যাঁরা কোনওদিনও সিগারেটের ধোঁয়া মুখে নেননি, তাঁরাও আজ আক্রান্ত হচ্ছেন ফুসফুসের ক্যান্সারে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে ক্যান্সারে আক্রান্ত ফুসফুস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই কখনও ধূমপান করেননি। এ তথ্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
ধূমপান শুধু নয়, আরও অনেক ভয়ঙ্কর কারণ রয়েছে ক্যান্সারের পেছনে
ধূমপান দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, একমাত্র ধূমপানই নয়, নানা পরিবেশগত ও জীবনযাত্রাগত উপাদানও আজকের দিনে ক্যান্সারের বড়ো কারণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যারা শহরে থাকেন, তাঁদের জন্য বিপদের মাত্রা আরও অনেকটাই বেশি।
বায়ুদূষণের কবলে শহরবাসী, গোপনে ছড়িয়ে পড়ছে ফুসফুসের মারণরোগ
‘দ্য ল্যান্সেট’ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানায়, বায়ুদূষণ ফুসফুসের ক্যান্সার বৃদ্ধির পিছনে বড় ভূমিকা নিচ্ছে। শহরের বাতাসে থাকা পিএম ২.৫ ধূলিকণা, গাড়ির কালো ধোঁয়া, শিল্পাঞ্চলের দূষণ— সব মিলিয়ে ক্রমাগত বিষাক্ত হচ্ছে শহরাঞ্চলের বায়ু। আর সেই দূষিত বায়ু শরীরের মধ্যে ঢুকে দিচ্ছে মৃত্যুর নিমন্ত্রণ।
কলকাতা-দিল্লি-লখনৌ— শহরের বাতাসই হয়ে উঠছে বিষ!
ভারতের একাধিক শহরের বায়ু মান এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে। বিশেষ করে শীতকালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। বায়ুতে ভেসে থাকা অদৃশ্য ধূলিকণা আমাদের শ্বাসনালীতে ঢুকে ফুসফুসকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে। এই কারণেই ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ।
গৃহস্থের রান্নাঘরও কম দায়ী নয়— LPG নয়, কাঠ ও কয়লার ধোঁয়া ভয়ঙ্কর
গ্রামাঞ্চল বা নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেকেই এখনো কাঠ, কয়লা বা গোবরজাত জ্বালানিতে রান্না করেন। এই ধরনের রান্নাঘরের ধোঁয়াও ফুসফুসের ক্যান্সারের বড় কারণ। একটানা বছর পর বছর এই ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকা মানুষ, বিশেষ করে মহিলারা, ঝুঁকিতে রয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
প্যাসিভ স্মোকিং— অন্যের ধোঁয়ায় নিজের জীবন বিপন্ন
যে মানুষ নিজে ধূমপান করেন না, কিন্তু পারিবারিক বা কর্মস্থলে ধূমপায়ীদের সঙ্গে থাকেন, তাঁরাও প্যাসিভ স্মোকিংয়ের শিকার হন। এই ধোঁয়াও ফুসফুসে জমে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। ফলে পরিবারের কারও ধূমপানের অভ্যাস পুরো পরিবারকে আক্রান্ত করতে পারে।
জিনগত কারণেও হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার, সাবধান থাকা জরুরি
পরিবারের কারও ক্যান্সার থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও সেই প্রবণতা থাকতে পারে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, জেনেটিক মিউটেশন বা DNA-এর ত্রুটি থেকেও ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। ফলে শুধুমাত্র বাহ্যিক কারণ নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাও হতে পারে এই রোগের উৎস।
ফুসফুসের ক্যান্সার ঠেকাতে দরকার সচেতনতা ও পরিবেশ পরিবর্তন
চিকিৎসকরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধে চাই দ্রুত সচেতনতা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দূষণের থেকে বাঁচার চেষ্টা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর এবং ধূমপান বর্জন— সব মিলিয়েই রক্ষা করতে পারে প্রাণ। সরকারের পক্ষ থেকেও চাই দূষণ কমাতে কঠোর পদক্ষেপ।
“ধূমপায়ীদের রোগ” শব্দটা ভুলে যান, আজ সবাই ঝুঁকিতে
ধূমপান না করলেও আপনি নিরাপদ নন। শহরের হাওয়া, রান্নাঘরের ধোঁয়া, কিংবা আপনার সঙ্গীর ধূমপানের অভ্যাস— সব কিছুই বিপদের কারণ হতে পারে। তাই আগেভাগে সতর্ক হোন, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করুন, আর নিজের পরিবেশের যত্ন নিন। জীবন একটাই— বাঁচানো আপনার দায়িত্ব।