হাসপাতালের অতিরিক্ত বিলে লাগাম রাজ্যের বড় পদক্ষেপ

হাসপাতালের অতিরিক্ত বিলে লাগাম রাজ্যের বড় পদক্ষেপ

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির বিল সংক্রান্ত অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রোগীর পরিবারের অজান্তে চিকিৎসা খরচ বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতায় লাগাম টানতে এবার নড়েচড়ে বসল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজভবনের অনুমোদন পেল ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট (রেগুলেশন) সংশোধনী বিল, যা কার্যকর হলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নয়া শৃঙ্খলা আনতে চলেছে।

প্যাকেজেই সীমাবদ্ধ থাকবে চিকিৎসা, বাড়তি খরচে লিখিত সম্মতি আবশ্যক

নতুন আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে—হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগীর পরিবারকে নির্দিষ্ট প্যাকেজ জানাবে এবং চিকিৎসা সেই সীমার মধ্যেই রাখতে হবে। যদি বিশেষ কারণে খরচ বাড়ে, তবে লিখিতভাবে জানাতে হবে ও পরিবারের অনুমতি নিতে হবে। ফলে আচমকা বাড়তি বিল ধরিয়ে দেওয়ার সুযোগ অনেকটাই বন্ধ হবে।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও বিল প্রদানের বাধ্যবাধকতা

শুধু অনুমতি নয়, অতিরিক্ত খরচের জন্য হাসপাতালকে দিতে হবে বিস্তারিত বিল ও খরচের যুক্তিসহ ব্যাখ্যা। রাজ্যের সমস্ত নথিভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই আইনের আওতায় আসবে। এতে রোগী–পরিবারের জন্য স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা দুই-ই বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইন ভাঙলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা

আইনের শর্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়েছে সরকার। ছোট অপারেশন থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা—বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অভিযোগ ছিল প্যাকেজের বাইরে গোপনে বিল বাড়ানোর। নতুন আইন কার্যকর হলে এই প্রবণতা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

অভিযোগ—অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা যুক্ত করে বিল ফোলানো

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নথিতে বারবার উঠে এসেছে, মূল রোগ ছাড়াও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বা চিকিৎসা জুড়ে দেওয়া হয় চূড়ান্ত বিলে। এমনকি অপ্রয়োজনীয়ভাবে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে রাখার ঘটনাও ঘটেছে, যা খরচকে অযথা বাড়িয়ে দেয়। এসবেই লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।

হাসপাতালগুলির যুক্তি বনাম সরকারের অবস্থান

বেসরকারি হাসপাতালগুলির দাবি—চিকিৎসার সময় নতুন জটিলতা ধরা পড়লে অতিরিক্ত পরীক্ষা বা ওষুধের প্রয়োজন হয়, যা খরচ বাড়ায়। কিন্তু সরকারের অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট—অতিরিক্ত ব্যয় প্রয়োজন হলেও রোগী বা পরিবারের সম্মতি ছাড়া অর্থ আদায় একেবারেই চলবে না।

রোগীর অধিকারে নতুন সুরক্ষা

সংশোধনী বিল কার্যকর হলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে, রোগী ও তাঁর পরিবারের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মতো অপপ্রবণতার পথ অনেকটাই রুদ্ধ হবে। রাজ্যের আশা, এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষকে যেমন স্বস্তি দেবে, তেমনই চিকিৎসা পরিষেবায় আস্থা ফিরিয়ে আনবে।

Leave a comment