বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের কার্যকারিতা স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকে। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য ৪০ বছর বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই বয়সে কর্মজীবন, পরিবার এবং সামাজিক দায়িত্বগুলো শীর্ষে থাকে এবং এই দৌড়ঝাঁপের মধ্যে অনেক পুরুষই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেন না। কিন্তু এই অবহেলা অনেক গুরুতর রোগকে আমন্ত্রণ জানায়।
প্রোস্টেট সংক্রান্ত সমস্যা
পুরুষের শরীরে প্রোস্টেট গ্রন্থি প্রজননতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ৪০ বছর বয়সের পর এই গ্রন্থির বৃদ্ধি (Enlargement) বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ে।
লক্ষণ:
- বারবার প্রস্রাব আসা
- প্রস্রাবে জ্বালা
- মূত্রত্যাগে বাধা
- রাতে বারবার টয়লেটে যাওয়া
সমস্যা বাড়লে এটি প্রোস্টেট ক্যান্সারেও পরিবর্তিত হতে পারে, যা পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলির মধ্যে একটি।
করণীয়:
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- PSA (Prostate-Specific Antigen) টেস্ট
- প্রোস্টেট স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সুষম খাদ্য এবং ব্যায়াম
হৃদরোগ (Heart Disease)
মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উচ্চ রক্তচাপ (High BP), উচ্চ কোলেস্টেরল এবং জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস যেমন ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
লক্ষণ:
- বুকে ভারী ভাব বা ব্যথা
- শ্বাস নিতে কষ্ট
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
প্রতিরোধের উপায়:
- ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকা
- নিয়মিত ব্যায়াম
- কম চর্বি এবং কম লবণযুক্ত খাবার
- রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের নিয়মিত পরীক্ষা
ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED)
৪০ বছর বয়সের পর পুরুষদের যৌন জীবন সম্পর্কিত সমস্যাও হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল ইরেকটাইল ডিসফাংশন, অর্থাৎ লিঙ্গোত্থানে সমস্যা।
কারণ:
- মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ
- ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
যদিও এটি প্রাণঘাতী রোগ নয়, তবে এটি মানসিক এবং দাম্পত্য জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
সমাধান:
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
- চিকিৎসা পরামর্শ ও থেরাপি
- যোগ ও ধ্যান
টেস্টোস্টেরনের অভাব
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে যৌন ক্ষমতা, পেশীর শক্তি, এনার্জি লেভেল এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর।
সংকেত:
- ক্লান্তি
- যৌন ইচ্ছার অভাব
- অবসাদ
- পেশীতে দুর্বলতা
করণীয়:
- টেস্টোস্টেরন লেভেল পরীক্ষা করানো
- প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
- প্রয়োজনে হরমোন থেরাপি
ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ
পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা মহিলাদের তুলনায় বেশি। এই কারণে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD)-এর মতো রোগের ঝুঁকি বেশি।
লক্ষণ:
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি
- শ্বাসকষ্ট
- বুকে ব্যথা
- কাশির সাথে রক্ত আসা
প্রতিরোধ:
- অবিলম্বে ধূমপান ত্যাগ করা
- দূষণ থেকে রক্ষা
- বছরে একবার ফুসফুসের পরীক্ষা করানো
- স্বাস্থ্যকর খাবার এবং বিশুদ্ধ বাতাসে ব্যায়াম
মোটা হওয়া এবং মেটাবলিক সিনড্রোম
40 বছর বয়সের পর পুরুষদের মেটাবলিজম রেট (Metabolism Rate) কমে যায়, ফলে ওজন দ্রুত বাড়ে। এর ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
সমাধান:
- নিয়মিত ওজন পরীক্ষা করানো
- চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা
- নিয়মিত হাঁটা, জিম বা যোগাসন করা
- ফাইবারযুক্ত খাবার এবং প্রচুর জল পান করা
40 বছর বয়স কোনও শেষ নয়, বরং একটি নতুন শুরু – যেখানে অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব এবং আত্মবিশ্বাস শীর্ষে থাকে। কিন্তু এই সব তখনই অর্থপূর্ণ যখন শরীর সুস্থ থাকে। তাই পুরুষদের উচিত সময় থাকতে স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম জীবনযাপন এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে শুধু রোগ থেকে বাঁচা যায় না, একটি দীর্ঘ, সুস্থ ও সন্তুষ্ট জীবনও যাপন করা যায়।