রাখি কতদিন হাতে রাখা উচিত? ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

রাখি কতদিন হাতে রাখা উচিত? ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

रक्षाবন্ধন ভাই-বোনের প্রেম ও সুরক্ষার প্রতীক, যা শ্রাবণ পূর্ণিমার দিনে পালিত হয়। রাখি কতদিন কব্জিতে রাখা উচিত, তা নিয়ে ধর্মীয়, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা রাখি কব্জিতে রাখা উচিত এবং পিতৃপক্ষ শুরু হওয়ার আগে খুলে ফেলা শুভ বলে মনে করা হয়। রাখি খুলে ফেলার পর তার সঠিক পদ্ধতিতে বিসর্জন বা সংরক্ষণ করা আবশ্যক।

রাখি কখন খুলবেন: रक्षाবন্ধন-এর পবিত্র উৎসব ভাই-বোনের অটুট প্রেম ও সুরক্ষার বন্ধনের প্রতীক, যা প্রতি বছর শ্রাবণ পূর্ণিমার দিনে পালিত হয়। ২০২৫ সালে এই উৎসবটি ৯ আগস্ট, শনিবার পালিত হয়েছিল। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের কব্জিতে রাখি বাঁধে, যা কেবল একটি রাখি নয়, সম্পর্কের পবিত্র বন্ধন। রাখি কত দিন কব্জিতে রাখা উচিত এবং কখন খোলা উচিত, এই প্রশ্ন সবার মনে থাকে। ধর্মীয় শাস্ত্র, সামাজিক বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা উঠে এসেছে, যা জানা খুবই জরুরি, যাতে এই পবিত্র উৎসবের সঠিক সম্মান বজায় থাকে।

রাখির ধর্মীয় তাৎপর্য

রাখিকে শুধুমাত্র কাঁচা সুতো হিসেবে না দেখে, এটিকে একটি পবিত্র সূত্র হিসেবে ধরা হয়, যা ভাই-বোনের মধ্যে বিশ্বাস, প্রেম ও সুরক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রাখি বাঁধা এবং কব্জিতে রাখা একটি শুভ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। বোনেরা রাখি বেঁধে তাদের ভাইদের দীর্ঘায়ু ও সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে, অন্যদিকে ভাই তার বোনকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ঐতিহ্যগতভাবে রাখি বাঁধার পরে তা তৎক্ষণাৎ কব্জি থেকে খুলে ফেলা উচিত নয়। এর ধর্মীয় প্রভাব বজায় রাখার জন্য এবং সম্পর্কের পবিত্রতা অটুট রাখার জন্য কিছু সময় ধরে কব্জিতে রাখা প্রয়োজন।

রাখি কত দিন পর্যন্ত কব্জিতে বেঁধে রাখা উচিত?

রাখি কব্জি থেকে খোলার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা তারিখ নেই, তবে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় ও সামাজিক বিশ্বাস এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ দেয়।

ধর্মীয় বিশ্বাস

অধিকাংশ ধর্মীয় ঐতিহ্য মনে করে যে, শ্রাবণ পূর্ণিমার দিনে রাখি বাঁধার পরে ভাদ্রপদ অমাবস্যা পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। এই সময়কাল প্রায় ১৫ দিনের হয়। কিছু স্থানে এই বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, রাখি তিন, সাত বা এগারো দিন পর্যন্ত হাতে রাখা উচিত, এরপর খুলে ফেলা উচিত।

এছাড়াও, অনেকে রাখি জন্মাষ্টমী বা গণেশ চতুর্থীর মতো উৎসব পর্যন্ত হাতে রাখেন। তবে এটিও জরুরি যে, রাখির আধ্যাত্মিক ও আবেগপূর্ণ তাৎপর্য বজায় রাখার জন্য কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা কব্জিতে বাঁধা থাকতে হবে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পিতৃপক্ষ শুরু হওয়ার আগে অবশ্যই রাখি খুলে ফেলতে হবে, কারণ পিতৃপক্ষের সময় ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী কিছু কাজ নিষিদ্ধ থাকে।

বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও রাখি খুব বেশি দিন কব্জিতে রাখা উচিত নয়। রাখি সাধারণত সুতির বা রেশমি সুতো দিয়ে তৈরি হয়, যা নিয়মিত ব্যবহার এবং ঘাম, ধুলো, মাটি ইত্যাদির মতো বাহ্যিক উপাদানের কারণে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে যেতে পারে। এর ফলে ত্বকে সংক্রমণ বা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

তাই, বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ হলো, রাখি যতক্ষণ পর্যন্ত পরিষ্কার ও ভালো অবস্থায় আছে, ততক্ষণই রাখা উচিত। যদি রাখি নোংরা বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তবে স্বাস্থ্যের দিক থেকে কোনো ক্ষতি এড়াতে তা খুলে ফেলাই ভালো।

রাখি সম্পর্কিত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • রাখি বাঁধার পরে তা সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে সামলানো উচিত।
  • রাখির উপরে লেখা শুভেচ্ছা ও রংগুলিরও ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে, তাই রাখির গুণগত মানের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।
  • রাখি বাঁধার পাশাপাশি ভাই-বোনের মধ্যে প্রেম ও বিশ্বাসের এই বন্ধন আরও মজবুত হওয়া উচিত, যা সারা বছর বজায় থাকে।

রাখি খুলে ফেলার পরে কী করবেন?

রাখির গুরুত্ব উপলব্ধি করে, এটি খোলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। না ভেবেচিন্তে রাখি ফেলে দেওয়া বা আবর্জনার মধ্যে ফেলা অশুভ বলে মনে করা হয়। এটিকে একটি পবিত্র বস্তু হিসেবে বিবেচনা করে নিম্নলিখিত উপায়ে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা করা উচিত:

  • জলে বিসর্জন: রাখিকে কোনো নদী, পুকুর বা পরিষ্কার জলের উৎসে বিসর্জন দেওয়া যেতে পারে। এটি একটি ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি, যার মাধ্যমে রাখির পবিত্রতা বজায় থাকে।
  • গাছে বাঁধা: যদি জলে বিসর্জন দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে রাখিকে কোনো গাছের ডালে বেঁধে দেওয়াও উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এর মাধ্যমে রাখির পূণ্যফল গাছের মাধ্যমেও পাওয়া যায়।
  • মাটিতে চাপা দেওয়া: রাখিকে কোনো গাছের গোড়ায় মাটির নিচে চাপা দেওয়াও শুভ বলে মনে করা হয়। এটি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগের প্রতীক এবং রাখির সম্মান বজায় রাখে।

এই সমস্ত পদ্ধতিতেই খেয়াল রাখতে হবে যে, রাখিকে যেন কোনো অবস্থাতেই যত্রতত্র ফেলা না হয় বা আবর্জনায় না ফেলা হয়, কারণ এটি ঐতিহ্য ও সম্মানের পরিপন্থী।

Leave a comment