আয়কর বিল ২০২৫: নতুন নিয়মে কোম্পানি ও করদাতাদের জন্য বড় পরিবর্তন

আয়কর বিল ২০২৫: নতুন নিয়মে কোম্পানি ও করদাতাদের জন্য বড় পরিবর্তন

সরকার আয়কর সংক্রান্ত পুরনো নিয়মগুলি বাতিল করে একটি নতুন আইন আনতে চলেছে। এই আইনটির নাম দেওয়া হয়েছে ইনকাম ট্যাক্স বিল ২০২৫, যা সংসদের বাদল অধিবেশনে পেশ করা হবে। এই বিলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধাটি পাবে কোম্পানিগুলি।

সেকশন 80M-এর প্রত্যাবর্তন

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সেকশন 80M-কে পুনরায় ট্যাক্স আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে এবং সরকার এতে সম্মতি দিয়েছে। এই বিধানটি কোম্পানিগুলিকে অন্য কোনও কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড আয়ের উপর কর ছাড় দেয়। এর ফলে নিশ্চিত করা হয় যে একই আয়ের উপর দুবার কর না লাগে।

বিলের ভাষাকে সহজ করা হয়েছে

এই বিলে প্রযুক্তিগত শব্দ এবং জটিল ভাষা পরিহার করে সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় লেখা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল করদাতাদের নিয়ম বুঝতে যেন কোনও অসুবিধা না হয়। তবে, নিয়মের মূল কাঠামোতে বড় কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।

কর্পোরেট জগত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে

সেকশন 80M না থাকার কারণে কোম্পানিগুলিকে আন্তঃ-কর্পোরেট ডিভিডেন্ডের উপর দ্বিগুণ ট্যাক্স দিতে হত। এর প্রভাব বিশেষভাবে সেই কোম্পানিগুলির উপর পড়ত, যাদের কাঠামো মাল্টি-লেয়ার বিশিষ্ট অর্থাৎ একটির ভিতরে অন্যটি এবং তারপর তৃতীয় কোম্পানি। এখন যেহেতু এই বিধানটি পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তাই কোম্পানিগুলির উপর ট্যাক্সের বোঝা অনেকটা কমবে।

তল্লাশি ও বাজেয়াপ্তকরণ নিয়েও সংশোধন

বিলে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে তল্লাশি ও বাজেয়াপ্তকরণ অর্থাৎ সার্চ ও সিজার সংক্রান্ত নিয়মগুলি নিয়ে। আগে একটি বিধান ছিল যে, যদি কোনও কোম্পানি কোনও প্রকার ট্যাক্স ছাড় বা ইনসেনটিভ না নেয়, তবে তারা কেবল ২২ শতাংশ ট্যাক্স দিতে পারবে। কিন্তু নতুন বিলে এই বিধানটি বাতিল করা হয়েছিল। এতে কোম্পানিগুলির মধ্যে এই ভয় ছিল যে, এখন এই ছাড় পাওয়া যাবে না। কমিটি এই বিধানটিকেও পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে এবং সরকার তা মেনে নিয়েছে।

ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

কমিটির সামনে যখন ট্যাক্স বিশেষজ্ঞ এবং শিল্প জগতের লোকেরা আসেন, তখন তারা ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলেন। তাদের বক্তব্য ছিল যে, এতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং করদাতার কথা শোনা হয় না। এছাড়াও তারা এও বলেন যে, ট্যাক্স কাটার হারগুলিকে সীমিত করা উচিত, যাতে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হতে পারে।

বিদেশে যাওয়া কর্মীরা স্বস্তি পাবেন

নতুন বিলে একটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে যে, বিদেশে কাজের জন্য যাওয়া লোকেদের ট্যাক্স রেসিডেন্সি নিয়ে ভাষা স্পষ্ট ছিল না। পুরনো আইনে লেখা ছিল যে, যে লোকেরা রোজগারের উদ্দেশ্যে বিদেশ যান, তাদের ভারতে ট্যাক্স রেসিডেন্ট হিসেবে গণ্য করা হবে না। এই লাইনটি বাদ দেওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। কমিটি সুপারিশ করেছে যে, এই কথাটি পুনরায় যোগ করা হোক যাতে পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে পারে। সরকার এতেও সম্মতি জানিয়েছে।

ছোট পরিবর্তন, বড় প্রভাব

এই নতুন বিলে এমন অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে যা সরাসরি করদাতা এবং কোম্পানিগুলিকে স্বস্তি দেবে। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, গ্র্যাচুইটি এবং বেতনভোগীদের জন্য অন্যান্য ট্যাক্স ছাড়গুলিকে এক জায়গায় এনে সহজ করা হয়েছে।

বিল নিয়ে ৩৬ বার আলোচনা

এই বিল নিয়ে সংসদের কমিটি ৩৬ বার বৈঠক করেছে। মোট ৫৩৬টি নিয়ম পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং প্রায় ২৮৫টি সুপারিশ রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটির উদ্দেশ্য ছিল ট্যাক্স সংক্রান্ত নিয়মগুলি যেন এত স্পষ্ট হয় যে, সাধারণ নাগরিকেরাও তা বুঝতে পারে।

ফেব্রুয়ারিতে পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী

নতুন ইনকাম ট্যাক্স বিল ২০২৫ ফেব্রুয়ারিতে সংসদে পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এর উদ্দেশ্য হল পুরনো ট্যাক্স আইন বাতিল করে একটি নতুন, সরল এবং স্বচ্ছ ট্যাক্স সিস্টেম তৈরি করা। ট্যাক্স চুরি রোধ করার জন্য নিয়মগুলিকে কঠোর করা হয়েছে এবং একই সাথে জরিমানার প্রক্রিয়াটিকেও স্পষ্ট করা হয়েছে।

Leave a comment