বুধবার সোনার দাম দিনের শুরুতে শান্ত থাকলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোনার দামে বৃদ্ধি দেখা যায়। ব্যবসার প্রাথমিক ঘন্টায় দামের তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও, দুপুরের পর থেকে দাম বাড়তে শুরু করে। এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা এবং আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সংক্রান্ত অনুমানকে দায়ী করা হচ্ছে।
আমেরিকার ফেড নীতির প্রভাব বাজারের উপর
বিনিয়োগকারীদের নজর এখন আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের দিকে। এই দুই দিনের বৈঠক বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এখান থেকে ভবিষ্যতের সুদের হার সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে অনুমান করা হচ্ছে যে ফেড বর্তমান সুদের হারে কোনো পরিবর্তন করবে না, তবে ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিতে পারে।
ফেডের সম্ভাব্য নীতি বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীরা আপাতত কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এর প্রভাব সোনার দামের উপরও দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন ডলারের স্থিতিশীলতাও সোনাকে প্রভাবিত করে
এদিকে, মঙ্গলবার মার্কিন ডলার সূচক এক মাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর পর স্থিতিশীল হয়েছে। ডলারের গতিবিধি সোনার দামকে প্রভাবিত করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যখন ডলার শক্তিশালী হয়, তখন সোনার চাহিদা কমে যায়, যার ফলে দামের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। কিন্তু যখন ডলার স্থিতিশীল থাকে বা দুর্বল হয়, তখন সোনার বিনিয়োগ বাড়ে।
ট্রাম্পের হুমকি এবং বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বাড়িয়েছে চাপ
মার্কিন রাজনীতিতেও চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে হুমকি দিয়েছেন যে, যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে রাশিয়া কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ১০ দিনের মধ্যে রাশিয়ার উপর নতুন শুল্ক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এই বিবৃতি বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা আবারও বেড়েছে।
আইএমএফ-এর রিপোর্ট অর্থনৈতিক দিকের ইঙ্গিত দেয়
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মঙ্গলবার ২০২৫ এবং ২০২৬ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির বিকাশের হারের পূর্বাভাস সামান্য বাড়িয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মার্কিন শুল্ক নীতির পরিবর্তন এবং শক্তিশালী ভোক্তা ক্রয় বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছে। এই রিপোর্টে বাজার কিছুটা স্বস্তি পেলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা এখনও বজায় রয়েছে।
আমেরিকা-চীনের মধ্যে শুল্ক ইস্যুতে সম্মতি
স্টকহোমে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে দুই দিনের আলোচনার পর ৯০ দিনের শুল্ক যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে সম্মতি হয়েছে। তবে, মার্কিন পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই নেবেন। যদি তিনি ১২ আগস্টের পর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে বাণিজ্যিক পরিবেশ আবার উত্তেজনাকর হতে পারে, যার প্রভাব সোনার দামের উপরও পড়বে।
আজকের সোনা ও রূপার দাম
বুধবার আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ড ৩,৩২৯.১৯ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে। একই সময়ে, COMEX-এ সোনার দাম ০.১৩ শতাংশ বেড়ে ৩,৩২৮.৪০ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে। রূপার ক্ষেত্রে, স্পট সিলভার ৩৮.২০ ডলার প্রতি আউন্সে স্থিতিশীল ছিল, যেখানে COMEX-এ রূপা ০.০৬ শতাংশ বেড়ে ৩৮.৩১ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে।
প্ল্যাটিনামের দাম ০.৪ শতাংশ কমে ১,৩৮৯.২০ ডলারে বন্ধ হয়েছে। প্যালাডিয়ামের দামে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি এবং এটি ১,২৫৮.৭৫ ডলার প্রতি আউন্সে স্থিতিশীল ছিল।
দেশীয় বাজারেও প্রভাব
আন্তর্জাতিক বাজারের এই গতির প্রভাব ভারতের বুলিয়ন বাজারেও পড়েছে। ভারতে বুধবার সোনার দামে সামান্য বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা এবং চেন্নাইয়ের মতো প্রধান শহরগুলোতে সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রাম হিসাবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রূপাতেও প্রায় ১০০ টাকা প্রতি কেজি বৃদ্ধি দেখা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের সতর্ক দৃষ্টি
বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। তারা ফেডারেল রিজার্ভের নীতি, ট্রাম্পের রাশিয়া সম্পর্কিত মন্তব্য এবং আমেরিকা-চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সমীকরণের উপর নজর রাখছেন। সমস্ত ঘটনার সরাসরি প্রভাব সোনার দামের উপর পড়ছে। ফেডের বৈঠকের ফলাফল এবং বিশ্বব্যাপী ঘটনাবলী আগামী দিনে সোনার গতিপথ নির্ধারণ করবে।