জুন 2025-এ দেশের পাইকারি মুদ্রাস্ফীতিতে (WPI) বড় পতন দেখা গেছে। সরকারের তরফে 14 জুলাই প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুনে পাইকারি মূল্য সূচক (WPI) মাত্র 0.13 শতাংশে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই হার অক্টোবর 2023-এর পর সর্বনিম্ন। মে 2025-এ এই হার ছিল 0.39 শতাংশ। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে মুদ্রাস্ফীতি 26 বেসিস পয়েন্ট কমেছে।
পেট্রোলিয়াম এবং ধাতুর দামে স্থিতিশীলতা
সরকারের বক্তব্য, এই পতনের প্রধান কারণ হল অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল এবং মৌলিক ধাতুর দামে স্থিতিশীলতা। দাম কমার ফলে উৎপাদন খরচ কমেছে, যার ফলে উৎপাদিত পণ্যের দামেও স্বস্তি মিলেছে।
শাকসবজি ও ডালে স্বস্তি
খাবার-দাবারের দামেও পতন রেকর্ড করা হয়েছে। জুনে সবজির মুদ্রাস্ফীতি কমে 22.65 শতাংশ হয়েছে, যদিও এটি এখনও উচ্চ স্তরে রয়েছে। পেঁয়াজের মুদ্রাস্ফীতি জুনে 33.49 শতাংশে পৌঁছেছে, যা মে মাসে ছিল 14.41 শতাংশ। একই সময়ে, আলুর দামে বড় পতন হয়েছে। জুনে আলু 32.67 শতাংশ সস্তা হয়েছে, যেখানে মে মাসে এই হার ছিল 29.42 শতাংশ। ডালের দামেও স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। জুনে ডালের মুদ্রাস্ফীতি ছিল 22.65 শতাংশ, যা মে মাসে ছিল 10.41 শতাংশ। শস্যের মুদ্রাস্ফীতি 3.75 শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা মে মাসে ছিল 2.56 শতাংশ।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের হারে বড় পতন
জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও স্বস্তি দেখা গেছে। জুনে এই বিভাগের মুদ্রাস্ফীতি ছিল 2.65 শতাংশ, যেখানে মে মাসে এটি ছিল 22.27 শতাংশ। অর্থাৎ পেট্রোল, ডিজেল এবং বিদ্যুতের দামে উল্লেখযোগ্য পতন হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় স্বস্তি এনেছে।
উৎপাদিত পণ্যের দামেও স্থিতিশীলতা
WPI-তে সবচেয়ে বড় অংশ থাকে ম্যানুফ্যাকচার্ড প্রোডাক্টের। এদের অবদান প্রায় 60 শতাংশ। জুনে এই পণ্যগুলির মুদ্রাস্ফীতি ছিল 1.97 শতাংশ, যা আগের মাসের তুলনায় সামান্য কম। এটি ইঙ্গিত দেয় যে উৎপাদন খাতে খরচ কমার কারণে পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা এসেছে।
প্রাথমিক পণ্যের দামে পতন
প্রাথমিক পণ্য যেমন তাজা ফল, সবজি, দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ ইত্যাদির দামেও জুনে পতন রেকর্ড করা হয়েছে। এই শ্রেণির মুদ্রাস্ফীতি জুনে ছিল 3.38 শতাংশ, যেখানে মে মাসে এটি ছিল 2.02 শতাংশ। এই পরিসংখ্যানগুলি দেখায় যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সস্তা হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) এপ্রিল মাসের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে অনুমান করা হয়েছিল যে আগামী মাসগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি কমতে পারে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দামে স্থিতিশীলতাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আরবিআই 2025-26 আর্থিক বছরের জন্য মুদ্রাস্ফীতির হার 4 শতাংশে রেখেছে, যা আগে 4.2 শতাংশ ছিল।
বাজারের উপর মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের প্রভাব
মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের প্রভাব শেয়ার বাজার এবং মুদ্রা বাজারেও দেখা গেছে। আশা করা হচ্ছে যে সুদের হার স্থিতিশীল হবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে। এর ফলে দেশীয় শেয়ার বাজারেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে এবং ডলারের বিপরীতে রুপিরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
সরকারের প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানগুলি দেখায় যে দামের ক্ষেত্রে স্বস্তি আসছে এবং আগামী মাসগুলোতেও এই ধারা বজায় থাকতে পারে, বিশেষ করে যদি খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রিত থাকে।