মধ্যপ্রদেশে শিল্প বিপ্লব: বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত

মধ্যপ্রদেশে শিল্প বিপ্লব: বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত

মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মোহন যাদব বিধানসভায় রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন এবং বিনিয়োগ প্রসারের ক্ষেত্রে সরকারের কৃতিত্বের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি জানান, মধ্যপ্রদেশ দ্রুত বিনিয়োগের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে এবং রাজ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন পরিচিতি লাভ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, শিল্প বিস্তার, রপ্তানি, কর্মসংস্থান এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

মুখ্য বিষয়:

•    বিগত এক বছরে ৭৭টি শিল্প ইউনিটের উদ্বোধন, ১৩৭৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ, ৪৮০০-র বেশি মানুষের কর্মসংস্থান

•    গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫-এ ৩০.৭৭ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রাপ্ত

•    রাজ্যের মিলেট, মশলা এবং তাঁতের বস্ত্রের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি

শিল্প বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নতুন দিগন্ত

মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মোহন যাদব বিধানসভায় জানান যে, রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিগত ১৮ মাসে বড় অগ্রগতি হয়েছে। ৭৭টি শিল্প ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে যেখানে ১৩৭৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং ৪৮০০-র বেশি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান পেয়েছেন। একই সময়ে, ১৫১টি ইউনিটের ভূমি পূজা সম্পন্ন হয়েছে, যার মাধ্যমে ৭৩৩৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং প্রায় ১৩,৭০০ সম্ভাব্য কর্মসংস্থানের আশা করা হচ্ছে। ৭৮৯টি শিল্প ইউনিটকে ভূমি বরাদ্দের জন্য আগ্রহপত্র জারি করা হয়েছে, যা থেকে আনুমানিক ২৮,৭২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ৬৬,৫৫০-এর বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজ্য সরকার কর্তৃক রাজধানী ভোপালে ২০২৫ সালে আয়োজিত গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিট (GIS) নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, এটি ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামিট, যেখানে ৬৫টি দেশের প্রতিনিধি এবং ২৫,০০০-এর বেশি অংশগ্রহণকারী অংশ নিয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানে ৩০.৭৭ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। GIS-এর পাশাপাশি ৬টি বিভাগীয় সামিট, রিজিওনাল ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভ এবং রোড শো-এর মাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে ২৫৪টি শিল্প ইউনিটকে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে ১,৫২,৫৭৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ১.৮২ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।

খনিজ ও পর্যটন খাতেও রাজ্য সরকার ব্যাপক বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। খনিজ খাতে ৯০৯টি ব্লকের জন্য ৩.২২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। পর্যটন খাতে ৩০৫ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ৬৪,৬৩৫ কোটি টাকার প্রস্তাব পাওয়া গেছে, এবং ৩২৫ কোটি টাকার বেশি এমওইউ সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে IBM, Microsoft, Barclays এবং IISER-এর সাথে অংশীদারিত্বের দিকেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

কৃষি এবং বিশ্ব মঞ্চে রাজ্যের পরিচয়

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মহেশ্বরী এবং চন্দেরী শাড়ি জিআই ট্যাগ পেয়েছে এবং এখন সেগুলি জাপান ও ইউরোপের মতো দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ঝাবুয়া, মান্দসৌর এবং নীচের জৈব মশলা, গম এবং ধনেও ইউরোপীয় বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। মিলেট যেমন কোদো, কুটকি এবং বাজরার চাহিদা বিশ্বব্যাপী দ্রুত বাড়ছে। সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা এখন এই পণ্যগুলিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য এখন কেবল কৃষি এবং খনিজ উৎপাদনে অগ্রণী নয়, প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রধান কেন্দ্রও হয়ে উঠছে। এর ফলে কৃষক ও উৎপাদকরা আরও ভালো দাম পাচ্ছেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি আসছে। রাজ্য সরকার এই লক্ষ্যে ‘মেক ইন মধ্যপ্রদেশ’ অভিযানকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ভাবনাকে রাজ্য স্তরে বাস্তবায়িত করে। আইশার মোটরস এবং ফোর্স মোটরসের মতো ব্র্যান্ডের ট্রাক এবং ট্র্যাক্টর এখন আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় রপ্তানি করা হচ্ছে। একই সময়ে BHEL ভোপাল এবং মান্ডিদীপে নির্মিত ট্রান্সফরমার দেশ-বিদেশের পাওয়ার গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা। এর জন্য বিভিন্ন বিভাগে রিজিওনাল ইন্ডাস্ট্রি কনক্লেভের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে প্রতিটি অঞ্চলের শিল্প সম্ভাবনাকে তুলে ধরা যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেভাবে দেশের প্রতিটি কোণের সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে নজর দেন, তেমনই রাজ্য সরকার মধ্যপ্রদেশের প্রতিটি অঞ্চলের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শিল্প পরিকাঠামো ও শ্রমিক স্বার্থের উপর জোর

রাজ্যে শিল্প পরিকাঠামোকে সুদৃঢ় করতে ২০০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। উজ্জয়নে বিক্রম উদোগপুরী, ধারে পিএম মিত্র টেক্সটাইল পার্ক, মুরেনাতে মেগা লেদার এবং ফুটওয়্যার ক্লাস্টার, মোহসা বাবাইতে রিনিউয়েবল এনার্জি পার্ক, রতলামে মেগা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, সিহোরের আষ্টাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টার, পিথমপুরে মাল্টিমোডাল লজিস্টিকস পার্ক, ইন্দোরে ইকোনমিক করিডোর এবং টেলিকম ম্যানুফ্যাকচারিং জোন-এর মতো প্রকল্পের কাজ দ্রুত চলছে।

মুখ্যমন্ত্রী ডঃ যাদব বলেন, রাজ্যে একটি শক্তিশালী সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনীয় সমস্ত অনুমোদন এবং পারমিট একটি স্থানেই পেয়ে যান। এতে তাদের সময় এবং সম্পদ উভয়ই সাশ্রয় হয়। প্রতিটি জেলায় বিনিয়োগ উৎসাহ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যা স্থানীয় স্তরে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছে।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। হুকুমচাঁদ মিলের শ্রমিকদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য মিলের ক্ষেত্রেও সরকার একই প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রদেশ এখন শুধু বিনিয়োগ আকর্ষণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার দিকেও গুরুত্বের সঙ্গে চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের আটটি প্রধান শহরে ইন্টারেক্টিভ সেশন-এর আয়োজন করা হয়েছে, যাতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ স্থাপন করা যায় এবং মধ্যপ্রদেশের সম্ভাবনাগুলিকে কার্যকরভাবে তুলে ধরা যায়।

Leave a comment