পুতিন ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান বা বৃদ্ধির পথ নির্ধারণ করবে। উভয়ের প্রস্তাব ও শর্তাবলী বিশ্ব নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে। যুদ্ধবিরতি কঠিন দেখাচ্ছে।
Russia-Ukraine War: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এখন বিশ্বের নজর একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাক্ষাতের দিকে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনা শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রভাব পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও পড়বে। এই বৈঠকে পুতিনের শর্ত এবং ট্রাম্পের পদক্ষেপ যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
ট্রাম্পের শান্তির ভূমিকা এবং তার উদ্দেশ্য
ট্রাম্প নিজেকে এই মুহূর্তে শান্তির দূত হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর উদ্দেশ্য দ্বৈত। প্রথমত, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের আশা করছেন, যা তাঁর আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি শক্তিশালী করতে পারে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন নির্বাচনী রাজনীতিতে নিজের প্রভাব আরও দৃঢ় করা। ট্রাম্প এটা দেখাতে চান যে তিনি বিশ্ব সংকট সমাধানে সক্ষম একজন নেতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করাতে পারা তাঁর জন্য একটি বড় সাফল্য হতে পারে।
পুতিনের শর্ত এবং রাশিয়ার দাবি
পুতিনের উদ্দেশ্য কেবল যুদ্ধবিরতি নয়, বরং তিনি রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের সুরক্ষা চান। সেই কারণে তাঁর কিছু বিশেষ শর্ত সামনে আসছে। রাশিয়া চায় যে যুদ্ধে দখল করা অঞ্চলগুলো, যেমন ডোনেটস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন আন্তর্জাতিক স্তরে তার সার্বভৌমত্ব পাক। সেই সঙ্গে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের বিষয়টিকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে, অর্থাৎ NATO-র অংশ হওয়া চলবে না এবং ভারী অস্ত্র সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। এছাড়াও, রাশিয়া চায় তার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হোক। ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষী মানুষদের সাংবিধানিক সুরক্ষা ও স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।
ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্বের উপর প্রভাব
যদি পুতিনের শর্ত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে ট্রাম্পের পদক্ষেপ কঠোর হতে পারে। আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে, বিশেষ করে ব্যাংকিং, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। ইউক্রেনকে উন্নত মানের অস্ত্র ও প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, NATO এবং G7 দেশগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। রাশিয়াকে সমর্থন করা দেশগুলো, যেমন ভারত, ইরান, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার উপরও চাপ বাড়তে পারে।
এই সবকিছুর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। তেল ও গ্যাসের দাম বাড়বে, যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। NATO-র সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন দ্রুত হবে এবং কৌশলগত উত্তেজনা বাড়তে পারে। অন্যদিকে রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে পারে, সাইবার হামলা বাড়াতে পারে এবং চীন, ইরানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের জোটকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
ইউক্রেনের মনোভাব এবং আলোচনার জটিলতা
ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তারা তাদের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না। এতে এটা স্পষ্ট যে শান্তি আলোচনায় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ইউক্রেন তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে পুতিনও পিছপা হওয়ার মেজাজে নেই। এমতাবস্থায় এই আলোচনা সহজ হবে না।
আমেরিকার সামনে দ্বৈত চ্যালেঞ্জ
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে পুতিনের শর্ত নিয়ে তাদের সহযোগী দেশগুলোর কথাও মাথায় রাখতে হবে। ইউরোপীয় দেশগুলো, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশ রাশিয়াকে দখল করা অঞ্চলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ দিতে একেবারেই পছন্দ করবে না। নির্বাচনের বছরে ট্রাম্পের জন্য কড়া মনোভাব দেখানোও জরুরি হবে। সম্ভাবনা রয়েছে যে আমেরিকা কিছু শর্ত আংশিকভাবে গ্রহণ করতে পারে, যেমন ইউক্রেনের NATO সদস্যপদের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সম্মতি পাওয়া কঠিন হবে।