ইডি অবৈধ বাজির বিজ্ঞাপনের মামলায় গুগল ও মেটাকে তলব করেছে। ২৮শে জুলাই হাজির না হলে কোম্পানিগুলোর উপর জরিমানা এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এই মামলাটি ডিজিটাল বিজ্ঞাপন নীতি, নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারীর বিশ্বাসের উপর গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
Google or Meta: ভারতে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন শিল্পে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ অনলাইন বেটিং অ্যাপগুলির প্রচারের অভিযোগে গুগল এবং মেটা-র মতো বড় টেক কোম্পানিকে ২৮শে জুলাই হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সংস্থার দাবি, এই কোম্পানিগুলি তাদের প্ল্যাটফর্মে এমন অ্যাপের বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে, যা কেবল অবৈধ বেটিংকে উৎসাহিত করে তাই নয়, কোটি কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গেও জড়িত।
পুরো ঘটনাটি কী?
এই মামলাটি সেই অনলাইন বেটিং অ্যাপগুলির সঙ্গে জড়িত, যেগুলি স্কিল-বেস্ড গেমিংয়ের নামে প্রমোট করা হয়েছিল, কিন্তু আসলে সেগুলি অবৈধ জুয়ার আখড়া হয়ে উঠেছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, মহাদেব বেটিং অ্যাপ এবং ফেয়ারপ্লে আইপিএল-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলি লক্ষ লক্ষ ইউজারকে যুক্ত করেছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এদের প্রচার দ্রুত বাড়ানো হয়েছে।
ইডি-র অভিযোগ:
- গুগল এবং মেটা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এই অ্যাপগুলির বিজ্ঞাপন চালিয়েছে।
- এই অ্যাপগুলির রোজগার হুন্ডি চ্যানেলের মাধ্যমে লুকানো হয়েছে।
- প্ল্যাটফর্মগুলির বিজ্ঞাপন নীতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
আগেও পাঠানো হয়েছিল সমন
ইডি ২১শে জুলাই গুগল এবং মেটাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল, কিন্তু তাদের কোনো প্রতিনিধি দিল্লি অফিসে আসেননি। এই মামলাটি অবৈধ বাজির অ্যাপের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে জড়িত, যার উপর সংস্থা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এখন ইডি পুনরায় দুটি কোম্পানিকে ২৮শে জুলাই হাজির হওয়ার নোটিশ দিয়েছে। যদি তারা এইবারও না আসে, তাহলে সংস্থা কড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে, যার ফলে তাদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
কেন বেড়েছে কোম্পানিগুলোর সমস্যা?
এই কেসে শুধু টেক কোম্পানিই নয়, ২৯ জন সেলিব্রিটি এবং ইনফ্লুয়েন্সারও তদন্তের আওতায় রয়েছেন। এদের মধ্যে:
- অভিনেতা: বিজয় দেবারকোন্ডা, রানা দগ্গুবাতি, প্রকাশ রাজ
- অভিনেত্রী: নিধি আগরওয়াল, প্রণিতা সুভাষ, মঞ্চু লক্ষ্মী
- টিভি শিল্পী এবং ইনফ্লুয়েন্সার: শ্রীমুখী, শ্যামলা, বর্ষিণী সৌন্দর্যরাজন, বসন্তী কৃষ্ণণ, শোভা শেট্টি, অমৃতা চৌধুরী, নয়নী পাভনী, নেহা পাঠান, পান্ডু, পদ্মাবতী, হর্ষা সাই, বাইয়া সানি যাদব প্রমুখ।
এই তারকাদের উপর অভিযোগ, তারা এই অ্যাপগুলির প্রচার করেছেন, যার ফলে এদের ইউজার বেস বেড়েছে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে কেন এই মামলা গুরুতর?
১. বিজ্ঞাপন স্বচ্ছতার উপর প্রশ্ন
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চলা বিজ্ঞাপনগুলির অটোমেশন এবং এআই-ভিত্তিক সুপারিশ ব্যবস্থার উপর এখন প্রশ্ন উঠছে।
২. অ্যালগরিদমের অপব্যবহার
এই প্ল্যাটফর্মগুলির অ্যালগরিদম এই বিজ্ঞাপনগুলিকে লক্ষিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল।
৩. রেগুলেটরি গ্যাপ
ভারতে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন শিল্পের উপর কড়া নজরদারি কাঠামো এখনও তৈরি হচ্ছে।
যদি গুগল এবং মেটা হাজির না হয়, তাহলে?
যদি গুগল এবং মেটা ইডি-র ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির না হয়, তাহলে তাদের উপর ভারী জরিমানা করা হতে পারে। এই জরিমানা কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং তাদের ভারতে কাজ করার প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, তাদের বিরুদ্ধে আইটি আইন এবং মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের অধীনে তদন্ত আরও কঠোর হতে পারে। সরকার ভবিষ্যতে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের জন্য নতুন কঠোর নিয়মও তৈরি করতে পারে।
এর প্রভাব ইউজার এবং ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের উপর
এই মামলার প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও পড়তে পারে। যদি প্ল্যাটফর্মে অবৈধ বিজ্ঞাপন আসতে থাকে, তাহলে ইউজারদের বিশ্বাস কমে যাবে। মানুষ এই ধরনের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে ভয় পাবে, যার ফলে তাদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ডিজিটাল কোম্পানিগুলোকে এখন নিয়ম আরও কঠোরভাবে পালন করতে হবে। সরকারও এই ধরনের মামলার উপর আরও বেশি নজর রাখবে, যার ফলে অনলাইন গেমিং এবং অ্যাপ ইন্ডাস্ট্রিতে কড়াকড়ি বাড়তে পারে।