প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং INS উদয়গিরি এবং হিমগিরি নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই স্টিলথ ফ্রিগেটগুলি ৭৫% দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এবং ব্রহ্মোস, বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত। এদের আমেরিকার F-35 এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
F-35: ২৬শে আগস্ট ২০২৫-এ বিশাখাপত্তনমে ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ডে একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং দুটি অত্যাধুনিক স্টিলথ ফ্রিগেট INS উদয়গিরি এবং INS হিমগিরি নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি এই যুদ্ধজাহাজগুলির তুলনা আমেরিকার সুপারসনিক স্টিলথ মাল্টি-রোল ফাইটার জেট F-35-এর সাথে করেন।
স্বদেশী F-35: সমুদ্রে ভারতের শক্তি
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন যে আজ আপনারা স্বদেশী F-35 যুদ্ধজাহাজ চালু করেছেন। তিনি জানান, বিশ্বে একটি দেশের কাছে আকাশে ওড়ার মতো F-35 আছে, কিন্তু ভারত সমুদ্রে ভাসা F-35 তৈরি করেছে। এই মন্তব্যটি ভারতের ক্রমবর্ধমান নৌ-শক্তি এবং দেশীয় প্রতিরক্ষা নির্মাণের সাফল্যকে তুলে ধরে।
F-35-এর সাথে তুলনা এবং প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব
F-35 কে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়। এটি স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত, যা রাডারে ধরা পড়া থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। এর উন্নত এভিওনিক্স, শক্তিশালী অনবোর্ড কম্পিউটিং সিস্টেম এবং সমন্বিত সেন্সর রয়েছে। এটি আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে ভূমি এবং অন্যান্য মিশনে কার্যকরী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন যে INS উদয়গিরি এবং হিমগিরিও একই রকম এবং সমুদ্রের অজেয় রক্ষক হবে।
৭৫% দেশীয় সামগ্রী এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি
এই যুদ্ধজাহাজগুলির ৭৫% অংশ দেশীয় সামগ্রী দিয়ে তৈরি। এটি শত শত ভারতীয় MSME-এর সাহায্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার চাকরিরও সৃষ্টি হয়েছে। এই পদক্ষেপ আত্মনির্ভর ভারত এবং স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার দিকে গুরুত্বপূর্ণ।
উন্নত অস্ত্র এবং সেন্সর সিস্টেম
INS উদয়গিরি এবং হিমগিরিকে অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং সেন্সর সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ-দূরত্বের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, সুপারসনিক ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র, টর্পেডো লঞ্চার, কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম। প্রতিটি ফ্রিগেটে আটটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা ভূমি থেকে ভূমি এবং ভূমি থেকে আকাশে হামলা করতে পারে। বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি हवाई खतरों থেকে রক্ষা করে, বরুণাস্ত্র টর্পেডো ডুবোজাহাজ বিরোধী যুদ্ধের জন্য এবং কবচ চাফ এবং মারীচ সিস্টেম ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করে।
প্রজেক্ট 17A: নীলগিরি ক্লাস ফ্রিগেট
INS উদয়গিরি এবং হিমগিরি প্রজেক্ট 17A-এর অধীনে নির্মিত নীলগিরি-ক্লাস স্টিলথ ফ্রিগেট। এই প্রজেক্টটি প্রজেক্ট 17 (শিवालিক-ক্লাস)-এর উন্নত সংস্করণ। এতে ডিজাইন, স্টিলথ ফিচার, অস্ত্র এবং সেন্সর সিস্টেমের উন্নতি করা হয়েছে। এগুলি ব্লু ওয়াটার অপারেশনের জন্য তৈরি এবং গভীর সমুদ্রে বিপদ মোকাবেলা করতে পারে।
প্রযুক্তিগত বিবরণ এবং গতি
এই জাহাজগুলির ওজন ৬,৭০০ টন এবং দৈর্ঘ্য ১৪৯ মিটার। CODOG (কম্বাইন্ড ডিজেল অ্যান্ড গ্যাস) প্রপালশন সিস্টেমের মাধ্যমে এগুলি ৩০ নট গতিতে চলতে পারে। INS উদয়গিরি মুম্বাইয়ের মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (MDL) তৈরি করেছে, যেখানে INS হিমগিরি কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (GRSE) নির্মাণ করেছে। এটি প্রথমবার যে দুটি আলাদা শিপইয়ার্ডে তৈরি দুটি ফ্রন্টলাইন সারফেস কমব্যাটেন্টকে একসঙ্গে নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নাবিক এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তায় অবদান
এই যুদ্ধজাহাজগুলির অন্তর্ভুক্তির ফলে ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। INS উদয়গিরি এবং হিমগিরি শুধু সমুদ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক শান্তিতেও অবদান রাখবে।
নামের গুরুত্ব
INS উদয়গিরি এবং হিমগিরির নাম পুরনো যুদ্ধজাহাজ থেকে অনুপ্রাণিত। আগে INS উদয়গিরি ১৯৭৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এবং INS হিমগিরি ১৯৭৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরিষেবা দিয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান যে উদয়গিরি সূর্যোদয়ের প্রতীক এবং নতুন শক্তি নিয়ে আসে, যেখানে হিমগিরি হিমালয়ের অটল শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য মাইলফলক
INS উদয়গিরি এবং হিমগিরির অন্তর্ভুক্তকরণ ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। F-35-এর সাথে তুলনা থেকে এটা স্পষ্ট যে ভারত এখন উচ্চ প্রযুক্তি এবং স্বদেশী প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করতে সক্ষম। এই পদক্ষেপ আত্মনির্ভর ভারতের ভিশনকে শক্তিশালী করে এবং নৌবাহিনীর ক্ষমতা বাড়ায়।