অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেশীয় অস্ত্রের শক্তি

অপারেশন সিঁদুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেশীয় অস্ত্রের শক্তি

ভারতের সেনাবাহিনী 'অপারেশন সিঁদুর'-এ দেশীয় অস্ত্রের শক্তি প্রদর্শন করেছে। পিনাকা, আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, এ‌টিএ‌জি কামান এবং ডব্লিউএইচএপি-র মতো অস্ত্র প্রমাণ করেছে যে ভারত দুটি ফ্রন্টের যুদ্ধেও সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।

প্রতিরক্ষা সংবাদ: ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বিগত বছরগুলিতে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী যে কৌশলগত শক্তি দেখিয়েছে, তা কেবল দেশের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হল, ভারত কি একই সাথে দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত? 'অপারেশন সিঁদুর'-এর পর ভারতের দেশীয় অস্ত্রের তালিকা আরও শক্তিশালী হয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের সেই আধুনিক এবং আত্মনির্ভর অস্ত্রগুলির বিষয়ে, যেগুলির আওয়াজ বেইজিং পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে।

মাউন্টেড গান সিস্টেম

এটি ভারতের অত্যাধুনিক ১৫৫মিমি ৫২-ক্যালিবরের কামান, যা যেকোনো স্থানে সহজেই নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, গোলা ছুঁড়বার মাত্র ৮৫ সেকেন্ডের মধ্যে এর অবস্থান পরিবর্তন করা যায়। এর ফলে শত্রুর পক্ষে এটি খুঁজে বের করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এই মাউন্টেড গান সিস্টেমটি ডিআরডিও (DRDO) ডিজাইন ও তৈরি করেছে।

অ্যাডভান্সড টোড আর্টিলারি গান (ATAG)

এ‌টিএ‌জি হল ভারতের নিজস্ব তৈরি আর্টিলারি গান, যার পাল্লা ৪৫ থেকে ৪৮ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি এক মিনিটে ৬টি গোলা ছুঁড়তে সক্ষম। অর্থাৎ, প্রতি দশ সেকেন্ডে একটি নির্ভুল এবং শক্তিশালী আঘাত। এটি বিশেষভাবে দূরবর্তী স্থানে লুকিয়ে থাকা শত্রুকে ধ্বংস করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

আকাশ নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম

আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভারতের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। 'অপারেশন সিঁদুর'-এ এর ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই সিস্টেম ১২০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র ট্র্যাক করে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যেই ধ্বংস করতে পারে। এর বিশেষত্ব হল, যদি প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তাহলে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎক্ষেপিত হয়।

কার্বাইন (CQB)

ডিআরডিও দ্বারা নির্মিত এই হাই-টেক অ্যাসল্ট রাইফেল ৬০ সেকেন্ডে ৬০০ রাউন্ড ফায়ার করতে সক্ষম। এর কার্যকরী পাল্লা ২০০ মিটার। ভারতীয় সেনাবাহিনী ৪.২৪ লক্ষ সি‌কিউবি (CQB) কার্বাইনের অর্ডার দিয়েছে। এই কার্বাইন স্বল্প-পাল্লার যুদ্ধের জন্য আদর্শ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করে।

ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল (WHAP)

এটিকে হুইল্ড আর্মার্ড প্ল্যাটফর্ম (WHAP) বলা হয়। এটি এমন একটি যান যা রাস্তা, কাদা, মরুভূমি এবং এমনকি জলপথেও চলতে পারে। এতে ৬ থেকে ১২ জন সৈন্য একসঙ্গে বসতে পারে। এটি রাসায়নিক, জৈবিক এবং তেজস্ক্রিয় বিপদ সনাক্ত করার ক্ষমতা রাখে। এটি উচ্চ তাপমাত্রাতেও সম্পূর্ণ কার্যকরী থাকে।

আকাশ ও আকাশতীর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা

এই দুটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম 'অপারেশন সিঁদুর'-এ তাদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। আকাশ নেক্সট জেনারেশন সিস্টেম শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে ১২০ কিলোমিটার দূর থেকে ট্র্যাক করতে পারে এবং আকাশে ধ্বংস করতে পারে। এটি বিশ্বের যেকোনো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম।

পিনাকা রকেট সিস্টেম

পিনাকা মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার ভারতের একটি অত্যন্ত কার্যকরী দেশীয় অস্ত্র। এর তিনটি প্রকারভেদ রয়েছে:

  • পিনাকা মার্ক ১: ৩৭.৫ কিলোমিটার পাল্লা সহ আনগাইডেড রকেট।
  • এনহ্যান্সড পিনাকা: ৫০ কিলোমিটার পাল্লা।
  • গাইডেড পিনাকা: ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম গাইডেড রকেট সিস্টেম।

এই সিস্টেমটি মাত্র ৪৮ সেকেন্ডে ১২টি রকেট ছুঁড়তে পারে এবং এক বর্গকিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে পারে। এটি শিবের ধনুকের নামে তৈরি করা হয়েছে এবং এর বিধ্বংসী ক্ষমতা শত্রুকে ভীত করে তোলে।

ভারতের দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধের প্রস্তুতি

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত একই সাথে পাকিস্তান এবং চীনের মতো দুটি কৌশলগত শত্রুর মোকাবিলা করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। একদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধ হয়েছে, অন্যদিকে চীনের কৌশলগত হস্তক্ষেপের যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ভারতের অস্ত্রগুলির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এদের অধিকাংশই দেশীয় এবং ডিআরডিও (DRDO) ও অন্যান্য ভারতীয় সংস্থা দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।

Leave a comment