নাগ পঞ্চমী ২০২৫: এই দিনে কি দান করলে ভাগ্য খুলতে পারে?

নাগ পঞ্চমী ২০২৫: এই দিনে কি দান করলে ভাগ্য খুলতে পারে?

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে নাগ পঞ্চমী উৎসব পালিত হয়। এই উৎসব সর্পকুলের প্রতি সম্মান ও তাদের পূজারূপে পালিত হয়। ২০২৫ সালে নাগ পঞ্চমী ২৯শে জুন পালিত হবে। এই দিনে নাগ দেবতার বিশেষ পূজা করা হয় এবং ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্রত, অনুষ্ঠান ও দান করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে কিছু বিশেষ জিনিস দান করা শুভ বলে মনে করা হয়।

সাপুড়েদের খাদ্য ও বস্ত্র দান করা শুভ

নাগ পঞ্চমীর দিনে যদি আপনার আশেপাশে কোনো সাপুড়েকে দেখতে পান, তবে তাকে খাদ্য দেওয়া, দক্ষিণা দেওয়া এবং বস্ত্র দান করা খুব শুভ বলে মনে করা হয়। এই ঐতিহ্যটি বেশ পুরনো এবং বিশ্বাস করা হয় যে, এর ফলে নাগ দেবতার কৃপা বজায় থাকে। সাপুড়েদের দান করলে জীবনে আসা আকস্মিক সংকট দূর হয় এবং মানসিক শান্তি বজায় থাকে।

গরিব ও অভাবীদের প্রয়োজনীয় জিনিস দান করুন

নাগ পঞ্চমী তে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অভাবীদের সাহায্য করা খুব পূণ্যদায়ক। বিশেষ করে যাদের খাবার বা পরার মতো জিনিস নেই, তাদের এই দিনে খাদ্য, বস্ত্র, অর্থ বা তাদের পছন্দের জিনিস দান করা উত্তম বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে যে ব্যক্তি নিঃস্বার্থভাবে দান করে, তার উপর ভগবান শিব ও নাগ দেবতা উভয়ের কৃপা বজায় থাকে।

ব্রাহ্মণকে ভোজন করালে শুভ ফল পাওয়া যায়

এই দিনে কোনো যোগ্য ব্রাহ্মণকে বাড়িতে ডেকে এনে শ্রদ্ধার সাথে ভোজন করানোও বিশেষ পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, ব্রাহ্মণ ভোজনের পর দান করলে অনেক ধরনের পাপ দূর হয়ে যায় এবং পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে। ব্রাহ্মণ ভোজন করানো ঐতিহ্যের অংশ এবং এই দিনে এটি করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।

শিব মন্দিরে রুপোর নাগ-নাগিনী দান করুন

নাগ পঞ্চমীর দিনে কিছু লোক মন্দিরে গিয়ে রুপো দিয়ে তৈরি নাগ ও নাগিনীর জোড়া নিবেদন করেন। এটি দান করা বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। বিশেষত যাদের কোষ্ঠীতে কালসর্প দোষ রয়েছে, তাদের জন্য এই উপায়টি খুব উপযোগী বলে মনে করা হয়। এমন করলে দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং জীবনে আসা বাধা দূর হয়।

দুধ দান করলে শান্তি ও সন্তোষ পাওয়া যায়

এই দিনে দুধ দান করাও একটি পুরনো ঐতিহ্য। বিশেষ করে নাগ দেবতাকে দুধ অর্পণ করার রীতি প্রচলিত আছে। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে দুধ দান করলে ভয়, অসুরক্ষা ও মনের অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর সাথে, এটিও বিশ্বাস করা হয় যে, এতে মনোবাসনাও পূর্ণ হয়। কিছু লোক সাপের গর্তের কাছে দুধ রাখেন, কিন্তু আজকাল এটি প্রতীকীভাবে পালন করা হয়।

লোহার জিনিস দান করা লাভজনক বলে মনে করা হয়

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, নাগ পঞ্চমীর দিনে লোহার জিনিস যেমন- ছুরি, কড়াই, সরঞ্জাম ইত্যাদি দান করলে জীবনের অনেক জটিল কাজ সহজ হতে পারে। লোহার সম্পর্ক রাহু ও কেতু গ্রহের সাথেও রয়েছে, যা সাপের সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে এই দিনে লোহা দান করলে কোষ্ঠীতে গ্রহদোষও শান্ত হতে পারে। এছাড়াও লবণ দান করাও এই দিনে শুভ বলে মনে করা হয়।

শ্রদ্ধার সাথে দান করলে ফল পাওয়া যায়

নাগ পঞ্চমী কেবল পূজার দিন নয়, বরং এটি শ্রদ্ধা ও সেবারও প্রতীক। যারা এই দিনে পুরো মন দিয়ে দান করেন, তারা অনেক ধরনের শুভ ফল লাভ করেন। বিশেষ বিষয় হল, দান করার জন্য বড় জিনিসের প্রয়োজন হয় না, বরং অনুভূতির শুদ্ধতা ও আন্তরিক শ্রদ্ধা জরুরি। তা দুধ হোক, চাল হোক বা বস্ত্র, যে জিনিসই সঠিক भावना দিয়ে দেওয়া হয়, তার প্রভাব ইতিবাচক হয়।

নাগ পঞ্চমীতে বাড়িতে বিশেষ সজ্জা করা হয়

এই দিনে কিছু লোক বাড়ির দেওয়ালে নাগ দেবতার মূর্তি তৈরি করেন, আবার কিছু লোক পাড়া-মহল্লায় মাটি দিয়ে সাপের মূর্তি তৈরি করে তার পূজা করেন। পূজায় হলুদ, কুমকুম, দুধ, চাল ও ফুল নিবেদন করা হয়। এর পর দানের ঐতিহ্য পালন করা হয়। মহিলারা এই দিনে বিশেষ ব্রত রাখেন এবং নাগ দেবতার কাছে পরিবারের সুখ-শান্তি কামনা করেন।

ধর্মীয় গ্রন্থেও দানের মাহাত্ম্য

পুরাণ ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থে নাগ পঞ্চমীতে দানের মাহাত্ম্য বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। বিশেষ করে স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ আছে যে, এই দিনে দান করলে মানুষকে জীবনে কখনো সাপের ভয় তাড়া করে না এবং অগ্নি ও জল দুর্ঘটনা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

Leave a comment