‘জুগণিমা – দ্য ফেবল’: এক আত্মিক অনুসন্ধানের কাব্যিক উপস্থাপন

‘জুগণিমা – দ্য ফেবল’: এক আত্মিক অনুসন্ধানের কাব্যিক উপস্থাপন

চলচ্চিত্র নির্মাতা রাম রেড्डी-এর ‘জুগণিমা – দ্য ফেবল’ এক ভিন্ন ধরনের সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা, যা দর্শকদের সাধারণ বিনোদন থেকে সরিয়ে এনে গভীরতায় নিয়ে যায়। চলচ্চিত্রের গতি ধীর, কিন্তু প্রতিটি দৃশ্য কাহিনিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।

  • চলচ্চিত্র পর্যালোচনা: জুগণিমা – দ্য ফেবল
  • তারকা রেটিং: ৩.৫/৫
  • মুক্তির তারিখ: ১২/০৯/২০২৫
  • পরিচালক: রাম রেড্ডি
  • ধরন: ফ্যান্টাসি ড্রামা

বিনোদন: মনোজ বাজপেয়ী, প্রিয়াঙ্কা বোস, হিরল সিন্ধু এবং দীপক ডোবরিয়াল-এর মতো সেরা অভিনেতাদের নিয়ে তৈরি ‘জুগণিমা – দ্য ফেবল’ এখন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। পরিচালক রাম রেড্ডি-এর এই চলচ্চিত্রটি মূলধারার বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রগুলি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং প্রকৃত চলচ্চিত্র প্রেমীদের জন্য একটি সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। 

এই চলচ্চিত্রটি কেবল কাহিনিই দেখায় না, বরং ভাবতেও বাধ্য করে। আপনি যদি সিনেমাকে একটি শিল্প হিসাবে দেখেন এবং কাহিনির পিছনে লুকিয়ে থাকা আবেগিক অর্থগুলি বুঝতে চান, তবে এই চলচ্চিত্রটি আপনার জন্য নির্মিত।

কাহিনি: হিমালয়ের কোলে জন্মানো আত্মার সন্ধান

চলচ্চিত্রের কাহিনি ১৯৮৯ সালে হিমালয়ের উপত্যকা থেকে শুরু হয়। দেব (মনোজ বাজপেয়ী) একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ, যিনি তাঁর দাদুর কাছ থেকে পাওয়া বাগানগুলির মালিক। তাঁর একটি সুন্দর বাড়ি, পরিবার – স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে – সবকিছুই আছে। কিন্তু যখন তাঁর বাগানের গাছগুলি কোনও কারণ ছাড়াই জ্বলতে শুরু করে, তখন তাঁর মন বিচলিত হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তাঁর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং তিনি সকলের উপর সন্দেহ করতে শুরু করেন। এই কাহিনি ধীরে ধীরে দেবের আত্মার অনুসন্ধানে রূপান্তরিত হয়।

দেব বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে এবং তাঁর অতীত, পরিবার ও শিকড়ের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নগুলির মুখোমুখি হয়। অবশেষে, তিনি নিজেকে বুঝতে পারেন এবং নিজের গ্রাম ও পরিবারের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। চলচ্চিত্রের শুরু এবং শেষ উভয়ই হিমালয়ের কোলে হয়, যা কাহিনিকে একটি প্রতীকী গভীরতা দেয় – যেমন মানুষের সংগ্রাম প্রকৃতি এবং আত্মার সাথে জড়িত।

প্রযুক্তিগত দিক: এক দৃশ্যমান কবিতা

‘জুগণিমা’-এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হল এর সিনেমাটিক ভাষা। রাম রেড্ডি ১৬মিমি ফিল্মের মতো করে চলচ্চিত্রটি শুট করে এটিকে একটি ডকুমেন্টারির অনুভূতি দিয়েছেন। চলচ্চিত্রের প্রতিটি ফ্রেম একটি সুন্দর ছবির মতো অনুভূত হয়। ক্যামেরা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সুনীল रामकृष्ण বোরকর। প্রতিটি দৃশ্য এত নিপুণভাবে চিত্রায়িত হয়েছে যে দর্শকরা দৃশ্যে হারিয়ে যান। একটি দৃশ্যে দেব নিজেকে জোনাকি দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় দেখতে পান – এই দৃশ্যটি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে আবেগিক মুহূর্ত।

চলচ্চিত্রে বাস্তব লোকেশন, স্থানীয় অভিনেতা এবং প্রাকৃতিক শব্দের চমৎকার ব্যবহার করা হয়েছে, যা কাহিনির বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে তোলে। চলচ্চিত্রটি ধীরগতির, তবে এর ছন্দ এতটাই স্বাভাবিক যে দর্শকদের কাহিনির মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। পরিচালক দর্শকদের উপর আস্থা রেখেছেন এবং সরাসরি কাহিনি বলেননি। পরিবর্তে, চলচ্চিত্রটি শেষে সবকিছু একসাথে জুড়ে দেয়, যা দর্শকদের নিজেদের ভাবতে বাধ্য করে যে আসলে কী ঘটেছে।

অভিনয়: চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়া অভিনয়

মনোজ বাজপেয়ী দেবের চরিত্রে তাঁর পরিচিত ইমেজ থেকে সরে এসে একজন সংবেদনশীল মানুষের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর চোখে উদ্বেগ, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা এবং ধীরে ধীরে আত্ম-উপলব্ধির প্রক্রিয়া এত সহজভাবে দেখানো হয়েছে যে আপনি দেবের সাথে চলতে শুরু করেন। প্রিয়াঙ্কা বোস, যিনি দেবের স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তাঁর আবেগ গভীর ভাবে প্রকাশ করেছেন। তাঁর ভয়, রাগ এবং অসহায়ত্ব খুব বাস্তব মনে হয়।

হিরল সিন্ধু ভান্যা চরিত্রে মুগ্ধ করেছেন। তাঁর নিষ্পাপতা এবং সংবেদনশীলতা চলচ্চিত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এটি তাঁর প্রথম বড় চলচ্চিত্র এবং এতে তাঁর অভিনয় খুব প্রভাবশালী ছিল। দীপক ডোবরিয়াল মোহন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি বাগানের তত্ত্বাবধায়ক। গাছপালাগুলির সাথে তাঁর আবেগিক সংযোগ দেখে আপনি তাঁর যন্ত্রণা অনুভব করেন। তিলোত্তমা শোমের সংলাপ প্রসব এবং অভিনয় চলচ্চিত্রটিকে আরও শক্তিশালী করেছে। স্থানীয় অভিনেতাদের উপস্থিতি চলচ্চিত্রটিকে আরও বাস্তবসম্মত করেছে।

কেন দেখবেন ‘জুগণিমা’?

‘জুগণিমা – দ্য ফেবল’ একটি সাধারণ বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নয়। এটি এমন একটি অভিজ্ঞতা যা ধৈর্য এবং সংবেদনশীলতা দাবি করে। এই চলচ্চিত্রটি সেই দর্শকদের জন্য যারা কাহিনিকে গভীরভাবে বোঝেন এবং অনুভব করেন। চলচ্চিত্রে ধীরগতির দৃশ্য রয়েছে, তবে প্রতিটি দৃশ্য একটি কবিতার মতো প্রভাব ফেলে।

Leave a comment