কিংবদন্তি কান্ট্রি সিঙ্গার জেনি সিলি প্রয়াত: সঙ্গীত জগতে শোকের ছায়া

কিংবদন্তি কান্ট্রি সিঙ্গার জেনি সিলি প্রয়াত: সঙ্গীত জগতে শোকের ছায়া

জেনি সিলি শুধু একজন বিখ্যাত গায়িকাই ছিলেন না, বরং একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শিল্পী ছিলেন। তিনি গান গাওয়ার পাশাপাশি গান লেখা এবং অভিনয়েও নিজের বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছিলেন।

Jeannie Seely Passed Away: বিখ্যাত আমেরিকান কান্ট্রি সিঙ্গার, গীতিকার এবং অভিনেত্রী জেনি সিলি (Jeannie Seely) ৮৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে গোটা বিশ্বের সঙ্গীতপ্রেমী এবং ইন্ডাস্ট্রি শোকস্তব্ধ। ‘ডোন্ট টাচ মি’ (Don't Touch Me) এর মতো কালজয়ী গানের জন্য পরিচিত এই কিংবদন্তি শিল্পী ১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জেনি সিলিকে কান্ট্রি মিউজিকের জগতে তাঁর স্পষ্টবাদিতা, আবেগপূর্ণ গানের ধরণ এবং নারী सशक्तিকরণের প্রতীক হিসেবে মনে করা হত। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর পিআর প্রতিনিধি ডন মারি গ্রাবস, যিনি জানান জেনি অন্ত্রের সংক্রমণে (intestinal infection) মারা গেছেন।

জেনি সিলি: একটি জীবন, যা সঙ্গীতকে উৎসর্গীকৃত ছিল

৬ জুলাই ১৯৪০ সালে টাইটাসভিল, পেনসিলভানিয়াতে জন্ম নেওয়া জেনি সিলির শৈশব সঙ্গীতের ঐতিহ্যের মধ্যে কেটেছিল। তাঁর বাবা ব্যাঞ্জো বাজাতেন এবং মা ছিলেন একজন গায়িকা, যার কারণে সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ তৈরি হয়। তিনি ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কান্ট্রি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন এবং খুব শীঘ্রই নিজের একটি আলাদা পরিচিতি তৈরি করেন। তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল ১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া গান ‘ডোন্ট টাচ মি’ (Don't Touch Me), যা কেবল তাঁকে গ্র্যামি পুরস্কার এনে দেয়নি, সেই সাথে কান্ট্রি মিউজিকের জগতে তাঁর নাম অমর করে দিয়েছে। এই গানটি আজও প্রেম, আত্মসম্মান এবং আবেগপূর্ণ আত্মনির্ভরতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

জেনি সিলি শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি একটি ধারণা এবং আন্দোলনের মতো ছিলেন। তিনি মহিলাদের জন্য মঞ্চে জায়গা তৈরি করা সহজ করেননি, বরং এটিকে প্রয়োজনীয় এবং সম্মানজনক করে তুলেছিলেন। জেনি গ্র্যান্ড ওলে ওপ্রির মতো মঞ্চে মিনিস্কার্ট পরে ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, যেখানে এই ধরনের পোশাকের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাঁর এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র শিরোনাম তৈরি করেনি, বরং মহিলাদের জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথও খুলে দিয়েছিল।

সঙ্গীতের অমূল্য উত্তরাধিকার

জেনি সিলির সঙ্গীত জীবন কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, যেখানে তিনি ‘আই উইল লাভ ইউ মোর’ (I Will Love You More), ‘ক্যান আই স্লিপ ইন ইওর আর্মস?’ (Can I Sleep in Your Arms?) এর মতো গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছিলেন। তাঁর গানের মধ্যে হৃদয়ের সত্যতা, মহিলাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক বার্তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠত। তাঁর শেষ রেকর্ড করা গানটি জুলাই ২০২৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, যা ডটি ওয়েস্টের জনপ্রিয় গান ‘সাফার টাইম’ (Suffer Time) এর একটি সুন্দর কভার ছিল। এই গানেও তাঁর আবেগপূর্ণ গভীরতা এবং অভিজ্ঞতার ঝলক স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

মে ২০২৪-এ জেনি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে তাঁকে পিঠের দুটি জরুরি অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল, এবং এই সময় তিনি ১১ দিন আইসিইউতেও ছিলেন। এছাড়াও তিনি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতা সত্ত্বেও, তিনি শেষ সময় পর্যন্ত সক্রিয় থেকে সঙ্গীতের সাথে যুক্ত ছিলেন।

জেনি সিলিকে বিশ্বজুড়ে কান্ট্রি মিউজিকের একজন অনুপ্রেরণাদায়ী এবং বিপ্লবী শিল্পী হিসেবে মনে করা হত। তাঁর শিল্পকর্ম সীমা অতিক্রম করেছে এবং তিনি দেখিয়েছেন যে একজন মহিলা শিল্পীও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পথ নিজেই তৈরি করতে পারেন। তিনি 'মিস কান্ট্রি সোল' নামে পরিচিত ছিলেন, যা তাঁর গানের আন্তরিকতা এবং প্রভাবশালী শৈলীকে তুলে ধরে।

Leave a comment