ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫-এ কাচ্চাটিভু দ্বীপ নিয়ে একটি বড় মন্তব্য করেছে। শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী বিজেতা হেরাথ স্পষ্ট করেছেন যে, তাদের দেশের কাচ্চাটিভু দ্বীপ ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই।
কাচ্চাটিভু দ্বীপ নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান: শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী বিজেতা হেরাথ শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছেন। কাচ্চাটিভু দ্বীপের উপর শ্রীলঙ্কার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, শ্রীলঙ্কা কোনো অবস্থাতেই এই দ্বীপ ছাড়তে রাজি হবে না। সিরাসা টিভি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হেরাথ বলেন, কাচ্চাটিভুর উপর আমাদের অধিকার অটল। এটি সমাধানের জন্য কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা আছে, তবে শ্রীলঙ্কা কখনোই এই দ্বীপ ছাড়তে রাজি হবে না।
এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন সম্প্রতি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শংকর কাচ্চাটিভু ইস্যুকে ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় হওয়া একটি চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বলেছিলেন।
কাচ্চাটিভু বিতর্ক কী?
কাচ্চাটিভু একটি ছোট, জনশূন্য দ্বীপ, যা ভারতের তামিলনাড়ু এবং শ্রীলঙ্কার জাফনা উপকূলের মধ্যে অবস্থিত। ঐতিহাসিক ভাবে এই দ্বীপে তামিল মৎস্যজীবীরা পূজা-অর্চনা ও মাছ ধরতে যেতেন। ১৯৭৪ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে হওয়া একটি চুক্তিতে ভারত কাচ্চাটিভু দ্বীপের অধিকার শ্রীলঙ্কাকে অর্পণ করে, তবে মৎস্যজীবীদের সেখানে পূজা ও জলজ সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবী এবং অনেক রাজনৈতিক দল এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন এবং এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যেও এই ইস্যুতে লাগাতার রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ চলছে।
ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গ্রেপ্তারির উপর শ্রীলঙ্কার জবাব
বিদেশমন্ত্রী হেরাথ ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গ্রেপ্তারির বিষয়ে বলেন যে, ভারতীয় মৎস্যজীবীরা প্রায়শই শ্রীলঙ্কার সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে এবং সেখানে অবৈধভাবে মাছ ধরে। তিনি অভিযোগ করেন যে, ভারতীয় মৎস্যজীবীরা সমুদ্র সম্পদ এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদেরও ক্ষতি করে। হেরাথ বলেন, আমরা জানি যে ভারত সরকারও অবৈধ মাছ ধরার বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের জলসীমায় অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করা হবে না।
উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীরা অনেক সময় অজান্তে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করে, যার কারণে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করে। এর ফলে উভয় দেশের মধ্যে সময়ে সময়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
ভারতের অবস্থান: ১৯৭৫ সালের চুক্তি জটিলতার কারণ
২৭ জুন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শংকর সংসদে বলেছিলেন যে, ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় ভারত একতরফাভাবে কাচ্চাটিভু অর্পণ করতে রাজি হয়েছিল, যার কারণে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের অধিকার সীমিত হয়েছে। তাঁর বক্তব্য ছিল, সরকার এই বিষয় নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে লাগাতার কথা বলছে, যাতে মৎস্যজীবীদের সমস্যা কমানো যায়।
কাচ্চাটিভুর ইস্যু তামিলনাড়ুর রাজনীতিতেও উত্তপ্ত। সেখানকার অনেক দলের অভিযোগ, ১৯৭৪ সালে হওয়া চুক্তিতে রাজ্যের মৎস্যজীবীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছিল।
রাজনীতি বনাম কূটনীতি
বিদেশমন্ত্রী বিজেতা হেরাথ তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেছেন যে, কাচ্চাটিভু নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা ভারতের অভ্যন্তরে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যেকার রাজনৈতিক বিষয় বলেই মনে হয়। তিনি বলেন, আমাদের জন্য এটি একটি কূটনৈতিক বিষয়, কিন্তু ভারতে এটি রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেরাথের এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে শ্রীলঙ্কা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ সম্পর্কে সতর্ক এবং আপাতত কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার মুডে নেই।
শ্রীলঙ্কার এই অবস্থান ভারতের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীদের উদ্বেগ ক্রমাগত সামনে আসছে, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা তাদের দাবি থেকে সরতে রাজি নয়। এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক স্তরে ভারতকে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হতে পারে।