বোম্বে হাইকোর্ট এমসিএ-এর আসন্ন নির্বাচন নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ জারি করেছে। আদালত ৪ নভেম্বরের নির্দেশনায় জানিয়েছে যে, ১২ নভেম্বরে প্রস্তাবিত নির্বাচনের আগে মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের পর প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার ওপর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করা হচ্ছে।
বোম্বে হাইকোর্ট: মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (MCA)-এর আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বোম্বে হাইকোর্ট একটি বড় আদেশ জারি করেছে। আদালত মঙ্গলবার নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আদালত স্পষ্ট করেছে যে, নির্বাচন কর্মকর্তা (Election Officer) প্রথমে সমস্ত আপত্তির উপর “বিস্তারিত এবং যুক্তিযুক্ত আদেশ” পাস করবেন, এর পরেই প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা যাবে।
এই আদেশটি বিচারপতি রিয়াজ ছাগলা এবং ফারহান দুবাশের ডিভিশন বেঞ্চ জারি করেছে। আদালত বলেছে যে, এমসিএ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যখন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাটি কী
মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ১২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচনসূচি অনুযায়ী, ৫ থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থীরা তাদের নাম প্রত্যাহার করতে পারতেন, আর ৫ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কিছু সদস্য আপত্তি জানিয়েছিলেন, যাদের বক্তব্য ছিল যে তাদের আপত্তির উপর নির্বাচন কর্মকর্তা কোনো যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত (Reasoned Order) দেননি।
আবেদনকারীরা জানিয়েছেন যে, তারা ২০ অক্টোবর আপত্তি দায়ের করেছিলেন, কিন্তু ২৪ অক্টোবর ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় এগুলির উপর কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এর উপর হাইকোর্ট মনে করেছে যে, নির্বাচন কর্মকর্তার উচিত সমস্ত আপত্তির উপর সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে “কারণসহ আদেশ” দেওয়া।

আদালতের আদেশ এবং প্রভাব
হাইকোর্ট বলেছে যে, যতক্ষণ না এই আপত্তিগুলির উপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে না। আদালত ৭ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে। বেঞ্চ আরও বলেছে যে, “যদি নির্বাচন কর্মসূচির কোনো একটি তারিখে পরিবর্তন আনা হয়, তবে তার প্রভাব পুরো নির্বাচনী ক্যালেন্ডারের উপর পড়বে।” তাই আদালত এই প্রভাবের পর্যালোচনা পরবর্তী শুনানিতে করবে।
এই আদেশের পর এমসিএ-এর নির্বাচনী প্রক্রিয়া আংশিকভাবে স্থগিত হয়ে গেছে, এবং এখন সমস্ত প্রার্থীদের আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এমসিএ-এর নির্বাচনে এবার রাজনীতির প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। সভাপতি পদের জন্য আটজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ডায়ানা এডুলজি, বর্তমান সভাপতি অজিত নায়েক এবং বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, অজিত নায়েক টানা ছয় বছর পদে থাকার পরেও পুনরায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, যখন তার উপর “কুলিং অফ পিরিয়ড” প্রযোজ্য হতে পারে। মনোনয়ন তালিকায় প্রধান রাজনৈতিক নামগুলির মধ্যে রয়েছেন:
- প্রসাদ লাড (বিজেপি এমএলসি)
- মিলিন্দ নারভেকার (শিবসেনা-উদ্ধব গোষ্ঠী, উদ্ধব ঠাকরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী)
- জিতেন্দ্র আওহাদ (রাষ্ট্রবাদী কংগ্রেস পার্টির বিধায়ক)
এছাড়াও বিহার সরনাইক, সুরাজ সামন্ত এবং শাহালম শেখের মতো নামও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে। ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে করেন যে, এমসিএ-এর মতো ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। আদালত তার আদেশে বলেছে যে, ক্রীড়া সংস্থাগুলিতে নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা সর্বাগ্রে হওয়া উচিত। বিচারপতি ছাগলা মন্তব্য করেছেন যে, নির্বাচন কর্মকর্তার নিশ্চিত করা উচিত যাতে কোনো সদস্য নিজেকে “অশ্রুত বা অন্যায়ের শিকার” মনে না করেন।
এই নির্দেশনা ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে সাংবিধানিক মান এবং বিচারিক তদারকির ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে প্রতিফলিত করে। এখন এমসিএ-কে ৭ নভেম্বরের পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তখন আদালত সিদ্ধান্ত নেবে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া পূর্বনির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারে নাকি তাতে সংশোধনের প্রয়োজন।












