রাশিয়ার কামচাটকায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা জারি। এর প্রভাব জাপান থেকে ভারত পর্যন্ত পড়তে পারে। বাবা ভেঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হতে চলেছে।
ভূমিকম্প: রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে সম্প্রতি ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই শক্তিশালী ভূমিকম্প কেবল রাশিয়া নয়, আমেরিকা, জাপান এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুনামির সতর্কতা জারি করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত আরও একটি বিষয় যা আরও বেশি আশ্চর্যের, তা হল বুলগেরিয়ার ভবিষ্যৎদ্রষ্টা বাবা ভেঙ্গার কয়েক দশক আগের ভবিষ্যদ্বাণী, যেখানে তিনি ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে মহাপ্রলয় এবং ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের কথা বলেছিলেন। এটা কি শুধুই কাকতালীয়, নাকি সত্যিই আমরা কোনও বড় পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি?
রাশিয়ায় কোথায় এবং কতটা বড় ছিল এই ভূমিকম্প?
রাশিয়ার দূরবর্তী এলাকা কামচাটকা উপদ্বীপে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পটি হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ৮.৮ মাপা হয়েছে, যা এটিকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তুলেছে। এই অঞ্চলে আমেরিকা ও রাশিয়ার অনেক পরমাণু ঘাঁটি রয়েছে, যা বিপদের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমেরিকার আলাস্কা এবং জাপানের উপকূল পর্যন্ত সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জাপান ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে খালি করে দিয়েছে।
ভারতের উপরও কি প্রভাব পড়বে?
ভারত ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে দূরে থাকলেও, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এর প্রভাব পড়তে পারে। একদিন আগেই এই অঞ্চলে হালকা ভূমিকম্প হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে প্লেটের মধ্যে কার্যকলাপ বেড়েছে। ভারতেরও এখন এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, বিশেষ করে পূর্ব সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে।
বাবা ভেঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী কি সত্যি হচ্ছে?
বাবা ভেঙ্গা, যাঁকে প্রায়শই 'বালকানের নস্ট্রাদামুস' বলা হয়, তিনি অনেক ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে ২০২৫ এবং ২০২৬ সালের মধ্যে পৃথিবী খারাপভাবে কাঁপবে, যার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। এই ভূমিকম্প এবং এর পরে ওঠা সুনামির ঢেউ কোথাও না কোথাও তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তিনি বিশেষভাবে ইউরোপ ও এশিয়ায় ধ্বংসের সতর্কতা জারি করেছিলেন।
ভূমিকম্প আসলে কেন হয়? বিজ্ঞান কী বলে
পৃথিবীর পৃষ্ঠ টেকটোনিক প্লেট দিয়ে গঠিত, যা ক্রমাগত নড়াচড়া করে। যখন এই প্লেটগুলো একে অপরের সাথে ধাক্কা লাগে বা একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়, তখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে চাপের সৃষ্টি হয়। যখন এই চাপ একটি সীমা অতিক্রম করে, তখন সেই শক্তি ভূমিকম্প রূপে বাইরে বেরিয়ে আসে।
ভূমিকম্পে তিন ধরনের তরঙ্গ দেখা যায়:
- P তরঙ্গ: সবচেয়ে দ্রুতগতির এবং কম্পন অনুভূত করায়
- S তরঙ্গ: ধীর গতির এবং ঢেউয়ের মতো কম্পন সৃষ্টি করে
- Surface তরঙ্গ: সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক, এটি পৃষ্ঠকে নাড়িয়ে দেয়
সুনামির আশঙ্কা কি সত্যিই আছে?
সমুদ্রের নিচে বড় ভূমিকম্প প্রায়শই সুনামির কারণ হয়। যখন সমুদ্রের পৃষ্ঠের নিচে টেকটোনিক প্লেটগুলি দ্রুত সরে যায়, তখন তারা সমুদ্রের বিশাল পরিমাণ জলকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়, যার ফলে বিশাল ঢেউ তৈরি হয়। ২০১১ সালের জাপান ভূমিকম্পের সময় ঠিক এটাই হয়েছিল, যা ফুকুশিমায় পরমাণু বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। যদি এবারও এমনটা ঘটে, তবে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলিকে সতর্ক রাখা উচিত।
ভবিষ্যতে আমরা কী করতে পারি?
ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, তবে তথ্য, প্রস্তুতি এবং সতর্কতা দিয়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো যায়। ভারত-এর মতো দেশের উচিত:
- সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা
- উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে ভূমিকম্প নিরাপত্তা বিষয়ক মহড়া নিয়মিত করা
- সাধারণ মানুষকে ভূমিকম্পের পরিস্থিতিতে বাঁচার উপায় শেখানো