ভারতীয় শেয়ার বাজার বৃহস্পতিবার টানা পঞ্চম দিনের মতো পতনে বন্ধ হয়েছে। শেষ ২০ মিনিটে হঠাৎ ব্যাপক বিক্রির ফলে সেনসেক্স ৫৫৬ পয়েন্ট কমে ৮১,১৬০-এ এবং নিফটি ১৬৬ পয়েন্ট কমে ২৪,৮৯১-এ বন্ধ হয়। এফআইআই-এর বিক্রি, আইটি-অটো সেক্টরের দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক সংকেত বিনিয়োগকারীদের ৬ লাখ কোটি টাকা ডুবিয়ে দিয়েছে।
Share Market Today: ভারতীয় শেয়ার বাজার বৃহস্পতিবার চাপের মুখে ছিল এবং ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে খারাপ সময়ের সম্মুখীন হয়েছে। সেনসেক্স ৫৫৬ পয়েন্ট কমে ৮১,১৬০-এ এবং নিফটি ১৬৬ পয়েন্ট কমে ২৪,৮৯১-এ বন্ধ হয়। এটি টানা পঞ্চম দিন যখন সূচকগুলি লাল নিশানায় (ক্ষতির মুখে) ছিল। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিক্রি, আইটি এবং অটো শেয়ারের দুর্বলতা এবং আমেরিকা থেকে আসা বৈশ্বিক সংকেত বাজারকে নিচের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
২০ মিনিটে কেন পতন ঘটল বাজারের
সকাল থেকেই বাজার পতনের সঙ্গে খুলেছিল কিন্তু দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি সামলানো ছিল। তবে, ট্রেডিংয়ের শেষ ২০ মিনিটে বিনিয়োগকারীদের বিক্রি বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি চাপ দেখা গেছে আইটি এবং অটো সেক্টরে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিক্রিও বেড়ে যায়, যার ফলে বাজার দ্রুত ধসে পড়ে।
ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে খারাপ সময়
বৃহস্পতিবার সেনসেক্স ৫৫৬ পয়েন্ট কমে ৮১,১৬০-এ বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে নিফটি ১৬৬ পয়েন্ট কমে ২৪,৮৯১-এ নেমে এসেছে। এটি টানা পঞ্চম দিন যখন উভয় প্রধান সূচক পতন নিয়ে বন্ধ হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির পর এই প্রথম এত দীর্ঘ সময় ধরে বাজার লাল নিশানায় (ক্ষতির মুখে) ছিল।
৬ লাখ কোটি টাকার মূলধনের ক্ষতি
বাজারের এই পতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওর ওপর বড় প্রভাব পড়েছে। মাত্র এক সেশনেই প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকার বাজার মূলধন বিলীন হয়ে গেছে। ক্রমাগত বিক্রির কারণে ছোট ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বেড়েছে।
ক্ষেত্রীয় কর্মক্ষমতা
বৃহস্পতিবারের লেনদেনে আইটি এবং অটো সেক্টর সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে ছিল। আইটি সূচক টানা পঞ্চম দিনের মতো ভেঙে পড়েছে এবং টিসিএস ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। অটো সেক্টরে টাটা মোটরস দুর্বলতা দেখিয়েছে। রিয়েলটি শেয়ারেও বিক্রি দেখা গেছে যেখানে প্রেস্টিজ এস্টেটস এবং গোদরেজ প্রপার্টিজ শীর্ষ লোকসানে ছিল। অন্যদিকে, মেটাল এবং ডিফেন্স শেয়ার বাজারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
আলোচনায় থাকা শেয়ার
টাটা মোটরসের শেয়ারে জেএলআর সম্পর্কিত সাইবার হামলার খবরের প্রভাব দেখা গেছে এবং এটি ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অন্যদিকে, এইচএএল-এর শেয়ারে ২ শতাংশের উত্থান হয়েছে কারণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ৬২,৩৭০ কোটি টাকার তেজস এমকে-১এ চুক্তি অনুমোদন করেছে। হিন্দ কপারও ৬ শতাংশের বেশি লাফ দিয়েছে কারণ কপারের দাম বহু মাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, পলিক্যাবে ১ শতাংশের বেশি পতন হয়েছে কারণ বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে প্রমোটর গ্রুপ তাদের শেয়ার বিক্রি করেছে।
প্রতিরক্ষা এবং মেটাল সেক্টরের দৃঢ়তা
সরকারের পক্ষ থেকে শিপবিল্ডিং এবং মেরিটাইম ডেভেলপমেন্ট স্কিমগুলিকে অনুমোদন দেওয়ার ফলে প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত সংস্থাগুলির শেয়ারে তেজি দেখা গেছে। মেটাল শেয়ারগুলিও সমর্থন পেয়েছে কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে কপারের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈশ্বিক সংকেতের প্রভাব
আমেরিকা থেকে আসা দুর্বল খবরও ভারতীয় বাজারকে চাপের মুখে রেখেছে। ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর নীতি এবং সেখানকার অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের ধারণার ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ মূলধন তুলে নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিফটির জন্য ২৪,৮০০ থেকে ২৪,৮৮০ স্তরটি স্বল্পমেয়াদী সাপোর্ট। অন্যদিকে, ২৫,২০০ থেকে ২৫,৩০০ স্তরটি একটি শক্তিশালী রেসিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ)। যতক্ষণ না বাজার এই প্রতিরোধকে অতিক্রম করে, ততক্ষণ চাপ বজায় থাকার আশঙ্কা রয়েছে।