জিএসটি-র হার পুনর্বিন্যাসে অমিত শাহের উদ্যোগ, পরিবর্তনের পথে কর কাঠামো?

জিএসটি-র হার পুনর্বিন্যাসে অমিত শাহের উদ্যোগ, পরিবর্তনের পথে কর কাঠামো?

দেশে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার আলোচনা আবারও জোরদার হয়েছে। খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবার স্বয়ং জিএসটি পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করবেন। গত সপ্তাহে শাহ অর্থ মন্ত্রকের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

সূত্রের খবর, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল দেশজুড়ে বিতর্কিত ট্যাক্স স্ল্যাবগুলিকে সরলীকরণ করা এবং জিএসটি সিস্টেমকে আরও স্বচ্ছ ও সুসংহত করা।

১২ শতাংশের স্ল্যাব কি উঠে যাবে?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে ১২ শতাংশের জিএসটি স্ল্যাবটি তুলে দেওয়া নিয়ে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সরকার এই স্ল্যাবটি তুলে দিয়ে পণ্যগুলিকে ৫ শতাংশ অথবা ১৮ শতাংশের স্ল্যাবে ফেলার কথা ভাবছে। এই প্রস্তাব আগেও বেশ কয়েকবার এসেছিল, কিন্তু রাজ্যগুলির সম্মতির অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এবার কেন্দ্র সরকার এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য নতুন করে কৌশল তৈরি করছে। যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে বর্তমান ট্যাক্স সিস্টেমে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে।

রাজস্বের ক্ষতি কত হবে?

সূত্র মারফত জানা গেছে, যদি ১২ শতাংশের স্ল্যাবটি উঠে যায়, তাহলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির বছরে ৭০,০০০ কোটি টাকা থেকে ৮০,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে। এই কারণেই এই পরিবর্তন কার্যকর করার আগে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১২ শতাংশের স্ল্যাব থেকে মোট জিএসটি সংগ্রহের প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত আসে। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি রাজস্ব – প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ – আসে ১৮ শতাংশের স্ল্যাব থেকে।

বিমা ক্ষেত্রও বিতর্কের কেন্দ্রে

জিএসটি-র হার নিয়ে চলা এই বিতর্কে এবার বিমা ক্ষেত্রও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। দুটি বিরোধী শাসিত রাজ্য জীবন ও স্বাস্থ্য বিমা প্রিমিয়ামের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে। কিছু রাজ্য এমনকি এই কর সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়ারও দাবি করেছে, অর্থাৎ শূন্য করার কথা বলেছে।

ডিসেম্বর, ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত জিএসটি কাউন্সিলের ৫৫তম বৈঠকে এই বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল, কিন্তু সেই সময় তা মুলতুবি রাখা হয়। এখন যখন হারের পুনর্বিন্যাস নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন বিমা ক্ষেত্রের উপরও বড় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কতগুলি স্ল্যাব?

বর্তমানে দেশে পাঁচটি প্রধান জিএসটি স্ল্যাব কার্যকর রয়েছে – ০ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ। এছাড়াও, কিছু পণ্যের উপর সেসও (cess) ধার্য করা হয়, যা মূলত বিলাসবহুল এবং ক্ষতিকর পণ্যের উপর প্রযোজ্য।

সরকার জিএসটি চালু করার সময় এই ধারণা দিয়েছিল যে ধীরে ধীরে ট্যাক্স কাঠামো সহজ এবং সীমিত স্ল্যাব যুক্ত করা হবে। কিন্তু বিগত বছরগুলিতে রাজ্যগুলির দাবি, রাজস্বের চাপ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের জটিলতার কারণে এই কাজ সহজ হয়নি।

রাজ্যগুলির সম্মতি এখন চ্যালেঞ্জ

জিএসটি পরিষদের প্রতিটি বৈঠকে হার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে রাজ্যগুলির সম্মতির অভাবে এখন পর্যন্ত কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। সূত্রের খবর, এবার অমিত শাহের নেতৃত্বে এই চেষ্টা করা হবে যাতে সব রাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে একটি চূড়ান্ত পরিবর্তনের দিকে পদক্ষেপ করা যায়।

একজন শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক বলেছেন, "রাজ্যগুলির সম্মতি ছাড়া কোনো হারের পরিবর্তন কার্যকর করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে, যখন সেই সিদ্ধান্তের কারণে রাজস্বের উপর সরাসরি প্রভাব পড়ে।"

কী পরিবর্তন সম্ভব?

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ১২ শতাংশের স্ল্যাবটি উঠে যায়, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের উপর কর বাড়তে পারে। অন্যদিকে, কিছু পণ্য ৫ শতাংশ ট্যাক্সের আওতায় এসে সস্তা হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে কোন পণ্য কোন শ্রেণীতে ফেলা হচ্ছে তার উপর।

এছাড়াও স্বাস্থ্যবিমা, শিক্ষা পরিষেবা, বাড়ি ভাড়া-র মতো ক্ষেত্রগুলিতেও করের হারে পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। জিএসটি পরিষদকে এখন একটি ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হারের কাঠামোকে সুষম করতে হবে।

এই সম্পূর্ণ পরিবর্তন কার্যকর করার আগে একাধিক জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক করতে হবে। এছাড়াও, রাজ্যগুলির অনুমোদনও নিতে হবে। প্রক্রিয়াটি জটিল, তবে সূত্রের খবর, এবার কেন্দ্র হারের পুনর্বিন্যাস নিয়ে গুরুতরভাবে কাজ করছে।

অমিত শাহের হস্তক্ষেপকে জিএসটি সিস্টেমের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদি রাজ্যগুলির সঙ্গে সম্মতি তৈরি হয়, তবে জিএসটি-র কাঠামো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হতে পারে।

Leave a comment