ভারতে জনগণনা: ২০২৭ সালের প্রস্তুতি চূড়ান্ত, সময়সূচী প্রকাশ

ভারতে জনগণনা: ২০২৭ সালের প্রস্তুতি চূড়ান্ত, সময়সূচী প্রকাশ

ভারতে জনগণনার কাজ শীঘ্রই গতি পেতে চলেছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া, মৃত্যুঞ্জয় কুমার নারায়ণ জানিয়েছেন যে জনগণনার প্রথম পর্যায় ১ এপ্রিল, ২০২৬ থেকে শুরু হবে, যা হাউসলিস্টিং অপারেশন নামে পরিচিত।

নয়াদিল্লি: ভারতের বৃহত্তম প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, অর্থাৎ জনগণনা ২০২৭-এর প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া মৃত্যুঞ্জয় কুমার নারায়ণ সম্প্রতি রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের চিঠি লিখে স্পষ্ট করেছেন যে জনগণনার প্রথম পর্যায়ের সূচনা ১ এপ্রিল, ২০২৬ থেকে করা হবে। এই পর্যায়কে হাউসলিস্টিং অপারেশন বলা হয়, যেখানে দেশের প্রতিটি বাড়ির বিস্তারিত সমীক্ষা করা হবে।

জনগণনার কাজ দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে হাউসলিস্টিং অপারেশন হবে, যেখানে দ্বিতীয় অংশে জনসংখ্যা গণনা (Population Enumeration) প্রক্রিয়া চলবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৭ থেকে শুরু হওয়ার কথা, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিবরণ সংগ্রহ করা হবে।

হাউসলিস্টিং অপারেশন আসলে কী?

হাউসলিস্টিং অপারেশন মূলত জনগণনার ভিত্তি। এর মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি, কুঁড়েঘর, ফ্ল্যাট, অস্থায়ী আশ্রয়-সহ সব ধরনের বাড়ির গণনা করা হবে। এছাড়াও, সেই বাড়িতে কী কী সুবিধা রয়েছে, যেমন - জলের কল, শৌচাগার, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট, শৌচাগারের অবস্থা, বাড়ির দেওয়াল এবং ছাদ কিসের তৈরি, ইত্যাদিও নথিভুক্ত করা হবে।

এছাড়াও, বাড়ির মালিক কে, ভাড়াটিয়া থাকে নাকি খালি পড়ে আছে, সে সম্পর্কেও সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই ডেটার গুরুত্ব এই কারণে বৃদ্ধি পায় যে পরবর্তীতে যখন জনসংখ্যা গণনা হয়, তখন এই তথ্যগুলি গণনা কর্মীদের সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয় পর্যায় কবে হবে?

দ্বিতীয় পর্যায়, অর্থাৎ আসল জনগণনা ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৭ থেকে শুরু হবে, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত বিবরণ নেওয়া হবে। এতে ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, শিক্ষা, ধর্ম, জাতি, পেশা, বৈবাহিক অবস্থা-এর মতো তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। রেজিস্ট্রার জেনারেল রাজ্যগুলিকে বলেছেন যে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫-এর মধ্যে যদি তারা তাদের কোনও প্রশাসনিক এলাকার সীমানায় পরিবর্তন করতে চান, তবে করে নিতে পারেন। এরপর এই সীমানাগুলিকেই জনগণনার জন্য চূড়ান্ত ধরা হবে, যাতে কোনও ধরনের বিভ্রান্তি না হয়।

২০২৭ সালের জনগণনায় জাতি-ভিত্তিক তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। সরকারের ধারণা, এটি সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলিকে আরও উন্নত করতে সহায়ক হবে। শেষবার জাতিভিত্তিক জনগণনা ১৯৩১ সালে হয়েছিল, এরপর এই প্রথম এত বিস্তারিত জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

জনগণনা কেন জরুরি?

ভারতে জনগণনা প্রতি ১০ বছর অন্তর করা হয়। এটি সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে যে দেশের জনসংখ্যার আকার, বয়স কাঠামো, শিক্ষার স্তর, জীবনযাত্রার মান, কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি এবং মৌলিক সুযোগ-সুবিধার প্রাপ্যতা কেমন। এই তথ্যের ভিত্তিতে নীতি তৈরি হয়, বাজেট প্রস্তুত হয় এবং বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কোন এলাকায় কত স্কুল বা হাসপাতাল তৈরি করা উচিত, বিদ্যুৎ ও জলের মতো মৌলিক চাহিদার জন্য কত বিনিয়োগ করা উচিত - এই সমস্ত কিছুই জনগণনার ডেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।

২০২৭ সালের জনগণনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারও করা হবে। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ট্যাবলেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সময় বাঁচানো যায় এবং সঠিক তথ্য দ্রুত সংগ্রহ করা যায়। এবার ভাষা এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে একরূপতা আনতে গণনা কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।

Leave a comment