কর্নাটকের বিজাপুর জেলায় এসবিআই ব্যাংকে সেনার পোশাকে আসা তিন দুষ্কৃতী বন্দুকের মুখে ২১ কোটি টাকার সোনা ও নগদ টাকা লুট করে চম্পট দিয়েছে। ব্যাংক কর্মচারী ও গ্রাহকদের পণবন্দী করা হয়েছিল।
বিজাপুর: কর্নাটকের বিজাপুর জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা ঘটেছে, যখন স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) শাখায় একটি লুটের ঘটনা সামনে এসেছে। তিনজন অপরাধী ব্যাংকে প্রবেশ করে ভল্ট ও লকার সহ নগদ টাকা ও সোনা লুট করে পালিয়ে যায়। লুটেরারা সেনার উর্দি পরে এসেছিল এবং তাদের মুখ ঢাকা থাকায় পুলিশ এখনও তাদের শনাক্ত করতে পারেনি। এই ঘটনা পুরো অঞ্চলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
সেনার উর্দি পরে ব্যাংক লুটের ঘটনা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিন অপরাধী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার অজুহাতে প্রবেশ করে। তারা সেনার উর্দি পরেছিল, যার কারণে ব্যাংক কর্মচারী ও গ্রাহকরা তাদের বাধা দিতে পারেনি। লুটেরাদের কাছে দেশী পিস্তল ও ছুরি ছিল। তারা ব্যাংক কর্মীদের ভয় দেখিয়ে ক্যাশিয়ার, ম্যানেজার ও অন্য কর্মীদের পণবন্দী করে। কর্মীদের টয়লেটে আটকে রাখা হয় এবং তাদের হাত-পা প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়।
লুটের এই চতুর পরিকল্পনা নিশ্চিত করেছিল যে কর্মীরা ও গ্রাহকরা কোনও প্রতিরোধ করতে পারবে না। লুটেরারা কর্মীদের হুমকি দিয়ে বলেছিল যে তারা বাধা দিলে তাদের হত্যা করা হবে। এভাবে ব্যাংক থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার সোনা ও ১ কোটি টাকার বেশি নগদ টাকা লুট করা হয়।
লুটেরারা লকার ও ভল্ট খুলিয়েছিল
লুটেরারা শাখা ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ভল্ট ও লকার খুলিয়েছিল। তারা ব্যাগে নগদ টাকা ও গ্রাহকদের সোনার গয়না ভরে নেয়। অপরাধীরা এত দ্রুত কাজ করেছিল যে ব্যাংকে উপস্থিত কেউ তাদের মুখোমুখি হতে পারেনি। ঘটনাটি প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, লুটেরারা নকল নম্বর প্লেট লাগানো একটি ভ্যান এবং দুটি বাইক ব্যবহার করে পালিয়ে যায়। প্রতিবেশী রাজ্য মহারাষ্ট্রে যাওয়ার পথে তাদের একটি গাড়ির দুর্ঘটনা হয়। তা সত্ত্বেও, অপরাধীরা লুট করা মাল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে
বিজাপুর পুলিশ সুপার লক্ষণ নিম্বার্গী জানিয়েছেন যে ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অভিযুক্তদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারের জন্য ৮টি দল গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, লুটপাটে ব্যবহৃত গাড়িগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির পুলিশের সাথে যৌথ তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
পুলিশ জনসাধারণকে ব্যাংক ও আশেপাশের এলাকায় সন্দেহজনক কার্যকলাপের উপর নজর রাখতে আবেদন জানিয়েছে। এছাড়াও বলা হয়েছে যে এই লুট একটি অত্যন্ত সংগঠিত ও পরিকল্পিত ঘটনা ছিল, যা থেকে স্পষ্ট যে অপরাধীরা পেশাদার ছিল।
ব্যাংক লুট কাণ্ডে এলাকায় চাঞ্চল্য
এই হাই-প্রোফাইল লুটের পর বিজাপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ব্যাংক কর্মী ও গ্রাহকরা ভয়ে আছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, পুলিশ সকল ব্যাংক শাখাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পরিকল্পিত ও সংগঠিত লুট পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে শীঘ্রই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য একটি ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে। এই লুট कांड স্পষ্ট করে দিয়েছে যে অপরাধীরা উচ্চ স্তরের পরিকল্পনা করেছিল এবং কোনও প্রকার বাধা ছাড়াই কোটি কোটি টাকার মাল লুট করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।