হিমাচল প্রদেশে প্রবল বৃষ্টিতে ব্যাপক ধ্বংসলীলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮৫২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৬১৩টি রাস্তা বন্ধ, ১৭৩৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জেলায় স্কুল ও কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
Himachal Rain: হিমাচল প্রদেশে একটানা প্রবল বৃষ্টি জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। গত কয়েকদিনে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় ভূমিধস, বন্যা এবং পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্কুল ও কলেজ বন্ধ, সতর্কতা জারি
রাজ্যের অনেক জেলায় নিরাপত্তার কারণে স্কুল, কলেজ ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া দফতর ১২ই আগস্ট পর্যন্ত হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। প্রশাসন জনসাধারণকে সতর্ক থাকার এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সোলান, শিমলা, মান্ডি, কুল্লু এবং সিরমৌর জেলায়। এই অঞ্চলগুলিতে একটানা বৃষ্টির কারণে রাস্তা বন্ধ, বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ বন্ধ এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চায়বাসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি
সোলান এবং সিরমৌর জেলার সমস্ত স্কুল, কলেজ ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিমলা জেলার ঠিওগ, চৌপাল, রামপুর, সুন্নি, জুব্বল, ডোডরা-কোয়ার এবং কুমারসেন, কুল্লুর আনি ও নির্মন্দ এবং মান্ডি জেলার সুন্দরনগরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
১৮৫২ কোটি টাকার ক্ষতি
রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের মতে, এ পর্যন্ত রাজ্যের মোট ১৮৫২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ত বিভাগের ৯৭১ কোটি টাকা এবং জল শক্তি বিভাগের ৬৩৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভূমিকম্পে ৬১৩টি রাস্তা বন্ধ
ভূমিধস এবং ভারী বৃষ্টির কারণে ৬১৩টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৭৫টি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুল্লুতে ৮৯টি, সিরমৌরে ৩৮টি, সোলানে ২৯টি, কাংড়ায় ২৩টি, শিমলায় ২২টি এবং চাম্বায় ১৮টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে।
ভারী বৃষ্টির পরিমাণ
গত ২৪ ঘণ্টায় সোলের কসৌলিতে সর্বাধিক ১৪৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ধর্মপুরে ১২২ মিমি, গোহরে ১২০ মিমি, মেলরানে ১০৩ মিমি, বග්গিতে ৯৫ মিমি, নাগরোটা সুরিয়ানে ৯৩ মিমি, নৈনাদেবী তে ৮৬ মিমি, সুন্দরনগরে ৮০ মিমি, কাংড়ায় ৭১ মিমি এবং বিলাসপুরে ৭০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
১৭৩৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
রাজ্যে ১৭৩৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৩টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। শুধুমাত্র মান্ডি জেলাতেই ১১০২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩৮৭টি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ২৯৫টি দোকান এবং ১৬১০টি গোশালাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতীয় সড়কেও প্রভাব
সোলানের চাক্কি মোড়ে ভূমিধসের কারণে শিমলা-চণ্ডীগড় জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। মান্ডি জেলায় এনএইচ-3 এবং এনএইচ-21, কুল্লুতে এনএইচ-305 এবং কিন্নৌরে এনএইচ-5 ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ বন্ধ
রাজ্যে ১৪৯১টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে। সোলানে ৭০৯টি, কুল্লুতে ৪৫৭টি এবং মান্ডিতে ৩০১টি ট্রান্সফরমার খারাপ হয়েছে। একইসঙ্গে পানীয় জলের ২৬৫টি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে কাংড়ার ১২০টি এবং মান্ডির ৮৬টি প্রধান।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিধসের ঘটনা
বর্ষাকালে এ পর্যন্ত ৫৫ বার মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, ২৮ বার আকস্মিক বন্যা এবং ৪৮ বার ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। মান্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৬ বার মেঘ ফেটেছে এবং ১২ বার ভূমিধস হয়েছে। লাहुल-স্পিতিতে ৩০টি আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা মেনে চলার, পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার এবং জরুরি অবস্থায় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।