এসবিআই ইয়েস ব্যাঙ্কে বিনিয়োগ করে 14% IRR রিটার্ন অর্জন করেছে। এই পদক্ষেপ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য কৌশলগত ছিল। ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং বর্তমানে শেয়ার বিক্রির কোনো পরিকল্পনা নেই।
ব্যবসা সংবাদ: স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সিএস শেঠি জানিয়েছেন যে ইয়েস ব্যাঙ্কে করা বিনিয়োগ থেকে এসবিআই প্রায় 14 শতাংশ ট্যাক্স-বিফোর ইন্টারনাল রেট অফ রিটার্ন (IRR) পেয়েছে। এই রিটার্নটি এমন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে যখন ব্যাঙ্কিং খাতে বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা এবং উন্নতি নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা চলে।
চেয়ারম্যান বলেছেন যে এসবিআই-এর জন্য এই বিনিয়োগ কেবল লাভ অর্জনের উদ্দেশ্যে ছিল না, বরং ইয়েস ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থানকে শক্তিশালী করা এবং তাকে সংকট থেকে বের করে আনাই ছিল প্রাথমিক উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেছেন যে এই পদক্ষেপটি সিস্টেমিক স্টেবিলিটি (Systemic Stability)-এর দৃষ্টিকোণ থেকে নেওয়া হয়েছিল যাতে বেসরকারি ব্যাঙ্কিং খাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।
সংকটের সময়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
কিছু বছর আগে যখন ইয়েস ব্যাঙ্ক আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন বাজারে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা নিয়ে একটি নেতিবাচক পরিবেশ তৈরি হতে শুরু করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং সরকারের পক্ষ থেকে একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা (Reconstruction Plan) তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে এসবিআই একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল।
এসবিআই ইয়েস ব্যাঙ্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বিনিয়োগ করেছিল যাতে ব্যাঙ্কের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন উপলব্ধ হয় এবং তার কার্যক্রম স্থিতিশীল করা যায়। চেয়ারম্যানের মতে, সেই সময়ে উদ্দেশ্য কেবল লাভ ছিল না, বরং একটি বড় বেসরকারি ব্যাঙ্ককে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করা এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বজায় রাখা ছিল। এই পদক্ষেপ দেশের আর্থিক ব্যবস্থার স্বার্থে নেওয়া হয়েছিল।
ইয়েস ব্যাঙ্কের অবস্থার উন্নতি
গত কয়েক বছরে পুনর্গঠন পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার পর ইয়েস ব্যাঙ্কের অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা গেছে। ব্যাঙ্ক তার ব্যালেন্স শীটকে শক্তিশালী করতে, খারাপ ঋণ কমাতে (NPA Reduction), ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং ব্যবসার মডেলে পরিবর্তনের দিকে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।
ব্যাঙ্কের নতুন ব্যবস্থাপনা এবং এসবিআই-এর সমর্থন সম্মিলিতভাবে ব্যাঙ্ককে একটি স্থিতিশীল কার্যপ্রণালীর দিকে ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চেয়ারম্যান বলেছেন যে আজ ইয়েস ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা সেই কঠিন সময়ের তুলনায় অনেক ভালো, এবং ব্যাঙ্ক এখন উন্নতির দিকে এগোচ্ছে।
শেয়ার বিক্রিতে কোনো তাড়াহুড়ো নেই
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছিল যে এসবিআই ইয়েস ব্যাঙ্কে তার প্রায় 10 শতাংশ শেয়ার কখন বিক্রি করবে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান স্পষ্টভাবে বলেছেন যে বর্তমানে শেয়ার বিক্রির কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেছেন যে এই মুহূর্তে এসবিআই-এর উপর শেয়ার রাখা বা বিক্রি করার কোনো চাপ নেই। সিদ্ধান্ত তখনই নেওয়া হবে যখন সময় উপযুক্ত হবে এবং বাজারের পরিস্থিতি অনুকূল থাকবে। এর অর্থ হল এসবিআই এই বিনিয়োগকে আপাতত কৌশলগতভাবে ধরে রাখতে চায়।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা
সম্প্রতি জাপানের ব্যাঙ্কিং ফার্ম SMBC-কে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা ইয়েস ব্যাঙ্কে 24.99 শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অনুমতি এসবিআই সহ অন্যান্য সাতজন প্রধান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে শেয়ার কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে। মে মাসে প্রায় 1.6 বিলিয়ন ডলারে ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রায় 20 শতাংশ শেয়ার কেনার চুক্তি হয়েছিল।
এই চুক্তিটি ভারতের আর্থিক খাতে অন্যতম বৃহত্তম ক্রস বর্ডার মার্জার এবং অধিগ্রহণ (M&A) চুক্তি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। এই বিদেশী বিনিয়োগ ব্যাঙ্কের জন্য নতুন মূলধন, প্রযুক্তি, দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা
6 নভেম্বরের লেনদেনে ইয়েস ব্যাঙ্কের শেয়ার 0.65 শতাংশ কমে 22.86 টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। যদিও শেয়ারগুলিতে সামান্য পতন হয়েছে, তবে বিনিয়োগকারীরা এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক উত্থান-পতন হিসাবে দেখছেন।













