ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনেই বলেছেন যে ইরান কখনও আত্মসমর্পণ করবে না। আমেরিকাকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে হামলা হলে তার কড়া জবাব দেওয়া হবে।
Iran-US: ২৬ জুন তারিখে ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতির পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই প্রথমবার প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর ভাষণে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন যে ইরান কোনো অবস্থাতেই আমেরিকা বা অন্য কোনো বিশ্বশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন, ভবিষ্যতে কোনো দেশ যদি ইরানের উপর হামলা করে, তাহলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
"ইরান নতি স্বীকার করবে না"
আয়াতুল্লাহ খামেনেই আমেরিকার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন যে আমেরিকার আসল উদ্দেশ্য হল ইরানের আত্মসমর্পণ করানো। তিনি বলেন, আমেরিকা ইরানের শক্তিকে দুর্বল করতে চায়, কিন্তু ইসলামী প্রজাতন্ত্র কোনো ধরনের চাপ বা আক্রমণের সামনে নতি স্বীকার করবে না।
"ট্রাম্প আমেরিকার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন"
খামেনেই তাঁর বক্তব্যে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে বলেন যে ট্রাম্প এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে আমেরিকা কেবল ইরানের আত্মসমর্পণে সন্তুষ্ট হবে। খামেনেইয়ের মতে, এই বক্তব্য আমেরিকার আসল নীতি এবং অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে, যেখানে তারা কেবল আধিপত্য চায়, কোনো পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সম্মান নয়।
কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা
খামেনেই সম্প্রতি হওয়া সেই হামলাগুলিরও উল্লেখ করেন যা কাতার-এ অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলির উপর চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। তিনি বলেন যে এটি ইরানের প্রতিরক্ষা নীতির অংশ এবং যদি আমেরিকা আবার কোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ইরান পাল্টা জবাব দিতে দেরি করবে না। তিনি স্পষ্ট করেন যে ইরানের শক্তি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং দেশ যেকোনো হামলার মোকাবিলা করার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।
ইরানের ইজরায়েলের উপর "জয়" এর দাবি
তাঁর ভাষণে খামেনেই আরও দাবি করেন যে ইজরায়েলের সঙ্গে হওয়া সাম্প্রতিক সংঘাতে ইরান জয়লাভ করেছে। তিনি বলেন, এটি কেবল একটি সামরিক জয় নয়, বরং এর মাধ্যমে ইরান আমেরিকার গালে "জোরদার চপেটাঘাত" করেছে। ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় খামেনেই বলেন যে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের এই জয় শুধু আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না, বরং আমেরিকা-কে একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেয়।
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে প্রায়ই আন্তর্জাতিক বিতর্ক দেখা যায়। আমেরিকা সহ একাধিক পশ্চিমা দেশ এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু খামেনেই এ বিষয়েও স্পষ্ট করেন যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং এটি কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে না। তিনি বলেন যে পশ্চিমা দেশগুলি ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে ভয় পায় এবং সেকারণেই তারা ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু শক্তির মতো বিষয়গুলি নিয়ে আসে।
আমেরিকার সামরিক নীতির সমালোচনা
খামেনেই আমেরিকার বিদেশ নীতি এবং তার সামরিক কার্যকলাপের উপরও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন যে আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম এশিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছে এবং এই অঞ্চলের দেশগুলিকে অস্থির করার কাজ করেছে। তিনি আরও বলেন যে আমেরিকার নীতিগুলি কেবল নিজেদের স্বার্থ পূরণ করার জন্য তৈরি করা হয় এবং এর উদ্দেশ্য হল আঞ্চলিক দেশগুলিকে নিজেদের মধ্যে লড়িয়ে দেওয়া।