২০২৫-এ আইপিএল: ব্র্যান্ড ভ্যালুতে নতুন রেকর্ড

২০২৫-এ আইপিএল: ব্র্যান্ড ভ্যালুতে নতুন রেকর্ড

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এখন কেবল ক্রিকেট লিগ নয়, বরং একটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালে আইপিএল তার ব্র্যান্ড ভ্যালুতে ঐতিহাসিক উল্লম্ফন ঘটিয়েছে, এবং এর পিছনে কেবল খেলার উন্মাদনা নয়, বরং একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক মডেলও রয়েছে যা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।

আইপিএল ব্র্যান্ড ভ্যালু: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), যা ২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল, আজ কেবল একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়, বরং একটি বিশ্বব্যাপী স্পোর্টস ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যেই এই লিগটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর প্রভাব শুধু ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং খেলাধুলা, বিনোদন এবং ব্যবসার জগতেও নিজের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।

২০২১ সাল পর্যন্ত আইপিএলে মোট ৮টি দল খেলত, কিন্তু ২০২২ সিজনে লিগের সম্প্রসারণ করে এতে ২ টি নতুন দল – গুজরাট টাইটান্স এবং লখনউ সুপার জায়ান্টসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার ফলে দলের মোট সংখ্যা ১০-এ পৌঁছেছে।

২০২৫-এ রেকর্ড ভাঙা ব্র্যান্ড ভ্যালু

হুলिহান লকি নামক একটি স্বনামধন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, আইপিএল-এর ব্র্যান্ড ভ্যালু এখন বেড়ে ১৮.৫ বিলিয়ন ডলারে (প্রায় ₹১,৫৮,০০০ কোটি) পৌঁছেছে। এই অঙ্কটি শুধু আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি নয়, বরং বিশ্বের অনেক ছোট দেশের জিডিপি থেকেও বেশি। এই ব্র্যান্ড ভ্যালুতে ১২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই বৃদ্ধি এমন সময়ে এসেছে যখন বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বজায় ছিল।

আরসিবি বাজিমাত, সবচেয়ে দামি ফ্র্যাঞ্চাইজি

আইপিএল এখন এমন একটি মঞ্চে পরিণত হয়েছে যা শুধুমাত্র ক্রিকেট থেকে নয়, বরং বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপ, মিডিয়া স্বত্ব এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা আয় করে। বিসিসিআই (BCCI) ২০২৫ সালে চারটি প্রধান স্পনসর - মাই১১সার্কেল, অ্যাঞ্জেল ওয়ান, রুপে এবং সিইআটি-এর মাধ্যমে ১,৪৮৫ কোটি টাকার বিক্রি রেকর্ড করেছে। এটি গত বছরের তুলনায় ২৫% বেশি, যা থেকে স্পষ্ট হয় যে আইপিএলের বাণিজ্যিক আকর্ষণ বেড়েই চলেছে।

আইপিএল ২০২৫-এ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (আরসিবি) শুধু প্রথমবার টুর্নামেন্ট জেতেনি, বরং ব্র্যান্ড ভ্যালুর দিক থেকেও সব দলকে পিছনে ফেলেছে।

  • আরসিবি-র ব্র্যান্ড ভ্যালু: ₹২,৩০৪ কোটি
  • মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স (MI): ₹২,০৭৩ কোটি
  • চেন্নাই সুপার কিংস (CSK): ₹২,০১৩ কোটি

আরসিবি-র এই উল্লম্ফনও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ আগে এর মূল্য ₹২,০০০ কোটির নিচে ছিল। দলের প্রথম খেতাব, বিরাট কোহলির প্রত্যাবর্তন এবং ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজির কারণে এর বাজার মূল্যে দুর্দান্ত বৃদ্ধি হয়েছে।

পাঞ্জাব কিংস চমক, সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি

ব্র্যান্ড ভ্যালুতে সবচেয়ে বেশি শতাংশ লাভ করেছে পাঞ্জাব কিংস, যার মূল্যে ৩৯.৬ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। যদিও দলটি ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি, তবে দলের পুনর্গঠন, তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এবং বিপণন প্রচারণা তাদের বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বড় সুবিধা এনে দিয়েছে। আইপিএল ২০২৫-এর সাফল্য দেখে টাটা গ্রুপ আইপিএল-এর সঙ্গে তাদের যুক্ততা ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এই চুক্তিটি শুধু লিগের স্থিতিশীলতাকেই নির্দেশ করে না, বরং এটিও ইঙ্গিত দেয় যে ভারতের বৃহত্তম সংস্থাগুলি এই ক্রিকেট লিগকে একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে।

আইপিএল বনাম ছোট দেশের অর্থনীতি

যদি বিশ্বব্যাপী প্রসঙ্গে কথা বলি, তাহলে আইপিএল-এর বর্তমান ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৮.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা অনেক ছোট দেশের বার্ষিক জিডিপি (GDP) থেকে বেশি। উদাহরণস্বরূপ:

  • ফিজির জিডিপি: প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার
  • ভুটানের জিডিপি: প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার
  • মালদ্বীপের জিডিপি: প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ডলার

এই তুলনাটি স্পষ্ট করে যে আইপিএল এখন একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকে বিশ্ব ব্র্যান্ডিং, বিনোদন এবং ব্যবসার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

Leave a comment