আদালতের দরজায় শেষ হল তিন বছরের লড়াই
হিন্দুস্তান মোটর্স কর্তৃপক্ষের জমি পুনর্দখলের অভিযোগ ধাক্কা খেল সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিল—উত্তরপাড়ার ৩৯৫ একর জমি ফেরত যাবে রাজ্যের হাতেই।শীর্ষ আদালতের রায়ে হিন্দমোটরের ৩৯৫ একর জমির মালিকানা রাজ্যের কাছেই ফিরল। শেষ হল দীর্ঘ আইনি লড়াই।
জোর করে জমি দখলের অভিযোগ খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট
১১ জুলাই, হিন্দমোটর কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জমি জোর করে দখলের অভিযোগ তুলে নিয়ামক সংস্থার কাছে অভিযোগ জানায়। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে সেই অভিযোগ বাতিল করে দিল সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে জানানো হয়েছে—এই অভিযোগের কোনও আইনি ভিত্তি নেই।রাজ্যের জমি পুনর্দখলের প্রক্রিয়া বৈধ বলে ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট, বাতিল করল হিন্দমোটরের অভিযোগ।
কলকাতা হাইকোর্ট ও ল্যান্ড ট্রাইব্যুনাল আগেই দিয়েছিল রাজ্যের পক্ষে রায়
ওয়েস্ট বেঙ্গল এস্টেটস অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, রাজ্য ৬(৩) ধারা মেনে ‘রিজাম্পশন অর্ডার’ জারি করে। এরপর ল্যান্ড ট্রাইব্যুনাল ও কলকাতা হাইকোর্ট উভয়েই তাতে সায় দেয়। সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ই বহাল রাখল।আইনি দিক থেকে রাজ্যের ‘রিজাম্পশন অর্ডার’ বৈধ বলেই টানা তিনটি আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়।
টিটাগড় রেল সিস্টেম পাবে জমির একাংশ, আসছে কোচ কারখানা
সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়—মেট্রো ও বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের কোচ তৈরির জন্য টিটাগড় রেল সিস্টেমকে ৪০ একর জমি দেওয়া হবে। ৯৯ বছরের লিজে এই জমিতে গড়ে উঠবে অত্যাধুনিক কারখানা, যেখানে বিনিয়োগ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।টিটাগড় রেল সংস্থা হিন্দমোটরের জমিতে গড়ে তুলবে কোচ তৈরির কারখানা, যা আনবে বড় মাপের শিল্পায়ন।
তিন বছরের লড়াইয়ের শেষ পর্ব, শুরু ২০২২ সালে
২০২২ সালের ৬ জুলাই রাজ্য প্রথম জমি পুনর্দখলের আগ্রহ প্রকাশ করে। তারপর ৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক অর্ডার জারি হয়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটল।২০২২ থেকে শুরু হওয়া জমি ফেরতের প্রক্রিয়া ২০২৫ সালে চূড়ান্ত পরিণতি পেল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে।
‘শিল্পই পথ’, বলছে শ্রমিক সংগঠন
তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা উত্তম চক্রবর্তী বললেন, "সিপিএম আমলে আন্দোলনে ধ্বংস হয় হিন্দমোটর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে আবারও শিল্প ফিরছে। টিটাগড় ওয়াগনের প্রকল্প সেই আশার সূচনা।তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের দাবি, মমতার হাত ধরেই শিল্পের পথে ফিরছে হিন্দমোটর।
‘শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে হবে’, মনে করিয়ে দিল সংগ্রামী ইউনিয়ন
অন্যদিকে সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদক আভাস মুন্সী বলেন, "জমির মালিকানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—কারখানা বন্ধ হয়নি, সাসপেনশন অব ওয়ার্ক চলছে। তাই বকেয়া মেটাতে উদ্যোগ নিক রাজ্য।আভাস মুন্সীর দাবি, জমি বিতর্কের বাইরে গিয়ে শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোতেই আসল কাজ।
জমি নয়, শিল্পই ভবিষ্যৎ
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শুধু জমির মালিকানা স্থির হয়নি, বরং খুলে গেল নতুন শিল্প সম্ভাবনার দরজা। ৪০০ একরের ঐতিহাসিক কারখানা চত্বরে ফের যদি ইঞ্জিন গর্জন করে, তা হলে শুধু জমি নয়, গড়ে উঠবে আশা—উত্তরপাড়া ও তার শ্রমিকদের।