আইভিএফ-এর সফরে পা বাড়ানোর আগে হবু বাবা-মায়েদের কী কী জানা জরুরি

আইভিএফ-এর সফরে পা বাড়ানোর আগে হবু বাবা-মায়েদের কী কী জানা জরুরি

চিকিৎসকের মুখে শোনান হল বাস্তব চিত্র দম্পতির স্বপ্নপূরণে আইভিএফ কখনও রূপ নেয় ভরসার আলোয়, কখনও তৈরি করে নতুন চ্যালেঞ্জের ছায়া

একটি কঠিন সিদ্ধান্ত, কিন্তু কখনও জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে আইভিএফ

বিবাহিত জীবনে যখন সন্তানের আশায় দিন গোনা শুরু হয়, তখন অনেক দম্পতিকে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। 

ডা. মিত্র বলেন, বহু বছর ধরে তিনি বহু দম্পতির চোখে আশা, হতাশা এবং প্রশ্নের মিশেল দেখেছেন। অনেকে মনে করেন আইভিএফ হল গ্যারান্টি—সন্তান হবে ঠিকই। কিন্তু না, এই প্রক্রিয়ার সাফল্য নির্ভর করে রোগীর বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং ফার্টিলিটির উপর। কিছু ক্ষেত্রে একাধিক চক্র লাগে। তাই হতাশা এড়াতে প্রয়োজন বাস্তব প্রত্যাশা ও মানসিক নমনীয়তা।

৩৫ বছরের নীচে মহিলাদের জন্য সাফল্যের হার সবচেয়ে বেশি, বয়স বাড়লে কমে সেই সম্ভাবনা

চিকিৎসকের মতে, ৩৫ বছরের কম বয়সি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি আইভিএফ চক্রে গড় সাফল্যের হার প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ। কিন্তু বয়স বাড়লেই এই হার কমতে থাকে। একাধিক চক্রের প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রতিটি চক্রেই রয়েছে মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জ। ফলে আইভিএফকে একটি “প্রক্রিয়া” হিসেবে দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ, কোনও চমকপ্রদ প্রতিশ্রুতি নয়।

একদিনের কাজ নয় আইভিএফ, প্রয়োজন হয় সময়, ধৈর্য ও সঠিক পরিকল্পনার

আইভিএফ মানে কিন্তু একবার হাসপাতালে গিয়ে ফিরলেই কাজ শেষ নয়। ওভারিয়ান স্টিম্যুলেশন, ডিম্বাণু সংগ্রহ, ভ্রূণ প্রতিস্থাপন—এই প্রতিটি ধাপে সময় লাগে। এক একটি সাইকেল সাধারণত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় নেয়। তাছাড়া প্রাথমিক পরীক্ষা যেমন হরমোন প্রোফাইলিং, স্পার্ম অ্যানালিসিস, আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান—এসবেও সময় দিতে হয়।

এম্ব্রায়ো ফ্রিজিং বা জেনেটিক টেস্টের প্রয়োজন পড়লে সময় আরও বাড়তে পারে

আইভিএফ সাইকেলের মধ্যে যদি জেনেটিক টেস্টিং বা এম্ব্রায়ো ফ্রিজিং দরকার হয়, তাহলে চিকিৎসার সময়সীমা আরও দীর্ঘ হতে পারে। তাই পেশাগত জীবন, ব্যক্তিগত পরিকল্পনা, এমনকি ট্র্যাভেল প্ল্যানও আইভিএফের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাজাতে হবে। চিকিৎসা, মানসিক এবং আর্থিক প্রস্তুতি একত্রে না থাকলে সফলতা পাওয়া কঠিন।

খরচ এক বড় প্রশ্ন, কারণ একাধিক পর্যায়ের জন্য লাগে অনেক টাকা

ভারতে একটি সাধারণ আইভিএফ সাইকেলের খরচ ১.২ লক্ষ থেকে ২.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে। তবে এতে ধরা থাকে না ওষুধ, এম্ব্রায়ো ফ্রিজিং, পিজিটি-র মতো অতিরিক্ত খরচ। এই সমস্ত খরচ গুনতে গুনতেই অনেকে আর্থিক চাপে পড়েন। তাই এই চিকিৎসা শুরুর আগে আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে পরিপূর্ণ ধারণা থাকা আবশ্যক।

 

ক্লিনিক প্যাকেজ মানেই সস্তা নয়, সব পয়েন্ট ভালো করে যাচাই করুন

অনেক ক্লিনিক বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে, যেখানে কিছু পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে আবার কিছু নয়। তাই পরিষ্কার ধারণা নেওয়া দরকার—কোন পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত, কোনটা নয়। যাঁরা ছোট শহর থেকে আসেন, তাঁদের জন্য যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচও একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।

শুধু শারীরিক নয়, আইভিএফ মানসিক দিক থেকেও কষ্টকর হতে পারে

আইভিএফ-এর সময় হরমোন ইনজেকশন এবং ওষুধের কারণে অনেক মহিলার মুড স্যুইং, অবসাদ কিংবা উত্তেজনার মতো মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের পর প্রেগন্যান্সি টেস্টের ফলের জন্য অপেক্ষা—এই সময়টাও আবেগঘন ও মানসিকভাবে টানটান।

কাউন্সেলিং জরুরি, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে পেশাদার সাপোর্ট

আইভিএফ চক্র ব্যর্থ হলে মানসিক ধাক্কা অনেক গভীর হতে পারে। তাই ডা. মিত্রর পরামর্শ—কাউন্সেলিং এবং সাপোর্ট গ্রুপের সাহায্য নেওয়া উচিত। যেসব ক্লিনিকে মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল ও কাউন্সেলিং সুবিধা আছে, সেখানকার রোগীদের অভিজ্ঞতা অনেক মসৃণ হয়।

সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা ও চিকিৎসকের কাছে স্পষ্ট প্রশ্ন করাই সঠিক পথ

দাম্পত্য জীবনে এই যাত্রা শুরুর আগে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা দরকার। পাশাপাশি চিকিৎসকের সাথেও স্বচ্ছ আলোচনা করতে হবে। প্রোটোকল, রিস্ক, বিকল্প ব্যবস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব—সব বিষয়ে প্রশ্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন করতেই হবে, কারণ এটি ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞানের সহায়তায় স্বপ্নপূরণের যাত্রা, দরকার শুধু সঠিক মনোভাব ও প্রস্তুতি

আইভিএফ কেবলমাত্র সন্তানের জন্ম নয়, এটি জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই যাত্রায় ভরসা রাখতে হবে বিজ্ঞানের উপর, গ্রহণ করতে হবে বাস্তবতা এবং বিশ্বাস রাখতে হবে সম্ভাবনার উপর। ডা. মিত্র বলেন, “আমার কাজ কেবল প্রেসক্রিপশন দেওয়া নয়, বরং একজন সহযাত্রী হয়ে রোগীর প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থাকা।

Leave a comment