রবিবার সকালটা যেন গোন্ডার রেহরা গ্রামে অন্ধকার হয়ে এল। একটি বোলেরো গাড়ি, যাতে করে মন্দির দর্শনে যাচ্ছিলেন ১৫ জন পুণ্যার্থী, আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় সরযূ খালের জলে। মুহূর্তের মধ্যে গাড়ির ভেতর থেকে শোনা যায় আর্ত চিৎকার। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ১১ জনের, যাঁদের মধ্যে ৯ জন একই পরিবারের সদস্য। এমন হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা গোটা এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে।
যাত্রাপথেই শেষ হল জীবন—পৃথ্বীনাথ মন্দির যাওয়ার পথে বিপর্যয়, গাড়ি উল্টে পড়ল খালে
রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ যাত্রাপথে চলা এই পরিবারটি যাচ্ছিল উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত পৃথ্বীনাথ মন্দিরে। গাড়িটি যথারীতি দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎই কোনো কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। রাস্তা থেকে সোজা গিয়ে গাড়িটি পড়ে যায় খালের গভীর জলে। এক লহমায় উৎসবমুখর যাত্রা রূপ নেয় মৃত্যুমিছিলের। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলে কান্না, চিৎকার আর হাহাকারের আওয়াজে আকাশ-বাতাস কেঁপে ওঠে।
চার শিশু অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও, হারাল প্রিয়জন—ভয়াবহতায় বিধ্বস্ত গোটা পরিবার
মৃতদের মধ্যে চারজনই শিশু, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু অলৌকিকভাবে সেই চার শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। চালকসহ বেঁচে যাওয়া আহতদের স্থানীয় সিএইচসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের চোখের জল আর থামছে না। গোটা এলাকা জুড়ে শুধু একটাই প্রশ্ন—‘একসঙ্গে এতগুলো প্রাণ চলে গেল!’ যাঁরা এখনো হাসপাতালে, তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তাঁরা ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছেন।
পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতা প্রশংসনীয়, স্থানীয়রাও উদ্ধারকাজে পাশে দাঁড়ালেন
দুর্ঘটনার খবর পেতেই ইটিয়াথক থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে একযোগে উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়। গাড়ির কাঁচ ভেঙে ভেতরে আটকে পড়া আহতদের টেনে বের করে আনা হয়। অনেকেই জলে ডুবে ছিলেন, কারও শরীর রক্তাক্ত ছিল। উদ্ধার কাজ ছিল খুবই জটিল, কিন্তু পুলিশ ও গ্রামবাসীদের তৎপরতায় অনেককেই জীবিত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
প্রাণহানির সংখ্যা ১১—যার মধ্যে ৯ জন এক পরিবারের, শোকস্তব্ধ গোন্ডা
এই দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে পুলিশ। মৃতদের মধ্যে ৯ জন একই পরিবারের, যা আরও করুণ করে তুলেছে ঘটনাটিকে। তাঁদের সবারই বাড়ি গোন্ডা জেলার কাছাকাছি এলাকায়। পরিবারটি মন্দিরে জল অর্পণ করতে যাচ্ছিল। যারা সকালেও ছিল একসঙ্গে, আজ তাদের অধিকাংশ নেই। এক বৃদ্ধা আত্মীয়কে বলতে শোনা যায়—‘আমরা একসঙ্গে বের হয়েছিলাম, কেউ ফিরল না...।’ এমন এক মানবিক বিপর্যয় গোটা গোন্ডাকে থমকে দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা: নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, দুঃখপ্রকাশ যোগীর
দুর্ঘটনার খবর জানার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গভীর শোকপ্রকাশ করেন। একইসঙ্গে ঘোষণা করেন, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা ও তাদের পরিবারের পাশে প্রশাসনকে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, গোন্ডা জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে সম্ভাব্য সবরকম সহায়তা দিতে। কিন্তু অর্থ কি ফিরিয়ে দিতে পারে হারানো প্রাণ?—এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।
শেষকৃত্যের আগে একটাই প্রশ্ন—কে দেবে এই অপূরণীয় ক্ষতির জবাব?
আজ সেই পরিবারে একসঙ্গে ৯টি দেহ নিয়ে যখন শেষযাত্রা বেরোবে, তখন গোটা গ্রাম ছুটে আসবে কান্নায় ভেঙে পড়া পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। গ্রামে ইতিমধ্যেই নেমে এসেছে অন্ধকার। উৎসবের সকালে এভাবে শ্মশানযাত্রা, এমন দৃশ্য কেউই আগে দেখেনি। বহু মানুষের মুখে শুধু একটাই কথা—‘এ জীবন এত অস্থির, এত অনিরাপদ কেন?’ সড়ক দুর্ঘটনার বলি হওয়া এমন হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আজ এই পরিবার হয়ে উঠেছে এক প্রতীক—অসংরক্ষিত রাস্তাঘাট, গাফিলতি ও নিয়তির ভয়াবহ চিত্র।