কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে জল্পনা, কংগ্রেসের অন্দরে বাড়ছে চাপানউতোর

কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে জল্পনা, কংগ্রেসের অন্দরে বাড়ছে চাপানউতোর

কর্ণটকে কংগ্রেস বিধায়ক এইচ এ ইকবাল হোসেনের একটি বিবৃতিতে রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। হোসেন দাবি করেছেন যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হবে।

নয়াদিল্লি: কর্ণটকে কংগ্রেস সরকার গঠনের এক বছর পেরোতেই নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আবার জোরদার হয়েছে। এবার এই আলোচনার সূত্রপাত করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক এইচ এ ইকবাল হোসেন। তিনি দাবি করেছেন যে উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেন।

ইকবাল হোসেন, যিনি ডি কে শিবকুমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, স্পষ্ট করে বলেছেন যে দলের হাইকমান্ড খুব শীঘ্রই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হতে পারে। তাঁর এই মন্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া শিবিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, কারণ গত কয়েক মাস ধরে দলে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে।

শিবকুমারের কৌশলকে ঐতিহাসিক আখ্যা

ইকবাল হোসেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, কর্ণাটকে কংগ্রেসের ফিরে আসার পেছনে কার সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বলেন, ডি কে শিবকুমার যেভাবে কঠোর পরিশ্রম ও কৌশল দিয়ে দলকে ক্ষমতায় এনেছেন, তা ইতিহাসে লেখা থাকবে। হোসেন আরও বলেন, সবাই জানে শিবকুমার না থাকলে কংগ্রেসের কী অবস্থা হত, এবং হাইকমান্ডও এটা ভালো করেই জানে।

ইকবাল হোসেনের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন দলটিতে সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমার শিবিরের মধ্যে ক্রমাগত উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার ছেলে এবং কংগ্রেস এমএলসি, যাতীন্দ্র এই সমস্ত জল্পনা সম্পূর্ণভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন। যাতীন্দ্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না এবং দল সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ। যাতীন্দ্র আরও বলেন, এই ধরনের মন্তব্য জনসাধারণের মধ্যে ভুল বার্তা দেবে এবং দলের ক্ষতি করবে।

তবে ইকবাল হোসেন যাতীন্দ্রের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, দিল্লিতে আগেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতেও তাই হবে। সময় হলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ফাটল

গত বছর কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছিল। তখন হাইকমান্ড কঠোর মনোভাব নিয়ে সিদ্দারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী এবং ডি কে শিবকুমারকে উপমুখ্যমন্ত্রী করে সমঝোতা করিয়েছিল। কিন্তু এই সমঝোতা সত্ত্বেও দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে বারংবার বাগ্‌যুদ্ধ দেখা গেছে। সম্প্রতি সমবায় মন্ত্রী কে এন রাজন্নাও ডি কে শিবকুমারের পক্ষে কথা বলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এবার ইকবাল হোসেনের এই মন্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে।

ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রণদীপ সুরজেওয়ালা ময়দানে

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কংগ্রেস হাইকমান্ড এবার রণদীপ সুরজেওয়ালাকে কর্ণাটকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রণদীপ সুরজেওয়ালা আগামী দু'দিন বেঙ্গালুরুতে থেকে দলের অসন্তুষ্ট বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং পুরো পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে হাইকমান্ডকে রিপোর্ট দেবেন। দলীয় সূত্রে খবর, রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন এবং কোনো প্রকার অভ্যন্তরীণ কলহ প্রকাশ্যে আসতে দিতে চাইছেন না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইকবাল হোসেনের এই মন্তব্য এমনি আসেনি, এর পিছনে শিবকুমার শিবিরের একটি বার্তা থাকতে পারে। আসলে, শিবকুমারের সমর্থকেরা ক্রমাগত এই পরিবেশ তৈরি করছেন যে এখন ক্ষমতায় তাঁদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো হোক। অন্যদিকে, সিদ্দারামাইয়া শিবিরের লোকজন এটিকে তাঁদের ক্ষমতাকে অস্থির করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। যদি দলীয় হাইকমান্ড সময় থাকতে এই বিতর্ক সামাল দিতে না পারে, তবে এর প্রভাব ২০২৬ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও পড়তে পারে।

রণদীপ সুরজেওয়ালার সফর

এখন সবার নজর রণদীপ সুরজেওয়ালার দিকে, যিনি সোমবার থেকে দুদিনের জন্য কর্ণাটকে থাকবেন এবং পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা করবেন। সুরজেওয়ালার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ তাঁর সাংগঠনিক ক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং উভয় গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা রয়েছে। সবমিলিয়ে, কর্ণাটক কংগ্রেসে আবারও রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোয় এটা স্পষ্ট হবে যে সত্যিই নেতৃত্ব পরিবর্তন হবে, নাকি সিদ্দারামাইয়া-শিবকুমারের মধ্যে হওয়া পুরনো সমঝোতার ভিত্তিতেই দল চলবে।

Leave a comment