ভারত তার নৌ-ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক শক্তি বিবেচনা করে, ভারত আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের দুটি বড় সাবমেরিন চুক্তির চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নয়াদিল্লি: ভারত তার নৌ-শক্তিকে আরও শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনের ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে, ভারত আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের দুটি বড় সাবমেরিন চুক্তির চূড়ান্ত রূপ দিতে চলেছে। এর মধ্যে তিনটি স্কর্পিয়ন-ক্লাস সাবমেরিন এবং ছয়টি ডিজেল-ইলেকট্রিক স্টিলথ সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রথম চুক্তিটি স্কর্পিয়ন-ক্লাস সাবমেরিনগুলির জন্য, যা 'মাজাগাঁও ডক লিমিটেড' (এমডিএল) এবং ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা সংস্থা 'নেভাল গ্রুপ' যৌথভাবে তৈরি করবে।
এই চুক্তিগুলির মাধ্যমে ভারত কেবল তার সামুদ্রিক সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করবে না, বরং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার কৌশলগত অবস্থানকেও আরও গভীর করতে পারবে। 'অপারেশন সিন্ধুর' পর থেকে ভারত দ্রুত তার প্রতিরক্ষা খাতের সম্প্রসারণ করছে এবং এই নতুন সাবমেরিনগুলি শত্রুদের সমুদ্রেও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেওয়ার জন্য ভারতকে প্রস্তুত করবে।
স্কর্পিয়ন-ক্লাস সাবমেরিনের চুক্তি
প্রথম চুক্তিটি তিনটি স্কর্পিয়ন-ক্লাস সাবমেরিনের জন্য। এগুলি মুম্বাই-ভিত্তিক 'মাজাগাঁও ডক লিমিটেড' (এমডিএল) এবং ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা সংস্থা 'নেভাল গ্রুপ'-এর সহযোগিতায় নির্মিত হবে। এই চুক্তির আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৩৬,০০০ কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দুই বছর আগেই এই চুক্তির অনুমোদন দিয়েছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত ও আর্থিক শর্তাবলী নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার কারণে এতে বিলম্ব হয়েছে। এখন এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে এই চুক্তি শীঘ্রই চূড়ান্ত হতে পারে এবং ভারতীয় নৌবাহিনী অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নতুন সাবমেরিন পাবে।
ডিজেল-ইলেকট্রিক স্টিলথ সাবমেরিনের মেগা চুক্তি
দ্বিতীয় এবং বড় চুক্তিটি হবে ছয়টি ডিজেল-ইলেকট্রিক স্টিলথ সাবমেরিনের জন্য। এই চুক্তির আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৬৫,০০০ কোটি টাকা। এই সাবমেরিনগুলির নির্মাণে জার্মানির প্রধান জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা 'থাইসেনক্রুপ মেরিন সিস্টেমস' (টি কে এম এস) এবং ভারতের 'মাজাগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড' অংশীদার হবে।
সূত্র অনুসারে, চুক্তির ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে আলোচনা শীঘ্রই শুরু হবে এবং সম্পূর্ণ চুক্তি চূড়ান্ত করতে ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগতে পারে।
কেন এই পদক্ষেপ জরুরি?
ভারতীয় নৌবাহিনী বর্তমানে প্রায় ১৬টি সাবমেরিন নিয়ে কাজ করছে, যার মধ্যে পারমাণবিক এবং ডিজেল-ইলেকট্রিক উভয়ই রয়েছে। কিন্তু চীনের কাছে এর চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। চীন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়ানোর জন্য ক্রমাগত নৌ-সম্প্রসারণ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সমুদ্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং তার কৌশলগত অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য ভারতের সাবমেরিনের সংখ্যা ও সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন।
ভারত সম্প্রতি 'অপারেশন সিন্ধুর' পর থেকে তার প্রতিরক্ষা খাতের দ্রুত সম্প্রসারণ শুরু করেছে। নৌ-শক্তিতে এই বৃদ্ধি কেবল চীন নয়, অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলিকেও একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে ভারত সমুদ্রে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।