জাপানে ইন্টারনেটের গতিতে নতুন রেকর্ড: ১ সেকেন্ডে নেটফ্লিক্স লাইব্রেরি ডাউনলোড!

জাপানে ইন্টারনেটের গতিতে নতুন রেকর্ড: ১ সেকেন্ডে নেটফ্লিক্স লাইব্রেরি ডাউনলোড!

জাপান ইন্টারনেটের গতিতে ইতিহাস গড়ল, ১.০২ পেটাবাইট প্রতি সেকেন্ডের গতিতে এখন এক সেকেন্ডে ডাউনলোড করা যেতে পারে সম্পূর্ণ নেটফ্লিক্স লাইব্রেরি।

নেটফ্লিক্স: আজকের দিনে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ভিডিও কল থেকে সিনেমা দেখা পর্যন্ত, সবকিছুই ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। এমন অবস্থায় যদি কেউ বলে যে আপনি নেটফ্লিক্সের সম্পূর্ণ লাইব্রেরি মাত্র ১ সেকেন্ডে ডাউনলোড করতে পারেন, তাহলে হয়তো আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না। তবে এখন এটি কল্পনা নয়, বরং একটি বৈজ্ঞানিক সত্যতা হয়ে উঠেছে। জাপান ইন্টারনেটের জগতে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে। সেখানকার National Institute of Information and Communications Technology (NICT)-এর বিজ্ঞানীরা ১.০২ পেটাবাইট প্রতি সেকেন্ড (Pbps) -এর রেকর্ড গতির সৃষ্টি করেছে। এই সাফল্য শুধু প্রযুক্তির কেরামতি নয়, ইন্টারনেটের ভবিষ্যতের একটি নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছে।

১ পেটাবাইট প্রতি সেকেন্ড কী? সাধারণ ইন্টারনেট থেকে এই গতি কতটা আলাদা?

আমরা প্রায়শই আমাদের ইন্টারনেটের গতিকে মেগাবিট প্রতি সেকেন্ড (Mbps)-এ পরিমাপ করি। ভারতে গড়ে ৬৪ Mbps গতি পাওয়া যায়, এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে এটি প্রায় ৩০০ Mbps হয়। অন্যদিকে, ১ পেটাবাইট প্রতি সেকেন্ড মানে ১ কোটি গিগাবাইট বা ১ বিলিয়ন মেগাবিট প্রতি সেকেন্ড। অর্থাৎ, জাপানের এই নতুন সাফল্যের সাথে ভারতের ইন্টারনেটের তুলনা করলে, এই গতি কয়েক কোটি গুণ বেশি দ্রুত।

এই প্রযুক্তির পেছনে বিজ্ঞান কী?

NICT-এর বিজ্ঞানীরা ইন্টারনেটের গতিকে এত উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ব্যবহার করেছেন। এই বিশেষ কেবলে ১৯টি কোর (বা চ্যানেল) রয়েছে, যেখানে সাধারণ ফাইবার অপটিক কেবলে কেবল একটি কোর থাকে। প্রতিটি কোর থেকে আলাদা ডেটা স্ট্রিম ট্রান্সফার হয়, যার ফলে একই কেবলে ১৯ গুণ বেশি ডেটা পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আর আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ফাইবার কেবলের আকার আজকের স্ট্যান্ডার্ড কেবলের মতোই - কেবল ০.১২৫ মিমি পুরু। এর মানে হল, বর্তমান অবকাঠামো পরিবর্তন না করেই এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

কেবল তত্ত্ব নয়, বাস্তবেও পরীক্ষা করা হয়েছে

এই রেকর্ডটি শুধুমাত্র ল্যাবে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ১,৮০৮ কিলোমিটার পর্যন্ত সফলভাবে ট্রান্সফার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ৮৬.১ কিলোমিটার লম্বা ১৯টি ভিন্ন সার্কিট তৈরি করেছেন, যেগুলির মাধ্যমে মোট ১৮০টি ডেটা স্ট্রিম একসঙ্গে পাঠানো হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে এই প্রযুক্তি দীর্ঘ দূরত্বেও সমান দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।

এই গতিতে কী কী সম্ভব?

এই সুপার-স্পিড ইন্টারনেটের অনেক অভাবনীয় সুবিধা থাকতে পারে:

  • ৮K ভিডিও বাফারিং ছাড়াই স্ট্রিম করা সম্ভব হবে।
  • সম্পূর্ণ ওয়েবসাইট, যেমন উইকিপিডিয়া, এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে ডাউনলোড করা যেতে পারে।
  • AI মডেলগুলির প্রশিক্ষণ এবং বড় ডেটা ট্রান্সফার এখন চোখের পলকে সম্ভব হবে।
  • গ্লোবাল কোলাবোরেশন, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো প্রযুক্তিগুলিতে বড় পরিবর্তন আসবে।
  • বিজ্ঞান, চিকিৎসা গবেষণা এবং মহাকাশ মিশনে ডেটা ট্রান্সফারের গতি থেকে বড় সুবিধা পাওয়া যাবে।

সাধারণ মানুষও কি এটি ব্যবহার করতে পারবে?

বর্তমানে, এই প্রযুক্তি গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে এবং পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ। তবে যেহেতু এর ভিত্তি বর্তমান কেবলের আকার এবং কাঠামোর উপর নির্ভরশীল, তাই আশা করা হচ্ছে যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি বৃহত্তর আকারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর মানে হল, ভবিষ্যতে সম্ভবত আপনার বাড়িতেও এই দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারে।

ভারতের জন্য এর তাৎপর্য কী হতে পারে?

ভারতের মতো দেশে, যেখানে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা হচ্ছে, সেখানে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করা ইন্টারনেট অবকাঠামোর জন্য গেম-চেঞ্জার হতে পারে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে এখনও গতি খুবই কম, সেখানে এই ধরনের প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাতে পারে।

Leave a comment