সামাজিক সক্রিয়তা এবং লেখা

জিনা গত তিন দশক ধরে সামাজিক প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত। তিনি সমতা, স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকারের মতো বিষয় নিয়ে लगातार কাজ করছেন। এর পাশাপাশি তিনি একজন লেখিকা এবং তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে লিখেছেন।

জিনা সবসময় বলেন যে শিক্ষা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি মনে করেন যে শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজে স্থায়ী পরিবর্তন আনা সম্ভব। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাঁর যুক্ততাও সেই চিন্তাভাবনারই বিস্তার।

Leave a comment