খুনের নাটক নয়, বাস্তবের রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার—স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার ছক ফাঁস চ্যাটেই

খুনের নাটক নয়, বাস্তবের রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার—স্বামীকে সরিয়ে দেওয়ার ছক ফাঁস চ্যাটেই

দিল্লির দ্বারকা এলাকায় ৩৫ বছরের করণ দেবের মৃত্যু প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বলে জানানো হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই পুলিশ বুঝতে পারে, এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। সুস্মিতা দেব ও তাঁর দেওর রাহুল দেব, যিনি আবার প্রেমিক হিসেবেও পরিচিত, পরিকল্পনা করেই করণকে খুন করেছেন। শুরুতে ঘটনাকে দুর্ঘটনার মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা হলেও, সত্যি সামনে আসে মোবাইল চ্যাট ঘেঁটে। সেখানে লেখা রয়েছে, কবে, কীভাবে, কী পরিমাণে ওষুধ খাওয়ানো হবে, কখন শক দেওয়া হবে—সব কিছু।

‘মরছেও না!’—স্ত্রীর চ্যাটে শিউরে ওঠার মতো শব্দ, পরামর্শ দিচ্ছেন প্রেমিক-দেওর

পুলিশের হাতে আসা মোবাইল চ্যাটে সুস্মিতা ও রাহুলের কথোপকথন যেন কোনও ভয়াবহ স্ক্রিপ্ট। সেখানে লেখা রয়েছে:

রাহুল: “বিদ্যুতের শক দাও।”

সুস্মিতা: “দড়ি দিয়ে কীভাবে বেঁধে শক দেব?”

রাহুল: “টেপ দিয়ে বেঁধে দাও।”

এই রকম আরও কথোপকথনে দেখা যায়, কেমন ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করা হচ্ছিল খুন। যেন মানুষ নয়, কোনো ‘টার্গেট’ সরানোর ফর্মুলা চলছে। পাঠ্য বার্তাগুলো এতটাই বিভীষিকাময় যে তদন্তকারীরাও স্তম্ভিত।

ময়নাতদন্ত ঘিরে অস্বাভাবিক তৎপরতা, সন্দেহ বাড়ায় পুলিশের

করণ দেবের মৃত্যুর পর যখন দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর কথা ওঠে, তখনই সুস্মিতা, রাহুল এবং তাঁদের বাবা তা নিয়ে আপত্তি তোলেন। তদন্তকারী অফিসাররা জানান, একাধিকবার তাঁরা চেয়েছিলেন ময়নাতদন্ত না করিয়ে দাহ করার জন্য অনুরোধ করেন। সেখান থেকেই পুলিশের সন্দেহ প্রবল হয় এবং তদন্তের গতিপথ ঘুরে যায়। পরবর্তীতে করণের ভাই কুনাল সুস্মিতার ফোন থেকে চ্যাট ঘেঁটে যে তথ্য পুলিশের হাতে তুলে দেন, তা থেকেই উন্মোচিত হয় হত্যার ভয়াবহ চিত্র।

সম্পত্তি ও সহবাস—এই ছিল মূল লক্ষ্য! সম্পর্কের গোপন কাহিনি ফাঁস জেরায়

তদন্তে উঠে এসেছে, করণের স্ত্রী সুস্মিতা ও দেওর রাহুলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক চলছিল। দু’বছরের এই সম্পর্ক তাঁদের এমন জায়গায় নিয়ে আসে যেখানে করণের উপস্থিতি একমাত্র বাধা। করণকে সরিয়ে দিয়ে তাঁরা শুধু একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন তা নয়, করণের যাবতীয় সম্পত্তি দখল করাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। সম্পত্তির নথিপত্রও ইতিমধ্যে তারা ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেছিল বলে পুলিশের অনুমান।

এখন পুলিশ হেফাজতে প্রেমিক যুগল, তদন্ত চলছে আরও গভীরভাবে

সুস্মিতা দেব ও রাহুল দেব বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের জেরা করা হচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, এই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত ছিল কিনা। এমনকি করণের মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে ঘরে কে কে ছিল, কী কী ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল, বিদ্যুতের সংযোগ কীভাবে দেওয়া হয়েছিল—সব খুঁটিনাটি তদন্তের আওতায়। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “চ্যাট বার্তাগুলো এতটাই স্পষ্ট, আলাদা করে কিছু বোঝানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমরা চাই, আদালতে যেন একটিও ফাঁক না থাকে।

Leave a comment